বাবা মা চাইতেন মেয়ে বড় হয়ে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবে কিন্তু মেয়ে চাইতো চকলেট আইসক্রিম বিক্রেতা হবে। কিন্তু বড় বেলায় মেয়ে মুক্তির মুক্তি মিলল সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে। জামদানি শাড়ির ব্যবসা শুরু করেন মাত্র বিশ হাজার টাকা দিয়ে আর মাসে তিনি এখন আয় করছেন দেড় থেকে দুই লাখ টাকা।
জেসমিন সুলতানা মুক্তি পড়াশোনা করেছেন ইংরেজি সাহিত্যে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভের (ইউডা) থেকে। ছোটবেলায় লেখাপড়ায় ভাল ছিলেন, তাই বাবা মা চাইত ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিছু একটা হবে মেয়ে জেসমিন।
কিন্তু জেসমিনের ইচ্ছে হতো আইসক্রিম ওয়ালা, চকলেট ওয়ালা হতে। যাতে ফ্রিতে চকলেট আইসক্রিম খেতে পারেন। বড় হওয়ার সাথে সাথে ইচ্ছে বদলে গেল পাইলট হতে চেয়েছিলেন সে ইচ্ছেও মরে গেল।
মেহেরপুরের মেয়ে জেসমিন ইংরেজি সাহিত্যে যখন ভার্সিটিতে ভর্তি হলেন, তখন তার মনে হল শিক্ষক হবেন তাই মাস্টার্স এর সাথে বি.এড টাও করে ফেলেছিলেন। বছর খানিক শিক্ষকতা ও করেছেন ২০১০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত।
তারপর বিয়ে সংসার,জব শুরু করেন সেলস এন্ড মার্কেটিংয়ে। আড়াই বছর জব করার পর মা হবার সময়গুলোর আগেই জব ছেড়ে দিলেন। ২০১৩ সালের নভেম্বর তখন থেকেই জেসমিনের মাথার মধ্য বিজনেস প্ল্যানিং চলতে থাকে।
স্বামী হাসানুজ্জামান সুজন তখন হকার্সবিডি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। জেসমিন টুকটাক পরামর্শ দিয়ে হেল্প করেন কি ধরনের পণ্য নিয়ে কাজ করা যায়।
জেসমিন ভাবছিলেন নিজের জন্য, নিজের একটা পরিচয় তৈরি করার। প্রজেক্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঢাকা এসে ভাবলেন বসে থাকা না কিছু করতে হবে সে ভাবনা থেকে জামদানি নিয়ে কাজ শুরু করলেন।
২০১৭ সালে ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে জামদানি লাভারস( jamdani lovers) এর যাত্রা শুরু করেন।
জামদানির পাশাপাশি জামদানি লাভারস-এ পাওয়া যায় বাটিক,তাত এর শাড়ি, থ্রিপিস, জর্জেট ওয়ান পিস, থ্রি পিস,কাতান টু পিস এসব নিয়ে কাজ করছেন জেসমিন ।
যার মূল্য থ্রিপিস পাঁচশ থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত এবং শাড়ি সাড়ে পাঁচ হাজার থেকে ত্রিশ হাজার পর্যন্ত। মাসে দেড়-দুই লাখ টাকার বিক্রি হয় বলে জানান জেসমিন।
ব্যবসা করে সফল হয়েছেন জেসমিন কিন্তু বাধাও ছিলো এই ব্যবসাতে বাধার কথাও জানালেন তিনি।
উদ্যোক্তা বার্তাকে জেসমিন বলেন, ‘প্রথম বাধা পুজি এবং কুরিয়ার সমস্যা, টাকা আটকে থাকে অনেক সময় কুরিয়ারে। পুঁজি বা ইনভেস্টমেনট থাকলে আরও বেশি পণ্য নিয়ে কাজ করতে পারতেন। ‘
জেসমিন উদ্যোক্তা বার্তাকে জানান, ‘জামদানি নিয়ে বড় আকারে কাজ করার স্বপ্ন এখন অধরা রয়ে গেছে তবে বাচ্চারা একটু বড় হলে ইনশাআল্লাহ সে স্বপ্নের পথে আমি এগিয়ে যাব। নিজের একটা শোরুম দিতে চাই।’
তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্য বলেন, ‘ব্যবসায় লেগে থাকতে হবে। সততার সাথে কাজ করতে হবে। পণ্য নির্বাচন , প্রাইসিং,প্যাকেজিং ব্যাপারে সাবধান হতে হবে।’
পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য বসে না থেকে কিংবা চাকরির মেয়াদ শেষে বসে না থেকে নিজে উদ্যোগ নিয়ে কিছু করে দেখিয়েছেন জেসমিন,ব্যবসা করে হয়ে উঠেছেন সফল নারী উদ্যোক্তা।
খাদিজা ইসলাম স্বপ্না