মায়ের দেয়া ১৫’শ টাকা এবং একটি ব্লেন্ডার ছিল মাইশা’র প্রথম পুঁজি

0
উদ্যোক্তা আতিকা বিনতে রফিক মাইশা

“এইচ এস সি’র পর যখন ভার্সিটি ভর্তির জন্য মফস্বল থেকে বড় শহর চট্টগ্রাম এ গেলাম মা বাবার অনেক কষ্ট হতো ২ বোনের পড়াশোনার খরচ চালাতে। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম, নিজে কিছু করতেই হবে। বাবা মা কে প্রেশার দিতে চাইনি। আমি কখনোই চাইনি আমার বাবা-মা ছেলে সন্তানের অভাব বোধ করুক” – এমনটাই বলছিলেন মাইশা।

আতিকা বিনতে রফিক মাইশা, জন্ম ফেনীতে এবং সেখানেই উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।
২০২০ সালে করোনাকালিন সময়ে লকডাউনে যেখানে সারাদেশের মানুষ অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয় পাচ্ছিলো ঠিক তখন অবসরকে কাজে লাগায় মাইশা। তিনি হার্বালিজম নিয়ে একটা ডিপ্লোমা কোর্স করেন এবং খুব ছোট পরিসরে বাসার ছাদে বসে কাজ শুরু করেন।

মা’র কাছ থেকে নেয়া ১৫০০ টাকা আর বাসার ছোট্ট ব্লেন্ডারই ছিল একমাত্র পুঁজি। কিন্তু সেই ১৫০০ টাকা জীবনের সব চেয়ে বড় এ্যাসেট হয়ে গেলো মাইশার জীবনে। হারবাল পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। বাসার ছাদ ছিলো মাইশার কর্মস্থান।

হারবাল পণ্য নিয়ে কাজ করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ গুলোতে প্রাকৃতিক সম্পদ এর অনেক কদর। তারা বিভিন্ন চিকিৎসায় প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করতে আগ্রহী। অথচ আমাদের দেশ তুলনামূলক প্রকৃতির গুনে আর সম্পদে একটি ক্ষণি হলেও আমরা ক্যামিক্যাল এর দিকেই ঝুঁকছি বেশি। এই বিষয় টা আমি বদলাতে চেয়েছি। আমি মূলত দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ কে কাজে লাগাতে চাই। আর এই জন্য আমি হার্বাল নানান পন্য নিয়ে কাজ করছি।’

হার্বালিস্ট মাইশা তার উদ্যোগের নাম দিয়েছেন “হামানদিস্তা”। প্রাচীন কালে এমনকি এখনো গ্রামে দেখা যায় এক ধরনের বস্তু যা দিয়ে হাত দিয়ে মসলা পেশানোর কাজ করে নারীরা। সেই বস্তুর নাম হলো হামানদিস্তা। যেহেতু মাইশা হার্বাল পাউডার ভার্সন পণ্য নিয়ে কাজ করেন তাই তিনি এই হামানদিস্তা নামটিকেই বেছে নিয়েছেন তার প্রতিষ্ঠানের জন্য।

মাইশার হারবাল পণ্যের মধ্যে রয়েছে রুপচর্চার পন্য, উপটান, চুলের তেল, আবার শরীর চর্চার জন্য নিম ও হলুদের নানান বড়ি। ডায়াবেটিস থায়রয়েড এর মত জটিল সমস্যার সমাধানে রয়েছে আরো বেশ কিছু পণ্য।

বর্তমানে কারখানা ও ৩ টি শো রুম সহ মাইশা’র প্রায় ৩০ জন কর্মী রয়েছে। দেশের প্রায় ৬৪ জেলায় তার নিয়মিত ক্রেতা রয়েছে।

বর্তমানে আমি মাসে হাজার পিস এর উপরে পণ্য সরবরাহ করছেন যা একটি পরিবার এবং তার কর্মীদের পরিবার এর আর্থিক চাহিদা মেটার জন্য যা যথেষ্ট বলে তিনি মনে করেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘অন্য দেশের কথা যেমন আমরা বলি, আমি চাই বাইরের দেশের মানুষ যেনো একদিন আমার এই পন্য নিয়ে বলতে পারে বাংলাদেশের হার্বাল পন্য, মেইড ইন বাংলাদেশ। আমি আমার দেশ কে আমার ব্যবসায়ের মাধ্যমে গ্লোবালি পরিচয় করাতে চাই। দেশের সম্পদ কে গ্লোবালি পরিচয় করাতে চাই।’

তরুণ এবং নবীন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘একটি অনেক ভালো দিন এর জন্য অনেক গুলো খারাপ দিন পার করতে হয় মুখ বুঝে। থেমে যাওয়া যাবেনা। একদিন সফলতা আসবেই।’

একটি ছোট্ট স্বপ্ন একটা ছোট পদক্ষেপ একটা ছোট্ট সাহস থেকে জীবন পাল্টে যায়। মাইশারা ৪ বোন বলে একটা সময় বাবা মা’কে অনেক কথা শুনতে হতো, পুত্র সন্তান নেই, কি হবে ভবিষ্যতে। তবে বাবা মার বিশ্বাস ছিলো পুত্র সন্তান নয় তাদের সন্তানই একদিন প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রতিষ্ঠিত হতে কোনো নির্দিষ্ট লিঙ্গ প্রয়োজন নেই। নারী পুরুষ শুধু মাত্র দুটি বিশেষণ। বাধাকে শক্তিতে পরিনত করে, সাহস আর ধৈর্য্য নিয়ে স্বপ্ন জয় করা যায় এমনটাই প্রমাণ করেছে আতিকা বিনতে রফিক মাইশা।

সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here