“তুমি কেনো চাকরি করছো না?” পড়াশোনা শেষ করে এ-কথা শোনেনি এমন একটি লোকও বোধহয় পাওয়া মুশকিল হবে। উদ্যোক্তা রওশন ইকা-র ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি। পরিবারের লোকজন, আত্মীয়-স্বজন এমনকি পাশের আন্টিও তাকে বলেছে “চাকরি না করে কেনো তুমি উদ্যোক্তা হবে?” কিন্তু তাতে কী? ইকা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন তিনি উদ্যোক্তাই হবেন।
২০১৭ সালে যশোর আইটি পার্কে কাস্টমার কেয়ার ম্যানেজমেন্টের উপর একটা ট্রেনিংয় নিয়ে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন ইকা।
কেনো উদ্যোক্তা হলেন জানতে চাইলে ইকা উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, “আমি চাকরি জীবনে ব্যর্থ হয়ে উদ্যোক্তা হয়েছি। তাছাড়া নিজের উন্নয়ন, এলাকার উন্নয়ন, দারিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, নিজের আত্মতৃপ্তি, কাজের নেশা, নতুন নতুন আইডিয়াকে মানুষের সামনে উপস্থাপন করা এগুলো এখন আমার প্যাশন বা নেশাতে পরিণত হয়ে গেছে।”
একসময় মাত্র ৬৫০ টাকা পুঁজি নিয়ে উদ্যোগ শুরু করেন ইকা। উৎপাদন করতে থাকেন নান্দনিক ডিজাইনের বাহারি রকমের পণ্য। তার উৎপাদিত পণ্য সম্পর্কে উদ্যোক্তা বলেন, “যশোরের বিলুপ্তপ্রায় সেলাইকে ফিউশনের মাধ্যমে নতুন রূপে উপস্থাপন করছি। এছাড়া বাঁশের তৈরি বিভিন্ন বুননের পাখির বাসা, ল্যাম্পপোস্ট, শো-পিস ইত্যাদি এবং খেজুরের পাতা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন রকমের হোম ডেকর পণ্য নিয়ে কাজ করছি।”
এ কাজের জন্য তার ১২ জন সুপার ভাইজার আছেন। প্রত্যেক সুপার ভাইজারের অধীনে ১০০ জনের বেশি কর্মী কাজ করেন। সেদিক দিয়ে হিসেব করলে, মাঠ পর্যায়ে তার এক হাজারের বেশি কর্মী কাজ করছেন। তারা মাসে ৫০০ সেট পণ্য তৈরি করেন যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার রওশন ক্রিয়েশনস নামে একটি পেজ আছে। দেশের সব জেলাতেই তার পণ্য যায়। এছাড়া ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, মেক্সিকো, কানাডা প্রভৃতি দেশেও তার পণ্য যায়।
যশোর সরকারি এমএম কলেজ-এর একাউন্টিং বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা উদ্যোক্তা রওশন ইকার কাছে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “উল্লেখযোগ্য উদ্যোক্তা হিসেবে শুধুমাত্র নিজের দেশে নয়, সারা বিশ্বে নিজের কাজের ছাপ রেখে যেতে চাই। আর মেয়েরাও যে খুব ভালো উদ্যোক্তা হতে পারে সেটা সম্মানের সাথে সারা বিশ্বে তুলে ধরতে চাই।”
রফিকুল ইসলাম ও আমেনা ইসলাম দম্পত্তির দুই কণ্যার মধ্যে বড় ইকা’র জন্ম এবং বেড়ে ওঠা যশোরেই। কিন্তু তার স্বপ্ন যশোর ছাড়িয়ে সারা বাংলাদেশের মানুষ তাকে চিনবে; সারা পৃথিবীর মানুষ তার পণ্যের কদর করবে। তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে ইকা বলেন, “শুধুমাত্র সরকারি কর্মসংস্থানের প্রতি নির্ভরশীল না হয়ে একটু একটু করে প্রতিনিয়ত নতুন ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।
‘‘ব্যর্থ হলেও থেমে থাকলে চলবে না, কাজ চালিয়ে যেতে হবে। মার্কেটে বিদ্যমান রয়েছে এমন পণ্য নিয়ে কাজ করতে গেলে অবশ্যই মার্কেট রেট ধরে রাখতে হবে এবং কপি করার চিন্তাভাবনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।”
সাইদ হাফিজ
উদ্যোক্তা বার্তা, খুলনা