দেশের রপ্তানিখাতে নতুন মাত্রা যোগ করছে প্লাস্টিকের খেলনাসামগ্রী। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে দেশ থেকে মোট প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির ২৯ শতাংশ এসেছে খেলনা থেকে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের রপ্তানিখাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে প্লাস্টিকের খেলনা।
সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে প্লাস্টিকের খেলনাশিল্প: রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণে এক সম্ভাবনাময় খাত’ শীর্ষক সেমিনারে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, ‘চলতি ২০২১-২২ অর্থ বছরের জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে দেশ থেকে মোট প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির ২৯ শতাংশ আয়ই খেলনা থেকে এসেছে। এই সময়ে খেলনা রপ্তানিতে গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ শতাংশ। বাংলাদেশের প্লাস্টিক রপ্তানি মোটামুটি ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির মধ্যে রয়েছে। করোনার মধ্যে গত ২০২০-২১ অর্থবছরেও প্লাস্টিক খাতের রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ শতাংশ।’
ইপিবির তথ্য মতে, গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে খেলনা রপ্তানিতে বাংলাদেশের আয় ছিল মাত্র ১ কোটি ৫২ লাখ ডলার। আর চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই–এপ্রিল) খেলনা রপ্তানিতে ৩ কোটি ৭১ লাখ ডলার আয় হয়েছে, অর্থাৎ গত ছয় বছরে বিশ্ববাজারে খেলনা রপ্তানিতে বাংলাদেশের আয় বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ।
বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ ৩১ দশমিক ৭৬ শতাংশ প্লাস্টিকের খেলনা রপ্তানি হয় স্পেনে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইতালি ও ফ্রান্স। এই দুই দেশে খেলনা রপ্তানির হিসাব হচ্ছে যথাক্রমে ১৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ ও ১৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। বিল্ডের হিসাব অনুযায়ী প্লাস্টিকের খেলনা রপ্তানিতে ১৬ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধি ধরে ২০৩০ সালে বাংলাদেশ তৈরি খেলনার রপ্তানি বাজার ১৫ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে।
সেমিনারে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, রপ্তানিমুখি খাত হলেও প্লাস্টিক শিল্পকে উচ্চ হারে করপোরেট কর দিতে হয়। এটা আগামী বাজেটে কমানো প্রয়োজন। সম্ভাবনাময় এ খাত আরও একটু সহযোগিতা পেলে দ্রুত এগিয়ে যাবে। প্লাস্টিক খাতের উপখাত খেলনায়ও বাংলাদেশ বেশ ভালো করছে। দেশে খেলনার ব্যবহার বেড়েছে। এখন প্রায় আমদানি করতে হয় না। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত খেলনা রপ্তানিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ছিল। করোনাকালে রপ্তানির গতি একটু কমলেও এবার আবার ভালো করছে।
তিনি বলেন, প্রতি বছর গড়ে ২৪ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি থাকায় ২০৩০ সাল নাগাদ প্লাস্টিকের খেলনা রপ্তানি ৪৬ কোটি ডলার ছাড়াতে পারে। ২৮তম বৃহত্তম খেলনা রপ্তানিকারক হতে পারে বাংলাদেশ। তবে এজন্য পণ্যের বহুমুখিকরণ ও মান বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন বাজারে রপ্তানির চেষ্টা করতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, প্লাস্টিক খেলনা শিল্প দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকার থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, কমপ্লায়েন্স ইস্যু না মানলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সমস্যা হয়। এ বিষয়ে সংশ্নিষ্ট সবাইকে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
অপ্রচলিত রপ্তানিপণ্য হিসেবে প্লাস্টিক খেলনা সামগ্রী অনেকদূর যেতে পারে। এজন্য প্লাস্টিক শিল্পনগরী স্থাপন করা, কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কমানো, তৈরি খেলনা আমদানিতে শুল্ক বাড়ানোসহ সরকারের নীতি সহায়তা দরকার। পাশাপাশি কমপ্লায়েন্ট কারখানা স্থাপনে উদ্যোক্তাদের মনোযোগী হতে হবে।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ), বিশ্বব্যাংকের প্রজেক্ট ইসিফোরজে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে সেমিনারটির আয়োজন করা হয়।
ডেস্ক রিপোর্ট,
উদ্যোক্তা বার্তা