গৃহিণী শব্দটায় তার ভীষণ বিরোধ, ঠিক নিতেই পারেন না এই শব্দটা তাই ‘মা’ কে ডাকেন হোম মিনিস্টার বলে আর বাবা পেশায় একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। ৪ বোন ও ১ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ৫ম। ৪ বছর বয়সে যখন স্কুলে ভর্তি হন ফাতেমা ইসলাম লতা তখন থেকেই একটি মাত্র খেলা তার পছন্দ। সে শিক্ষক আর বাঁকিরা ছাত্র।
এভাবেই এসএসসি, এইচএসসি এর পর একাউন্টিং এ অনার্স-মাস্টার্স। তবে অনার্স পড়াকালীন সময়েই হাত খরচ এর জন্য কিছু কাপড় কিনে নিউ মার্কেট থেকে ব্লক করিয়ে সেগুলো বিক্রি করতো। একটাও পরে থাকতো না সবাই জামা গুলো লুফে নিতো। এভাবে বেশ অনেক দিন কেটে যায় এর মাঝে অনার্স শেষ হয়ে যায়। নিবন্ধন পরীক্ষা দিলে পাশও করেন এবং এ সময়ের মধ্যে মাস্টার্সও শেষ। একটি স্কুলে চাকরিও হলো। ছোট বেলার এম ইন লাইফ পূরণ হলো মনে হচ্ছিল।
এ প্রসঙ্গে ফাতেমা ইসলাম লতা বলেন, ” হ্যাঁ শখ টা পূরণ হলো ঠিকই কিন্তু কিছু দিন পর বুঝলাম অন্যের অধীনে কাজ করা কি বিরক্তিকর। পুরোনো ব্যবসায়ে ফিরে যাব ভাবছিলাম, আবার ভাবলাম আরেকটু লেখাপড়া করি যেহেতু অনার্স পড়ার সময়ই আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল এবং এক সন্তানের মা’ও হয়ে গিয়েছিলাম। তাই ওদের নিয়ে ভাবতে ভাবতে ৪ বছর পর ফিন্যান্স এন্ড একাউন্টিং এ এমবিএ করলাম। ২ বছর চেষ্টা করলাম চাকরির জন্য। এক একটা ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে বুঝলাম আমাকে দিয়ে চাকরি হবে না। কারো অধীনে কাজ করা আমার জিনে নাই”।
সে সময় তার হাতে কোন টাকা ছিল না ইনভেস্ট করার মতো। কারও কাছে টাকা চাইবে সে সুযোগও ছিলনা কিন্তু আমাকে কিছু করতেই হবে, এই ইচ্ছেটা ছিল। শুধু ভাবনা তার নিজের একদম নিজের বলে কি কিছুই নেই! হঠাৎ মনে পরলো বিয়ের গহনা গুলো একদম তার নিজের। যা কোন কাজে আসছে না। স্বপ্ন পূরনে সহায়ক হবে এগুলো বিক্রির টাকা। অন্য কোন দিকে না তাকিয়ে শুরু করলেন ‘এফ কমার্স’ দিয়ে। এবং এর মাঝেই কোন সীমাবদ্ধ না থেকে ট্রেড লাইসেন্স, টিন, ওয়েবসাইট সব কিছু তৈরী করে ফেললেন। যাত্রা হলো ‘বৌঠান’ এর। বৌঠান এই সুন্দর নামটি তার স্বামীর দেয়া যার সহযোগিতায় আজ সে সত্যিকারের স্বপ্নের পথে হাঁটছেন।
পূর্বের অভিজ্ঞতা থাকায় নতুন ভাবে তাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়নি। ৪ জন কর্মী প্রত্যক্ষভাবে ও ৮ জন কর্মী পরোক্ষভাবে কাজ করছেন। ব্লক, বাটিক,স্ক্রিন প্রিন্ট, হাতের কাজ – শাড়ী,সালোয়ার কামিজ, কুর্তি বিশেষ করে জামদানীকে ভিন্ন আঙ্গিকে তৈরি করছেন। ভবিষ্যতে আরও ভিন্নধর্মী কালেকশন আসছে এমনটায় জানিয়েছেন বৌঠান এর উদ্যোক্তা ফাতেমা ইসলাম লতা।
উদ্যোক্তা লতা বলেন, “পরিকল্পনার একদম শৈশবে বৌঠান এর অবস্থান। বৌঠানকে পরিপূর্ণ স্থানে পৌঁছাতে পারে আমার সকল সহযোদ্ধারা। যাদের কথা না বললেই নয় আমার ভাই রায়হান সে হলো বৌঠান এর প্রাণ। আমার মা যিনি আমাকে সব কাজে মনোবল দিয়েছেন আমাকে বিশ্বাস করেছেন এবং আমার দুই সন্তান ও তাদের বাবা যে কিনা প্রতিটি মুহূর্তে আমাকে সার্পোট করে যাচ্ছে। আমি থাকি আর না থাকি আমার উদ্যোগ থাকবে নিশ্চয়ই”।
বিপ্লব আহসান