উদ্যোক্তা ফারহা মাহমুদ তৃণা

আমেরিকার টেক্সাসের একটা ফ্যাশন-শো তে বাংলাদেশী উদ্যোক্তার পণ্য। দারুণ না? উদ্যোগ গ্রহণের মাত্র তিনমাস পরেই মিলেছে এমন সুবর্ণ সুযোগ। প্রতিভা থাকলে তা বিকশিত হবেই হবে। তার জ্বলন্ত উদাহরণ আমাদের আজকের উদ্যোক্তা। জন্মগতভাবেই সকল উদ্যোক্তাদের মাঝে সৃজনশীলতা গুনটি দেখা যায়। শুরুটা যে ঠিক কবে থেকে হয় এসব প্রতিভাবানদের বলা মুশকিল।

সাদিয়া মাহমুদ তৃষার

গ্রামের বাড়ী চট্টগ্রাম হলেও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। বাবা আর্মি অফিসার তাই বেড়ে ওঠা বিভিন্ন ক্যান্টমেন্টের কড়া নিয়মের বাউন্ডারির ভেতর। কিন্তু তৃণা ‘থিংক আউট অব দ্যা বক্স’ এই সুত্রে চলতেন। প্রচন্ড এডভেঞ্চার প্রিয় স্পোর্টি গার্ল তৃণা সেই ছোট্ট বেলায় গান,নাচ শিখেছেন। ছিলেন প্রথম শ্রেণীর এথলেটিক, যেকোন খেলাধুলায় অংশ নিলেই হতেন প্রথম। পড়াশোনা করেছেন ইংলিশ মিডিয়ামে কিন্তু বাবার ট্রান্সফার হলে চট্টগ্রাম যেতে হয় এবং সেখানেই বাংলাতে অনার্স-মাস্টার্স কমপ্লিট করেন।

প্রথম চাকরি শিক্ষক হিসেবে স্কলাসটিকা স্কুলে। তারপর অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। বর্তমানে সেখানেই কর্মরত আছেন। কিন্তু শিক্ষকতার পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ দেশের প্রথম শ্রেণীর কয়েকটি টিভি চ্যানেলগুলোতে নিউজ কাস্টার হিসেবে ছিলো বেশ সুনাম। খুব ভালো উপস্থাপিকা হওয়ায় ডাক পেতো বড় সব প্রোগ্রামের হোস্ট হিসেবে। এর মাঝেই উদ্যোক্তা হিসেবেও যাত্রা করেছেন। ৩বছর আগে তখন ২০১৬ এর শুরু, ফেসবুকে বিভিন্ন পেইজের খুব আধিপত্য শুরু হয়েছে। সেসময় শখের বসেই ছোট বোন সাদিয়া মাহমুদ তৃষার জোরাজুরিতে একটা পেইজ খুললেন উদ্যোক্তা ফারহা মাহমুদ তৃণা।

‘টিআরএস ক্লসেট’ নামের সেই পেইজটিতে নিজেদের পড়নের ড্রেস গুলোর ছবি দিতেন। নিজেদের পছন্দে বিভিন্ন ড্রেস তৈরী করে অনেককেই গিফট করতেন, সেই ছবি গুলোও আপলোড করতেন। আর এর মাঝেই শুরু হলো অর্ডার। শখের বসে তা তৈরীও করে দিতেন। হঠাৎই আমেরিকার টেক্সাসে বসবাসরত এক আত্মীয়ের মাধ্যমে বেশ কিছু ড্রেসের অর্ডার পান যা একটা ফ্যাশন শো তে প্রদর্শিত হবে।

ঠিকঠাক ভাবে তা পাঠিয়েও দিলেন, খুব প্রশংসিত হলেন উদ্যোক্তা তৃণা ও তৃষা। এবার বেশ মনোযোগ দিয়ে কাজ শুরু করলেন, প্রতিদিন অর্ডার বাড়তে থাকে। ক্রেতাদের অনুরোধে চিটাগংয়ে ছোট বোনের নামে ‘তৃষাস ক্লসেট’ একটা আউটলেট ওপেন হলো।  যেটার সম্পূর্ণ তত্ত্বাবধানে উদ্যোক্তা তৃষা। সেখানে স্থায়ী-অস্থায়ী ভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ১৫জন কর্মীর। ‘টিআরএস ক্লসেট’ এর সিসটার কনসার্ন। দারুণ সাড়া মিললো।

রুচিশীল ব্যক্তিদের প্রথম পছন্দ হতে থাকে তাদের ডিজাইনের পোশাক গুলো।মুলত প্রফিটের জন্য নয় বরং প্যাশন থেকেই উদ্যোক্তা হওয়া। তাই প্রতিটি পণ্যেই খুব যত্নের ছাপ পরিলক্ষিত হয়। বছর ঘুরতেই এবার তৃণা ওপেন করলেন রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীতে একটি শো-রুম “তৃণাস ক্লসেট”। শাড়ী, কুর্তি, সেলোয়ার-কামিজ,আবায়া, কেইপ, টপ কিন্তু সবগুলোই একটু ফিউশন করা ওয়েস্টার্ন ধাচের যার   ডিজাইন তৃণা নিজেই করেন।

শুরুতে শূন্য মুলধন নিয়ে শখের বসে শুরু করলেও তিন বছরে উদ্যোক্তা ফারহা মাহমুদ তৃণা প্রায় ৩০লাখ টাকা মূল্যমানের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। ছোট বোন উদ্যোক্তা সাদিয়া মাহমুদ তৃষাও আরও বেশী টাকা মূল্যমানের ব্যবসা দক্ষ হাতে সামলাচ্ছেন। তৃণার উদ্যোগে এখন প্রায় ১২জন কর্মী কর্মরত আছেন। উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী প্রয়োজনে দু-বোনের মধ্যে হস্তান্তর করে থাকেন।u

তৃণা মাহমুদ উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘আমার বাচ্চাটা স্পেশাল চাইল্ড হওয়ায় ওকে প্রতি সপ্তাহে থেরাপি দিতে হয়। তাই ওর জন্য অনেকটা সময় দিতে হয় আমাকে তারপরও আমি চাকরি, ব্যাবসা পরিচালনা করছি বেশ কিছু বড় বড় সংস্থার সাথেও কাজ করছি। তাই আমি বলবো কোন মেয়ে যদি উদ্যোক্তা হতে চায়, সে যেনো বসে না থাকে। শুরু করলেই একটা সময় পর তা সফলতা পায় এরজন্য শুধু দরকার সততা আর নিষ্ঠার সাথে পরিশ্রম করে যাওয়া।’

দু-বোনের এই স্বপ্ন, প্রতিষ্ঠানকে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান করা। অনলাইনের সাথে সাথে এক নামে চিনবে তাদের এই উদ্যোগকে। জানেন এটা অনেক কঠিন এবং বিশ্বাস করেন যদি স্বপ্ন দেখেন বড় করে, সত্যি হবেই! অনেক দূর এগিয়েছেন, আরও অনেক এগোতে হবে। তাই সকল প্রতিকূলতায় স্বামী আর তাদের উভয় পরিবার পাশে থেকেছেন,  অনুপ্রেরণা দিয়ে চলেছেন সফল এই দু উদ্যোক্তা তৃণা ও তৃষাকে।

 

 

বিপ্লব আহসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here