উচ্চ-মাধ্যমিক শেষ করার পরপরই একটি সরকার অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘ইডেন স্কুল এন্ড ক্যাডেট কোচিং’-এ শিক্ষকতা শুরু করেন আয়েশা সিদ্দিকা। পরবর্তীতে টাঙ্গাইল সেন্ট্রাল স্কুল নামের আরও একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। একরকম ভালোই চলছিলো জীবন-সংসার। হঠাৎ করে করোনা মহামারী সারা পৃথিবীকে স্তব্ধ করে দিলো। সেই স্তব্ধতার ছোঁয়া থেকে বাদ পড়লো না আয়েশার জীবনও।
সময়টা ২০২০ সালের অক্টোবর মাস। কর্মহীন করোনাকালে একটাই চিন্তা তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছিলো, ‘এবার চলবে কী করে?’ ভাবনাটা শুরু হওয়ার পর থেকে নানা দিকে হাতড়াচ্ছিলেন। মনে মনে ভাবছিলেন উদ্যোক্তা হবেন কিন্তু সাহস পাচ্ছিলেন না।
উদ্যোক্তা হবার ক্ষীণ ইচ্ছা মনের মধ্যে তাজা থাকতে থাকতেই মিউচুয়াল ফ্রেন্ডদের মাধ্যমে হঠাৎ একদিন সামনে এলো ই-কমার্সের সবচেয়ে বড় গ্রুপ উই। তারপর সেখান থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার বাসনা তীব্র হলো। শুরু করলেন নিজের ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করার পেছনে ছুটে চলা।

মাত্র ৬,৫০০ টাকা নিয়ে তার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা জীবনের যাত্রা শুরু করেন। প্রথমে তিনি আমাদের দেশিয় ঐতিহ্য তাঁতের শাড়ি নিয়ে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, শাল, সুতি ও হাফ সিল্ক জামদানী থ্রি পিস, আড়ং কটন শাড়ি, জামদানী কাপল সেট, জামদানী পাঞ্জাবি, কুমিল্লার খাদি পাঞ্জাবি ও অন্যান্য দেশি-বিদেশি পণ্য নিয়ে কাজ করছেন।
অনলাইনে উদ্যোক্তার পেইজের নাম ‘ঘাসফুল’। এ পর্যন্ত প্বার্শবর্তী দেশ ভারতে এবং সৌদি আরবে আমার পণ্য গেছে। তবে তা নিয়মিত নয়। দেশের ভেতর ঢাকা, যশোর, বরিশাল, চট্টগ্রাম, জামালপুর, নরসিংদী, নেত্রকোনা সহ বেশকিছু জেলায় তার পণ্য যায়।

নিজের উদ্যোগ সম্পর্কে উদ্যোক্তা আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘চুপচাপ বসে থাকা আমার কাছে আলস্য ও ভবিষ্যৎহীন মনে হয়। তাই সবসময়ই চেষ্টা করি কিছু শেখার বা করার। করোনা সময়ে স্কুল বন্ধ থাকায় উদ্যোগের পথে অগ্রসর হওয়া। যেহেতু আমি নিজ জেলা টাঙ্গাইলে থাকি। তাই কাজের বিস্তার, প্রচার, প্রসার ও পণ্যের সহজলভ্যতা এবং টাঙ্গাইলের তাঁতপণ্যের প্রতি অগাধ ভালবাসার কারণে মূলত টাঙ্গাইলের তাঁতপণ্য নিয়ে কাজ করা।
প্রায় দেড় বছরের বেশি সময়ে আমার উদ্যোগ আমাকে অনেকের ভালবাসায় আত্নবিশ্বাসী ও আত্মনির্ভরশীল ও আত্নপরিচিত করেছে। আমার উদ্যোগ বিদেশের মাটিতে দেশিয় ভালবাসার মতোই যোগ্য মর্যাদা ও ভালবাসার অংশ হবে। তার জন্য আরো সুদৃঢ় ভাবে কাজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নিজের উদ্যোগের নামে স্থায়ী ও অস্থায়ী শো-রুম গড়ে তুলতে চাই। বিশ্বাস-ভরসা ও সততার সঙ্গে যুক্ত থেকে আমার উদ্যোগের নাম সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ুক।’

তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে উদ্যোক্তা আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘কোন কাজই ছোট নয়। সততার সাথে কাজ করলে যে কোন কাজই আপনাকে সফলতা প্রদান করবে। নিজের উপর বিশ্বাস, ধৈর্য্য রেখে আপনারা আপনাদের কাজ বা উদ্যোগ নির্বাচন করুন। যে কাজ আপনি ভালবেসে করতে পারবেন বা আপনার দক্ষতা আছে তাই করুন। উদ্যোগকে শুধুমাত্র আয়-রোজগার বা টাকা বৃদ্ধির অংশ মনে করবেন না। স্বল্প পরিসরে স্বল্প মূলধন নিয়ে কাজ শুরু করুন, লেগে থাকুন কাজের প্রতি। উদ্যোগে স্বল্প লাভ রেখে গ্রাহকের পছন্দ-অপছন্দ, চাহিদা ও দেশিয় হালচাল বা ট্রেন্ড পর্যবেক্ষণ করে উদ্যোগে নতুনত্ব আনুন। পরিশেষে অন্যকে যতটা সম্ভব সাহায্য ও উৎসাহ দিন।’
সাইদ হাফিজ,
উদ্যোক্তা বার্তা