রাজশাহী নিউ গভঃ ডিগ্রী কলেজ থেকে ডিগ্রি এবং দারুল এহসান ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেন উদ্যোক্তা রাবেয়া খাতুন। কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থাতেই তার প্রবল ইচ্ছে ছিলো বুটিক শিল্প নিয়ে কাজ করবেন। কিন্তু বিধিবাম, কলেজে অধ্যয়নকালেই তাকে বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। তারপর সেই স্বপ্নের কথা তিনি তার স্বামীকে জানালেন। ২০১৩ সালে মাস্টার্স শেষ করলেন। তিনি গর্ভবতী থাকাকালীন সময়টাকে কাজে লাগালেন, সে সময় রাজশাহী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ৪ মাসব্যাপী ব্লক-বাটিকের উপর প্রশিক্ষণ নিলেন। প্রশিক্ষণ চলাকালীন একজন নারীর সাথে পরিচয় হয় তার যিনি ব্লক বাটিকের কাজ করতেন, তাকে দেখে অনেক উৎসাহিত হলেন তিনি। ভাবলেন, উনি পারলে আমি কেন পারবো না? তিনি উদ্যোগ নিলেন বুটিক শিল্পকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবার।
২০১৪ সালে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ১০ জন কর্মী নিয়ে রাজশাহীর উপশহর এলাকায় “নকশী বাড়ী” নামে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু করেন উদ্যোক্তা রাবেয়া খাতুন। তিনি নকশী কাঁথা, থ্রি-পিচ, বালিশের কুশোন ও চাদর তৈরি করা শুরু করলেন। এ কাজে তার স্বামী তাকে ভীষণভাবে উৎসাহীত ও সহযোগিতা করলেন।। একটি দুটি করে পণ্য বিক্রি হওয়া শুরু হলো। হঠাৎ একজন ক্রেতা একসাথে ২০টি থ্রি-পিসের অর্ডার দিলেন। এই অর্ডারটি পেয়ে তিনি সাহস পেলেন বড় পরিসরে কাজটি শুরু করার।
উদ্যোক্তা বার্তাকে রাবেয়া খাতুন জানান, “আমার মূল লক্ষ্য ছিল আমি আমার সকল পণ্যগুলো মেলাতে প্রদর্শন করব। লোকসানের কথা চিন্তা না করে আমি বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করতে থাকি। হঠাৎ শুনলাম রাজশাহীতে এস এমই ফাউন্ডেশন থেকে মেলা হতে যাচ্ছে। আমি তাৎক্ষণিক মেলাতে স্টল নেওয়ার জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করলাম। ২০১৬ সালের ১৩ই জানুয়ারি মেলাটি শুরু হয়। আমি আমার সকল পণ্যগুলো সেখানে প্রদর্শণ করি এবং ব্যাপকভাবে ক্রেতাদের সাড়া পেতে থাকি। দর্শনার্থীদের মতামত এবং ব্যাপকহারে বিক্রয়, সকল দিক বিবেচনা করে এস.এম.ই ফাউন্ডেশন থেকে উদ্যোক্তা রাবেয়া খাতুনকে প্রথম স্থান অধিকারী হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়।

এতে তার অনুপ্রেরণা আরও বেড়ে যায়। তিনি ঢাকা এবং চট্রগ্রামের এস.এম.ই মেলায় অংশগ্রহন করেন। এস.এম.ই ফাউন্ডেশনের অধীনে কয়েকটি বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ নেন। তার প্রতিষ্ঠানটিকে বড় পরিসরে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে এস.এম.ই ফাউন্ডেশন থেকে ৫ লক্ষ টাকা লোন নেন। তার কাজের চাপের পাশাপাশি কর্মী সংখ্যাও বাড়তে থাকে। রাজশাহীর বিভিন্ন প্রান্তে রাবেয়া খাতুনের কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিটি জায়গায় একজন করে লিডার দিয়ে কাজ তুলে নিচ্ছেন তিনি।
রাজশাহীর কাকন হাটে প্রায় ৩০০ জন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় ৩০ জন , চারঘাটে ১০০ জন, রাজশাহী কোর্ট বাইপাস এলাকায় ৫০ জন সহ তার নিজ এলাকা উপশহরে আরও বেশ কয়েকজন কর্মী কাজ করে যাচ্ছেন। উদ্যোক্তা রাবেয়া খাতুনের পণ্য ঢাকা, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ , কুমিল্লা, চট্রগ্রাম, নাটোর সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ হচ্ছে। দেশের বাইরে ইন্ডিয়া, ইতালি এবং লন্ডনেও বেশ নাম করতে শুরু করেছে উদ্যোক্তার পণ্য। ৫০ হাজার টাকা দিয়ে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে প্রায় ৫০০ জন কর্মী নিয়ে সফলতার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করছেন উদ্যোক্তা রাবেয়া খাতুন।
রাজশাহী থেকে রাইদুল ইসলাম শুভ
এসএমই করেস্পন্ডেন্ট ,উদ্যোক্তা বার্তা