রংতুলির ছোঁয়া, সঙ্গে নিজ মনের ভাবনাগুলো মিশিয়ে নিজ ঘরকে রাঙানোর ইচ্ছা ছিল ব্যাপক। কিন্তু মা রাজি ছিল না, তাই একটি দোকান ভাড়া নিয়ে শুরু করতে হয়েছিল স্বপ্নের উদ্যোগ। বলছিলাম রাজশাহীর ভাটাপাড়া এলাকার মোঃ আব্দুল গাফ্ফার এবং মোসাঃ নূরুন নেসা বেগমের পুত্র মোঃ আবুল বাশারের সাফল্যের পেছনের গল্প।মাধ্যমিক দিয়েছেন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে, উচ্চ মাধ্যমিক রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ থেকে।
সময় আসলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। পরিবার আত্মীয়-স্বজন সকলেরই চাওয়া ছেলে ডাক্তার বা ইন্জিনিয়ার হবে। কিন্তু ছেলের ইচ্ছে সে চারুকলাতে পড়াশোনা করবে। রংতুলির রাজ্যে বিচরণ করবে। ছেলের এই ইচ্ছেকে কেউ মেনে নিচ্ছিল না। সে সময় আবুল বাশারের দাদা এবং এক মামা পরিবারের সকলকে বোঝালেন। এরপর আবুল বাশার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ভর্তি হয়ে সেখান থেকে পড়াশোনা শেষ করেন।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2021/05/bass.jpg)
উদ্যোক্তা বার্তাকে আবুল বাশার বলেন, ‘মা যখন ঘর রাঙাতে দিতে রাজি হননি তখন ছোট একটা দোকান ভাড়া নিয়েছিলাম এবং বেশ কয়েক দিন ধরে দোকানের শাটার নামিয়ে দোকানের দেয়ালগুলোকেই প্রথম রাঙিয়েছিলাম। পরবর্তীতে যখন সকলে দেয়ালে পেইন্টিং দেখছিল, অবাক হচ্ছিল, প্রশংসা করছিল কাজের। এভাবে ২৩ জনের থেকে নতুন কাজের ফরমায়েশ পেয়েছিলাম। কিন্তু তাঁরা কেউই শুরুতে আমার এই কাজের পক্ষে ছিল না। তাই আমি রাজি হইনি কাজগুলো করতে।
হাতে আঁকা নকশার প্রতি ছোটবেলা থেকেই আমার দুর্বলতা ছিল। হাতে আঁকা নকশা চোখে পড়লেই অপলক তাকিয়ে দেখতাম আর ভাবতাম যদি আমি এমনটি করতে পারতাম। সেই ভালো লাগার কাজের সাথে আজ ১২ টি বছর ধরে যুক্ত আবুল বাশার। একটা সময় যারা রঙ মিস্ত্রি কথাটি বিদ্রুপের ছলে বলত আজ তারা সম্মান করে আবুল বাশারকে রঙ মিস্ত্রি ডাকে।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2021/05/basharr.jpg)
আবুল বাশার বলেন, ‘বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ আমায় রঙ মিস্ত্রি নামেই চেনে। এতে আমি বেশ আনন্দিত। ১২ বছর আগে বিনা পুঁজিতে একা কাজ শুরু করলেও আজ আবুল বাশার ১০ জন সহযোদ্ধা পেয়েছেন যারা আবুল বাশারের কাজে সহযোগিতা করেন। নিজের পাশাপাশি দশজনকে স্বাবলম্বী করেছেন আবুল বাশার। বিফাইন নামে একটি সংগঠন গড়েছেন রঙ মিস্ত্রি খ্যাত আবুল বাশার।
তিনি বলেন, ‘এটি আমার পার্ট টাইমের উদ্যোগ নয়। এটির পেছনে আমি পুরো সময় দিয়ে যাচ্ছি আর ভবিষ্যতেও দেব। দশের সাথে আরো বহু-বহু সহযোদ্ধাকে স্বাবলম্বী করতে পারব এটি আমার লক্ষ্য।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2021/05/bashaha.jpg)
রাজশাহী শহরের সবচেয়ে বড় দেয়াল চিত্র এঁকেছেন আবুল বাশার। নগরীর উপশহর এলাকায় ১১ ফুট উঁচু ও ৫৯ ফুট দীর্ঘ দেয়াল টানা ১০ দিন ধরে এঁকেছেন। তিনি বলেন, ‘রাজশাহী এক সময় ক্যানভাসের নগরী বলে পরিচিতি পাবে এটা আমার চাওয়া’।
শিল্পকলা শুধু শখের ব্যাপার নয়, শিল্পে সবার সমান অধিকার ‘দেয়াল এঁকে’ এটিই সকলকে বলতে চাইছেন তিনি। সারা পৃথিবীতে স্ট্রিট পেইন্টিং এখন ব্যাপক জনপ্রিয়। এর মাধ্যমে নিজের কথা, গাছের কথা, মাছের কথা ইত্যাদি সহজে ফুটিয়ে তোলা যায়।
সারাদেশে ৩৮০ টিরও বেশি দেয়াল পেইন্টিং করেছেন তিনি। এর মধ্যে ২০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়াল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের রাস্তায়, রেস্তোরাঁয় তার আঁকা শিল্পকর্মের দেখা মেলে এখন।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2021/05/bbbb.jpg)
তিনি বলেন, ‘আমার আঁকা পাখির কিচিরমিচির, লোভনীয় পিৎজা, ভিনসেণ্ট ভ্যান গঘের চিত্রকর্ম বা দুরন্ত ছুটে চলা যানবাহনের চিত্র দেখে পথ চলতে চলতে কোন ক্লান্ত পথিক দাড়িয়ে যদি মনে মনে বাহবা দেয় তবেই আমার স্বার্থকতা। ভবিষ্যতে একটি পুরো নগরকে, নগরের প্রতিটি দেয়াল, রাস্তা, তার রং-তুলি আচরে রাঙাতে চান এটিই তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা’।
তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘কোন কাজই ছোট নয় আপনারা যে কাজ করতে চান তাকে ছোট না ভেবে সর্বোচ্চ উপরে ভেবে সৎভাবে এগিয়ে যান, নিশ্চয়ই জয়ী হবেন’।
তামান্না ইমাম
রাজশাহী ডেস্ক, উদ্যোক্তা বার্তা