পরিবারের ছোট্ট মেয়ে মিষ্টি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা শেষে করে ভাবলেন কিছু একটা করবেন কিন্তু কি করবেন সেটাই খুঁজে পাচ্ছিলেন না। হঠাৎ ইউটিউবে মনামী ঘোষের একটি প্রতিবেদনে আর্টিফিশিয়াল ফুলের গহনা নিয়ে কাজ করার বিষয়ে জানতে পারেন এবং খুবই ভালো লেগে যায় মিষ্টির। বারবার ভিডিওটি দেখতে থাকেন এবং পরে গহনা বানানোর যত ভিডিও আছে সব টা দেখতে শুরু করেন। আগ্রহ বাড়ে আর্টিফিশিয়াল ফুলের গহনার প্রতি।
ঠিক তিন মাস পর এসএসসির ফল প্রকাশ হয় এবং পরীক্ষায় গণিত বিষয়ে ফলাফল খারাপ হওয়ায় প্রচন্ড মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন মিষ্টি। ফলাফল খারাপ হওয়ায় নিয়মিত সামাজিক হেনস্থার স্বীকার হতে হয় তাকে এবং তার পরিবারকে। সমাজের নানা রকম লাঞ্চণা থেকে মুক্তি পেতে তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন মিষ্টি। কিন্তু মিষ্টি উপলব্ধি করে আত্মহত্যাই সমাধান হয়। সার্টিফিকেট কখনো কারো মানদন্ড যাচাইয়ের জন্য যথেষ্ট নয়। জীবনের এই ব্যর্থতা থেকেই ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করেন।

মিষ্টির বেড়ে উঠা বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে। সেখান থেকেই শুরু করলেন এক নতুন পথচলা। ২০২০ সালের জুন মাসে মা এবং বড় বোনের সাথে পরামর্শ করে তাদের কাছ থেকে বারো হাজার টাকা নিয়ে শুরু করলেন আর্টিফিশিয়াল ফুলের গহনা তৈরির কাজ। বড় ভাই ঢাকা থেকে ফুলের গহনা বানানোর কাঁচামাল পাঠিয়ে থাকেন।
মিষ্টির সাজ নামক অনলাইন প্লাটফর্মে আর্টিফিশিয়াল ফুলের গহনা খোপা’ গাজরা,ব্রাইডাল, নন ব্রাইডাল,সেমি ব্রাইডাল, রাখি চুরি, নিকাহ পেন. হিজাব পিন নিয়ে কাজ করছেন উদ্যোক্তা মিষ্টি। এছাড়াও আর্টিফিশিয়াল গহনার পাশাপাশি তিনি নারিকেল নাড়ু, নারিকেল এর কাঁচাগোল্লা,বাদামের নাড়ু, নকশি কাঁথা নিয়েও কাজ করেছেন। শুরুটা বারো হাজার দিয়ে হলেও পরিবারের সহযোগিতায় এখন মাসে প্রায় লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন উদ্যোক্তা মিষ্টি।

উদ্যোক্তা মিষ্টির সাথে ৫ জন কর্মরত রয়েছেন।
পাইকারি এবং খুচরা বিক্রির কাজে তারা সাহায্য করে এছাড়াও পণ্য প্যাকেটিং ও গহনা সাজাতে এবং বানাতে তারা সহযোগিতা করে থাকে।
জীবনের বিভিন্ন টানাপোড়েন কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার দৃঢ় সংকল্পে এগিয়ে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা মিষ্টি।
দীর্ঘ আলাপচারিতায় উদ্যোক্তা বলেন,
“ছোট্ট জীবনে যখন ডিপ্রেশনের চারদিক থেকে আমাকে আটকে ধরছিল শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল,এত এত ডিপ্রেশনে থাকার মধ্যে সারাদিন ফোন ঘাটার মধ্য থেকে মনামী ঘোষের একটা প্রতিবেদন দেখতে পাই যেখানে আর্টিফিশিয়াল ফুলের গহনা তৈরি করে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হয়েছেন। সেখান থেকেই অনুপ্রেরণা পাই এবং একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চাই “

তিনি তরুণ প্রজন্মকে বলেন, “সরকারি ও বেসরকারি কর্মসংস্থানের পিছে না ঘুরে নিজে থেকে কিছু করা উচিৎ। কোন কাজকে ছোট করে দেখা উচিৎ না। গ্রামেগঞ্জে কত শত বেকারদের জীবন যেন এক রণক্ষেত্র যুদ্ধ মঞ্চ। আমরা নিজে থেকে কিছু শুরু করি আমরা অন্যদের কর্মসংস্থান তৈরি করি চাকরি না খুঁজে আমরাই চাকরি দেব। উদ্যোক্তাই একটা উত্তম প্রফেশন হতে পারে। আসুন আমরা চাকরি খুঁজব না চাকরি দেবো – এই স্লোগানে এগিয়ে যাই।”
সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তাবার্তা