নিপুণ হাতে সূই-সুতার নকশার কারুকাজ। শখের বশে উদ্যোক্তা হন শীলা আহম্মেদ। সেই শখ এখন পেশা। প্রতিষ্ঠানের নাম নকশা হস্তশিল্প। অনলাইন পেইজ: Noksha. নকশীকাঁথা, শাড়ি, টুপিস, থ্রিপিস, সিঙ্গেল কামিজসহ হাতের তৈরি বাহারি নকশার পণ্য উদ্যো হয়েছেন শীলা।
শুরুটা মায়ের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া কিছু টাকা থেকে। বিয়ের পর বাবার বাড়ি গেলে আসার সময় মা জোর করে কিছু টাকা ব্যাগে গুঁজে দিতেন।
২০০০ সালের কিছু আগে এভাবেই একবার মা তাকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছিলেন পছন্দমতো কিছু কেনার জন্য। মায়ের দেওয়া সেই টাকা দিয়েই তিনি উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেছিলেন। পরে ইমিডিয়েট বড় ভাই অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করেছেন ।
শীলা আহম্মেদ বলেন: আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা জামালপুরে। জামালপুরেই আমার প্রতিষ্ঠান। আমার কোন কারখানা নেই, তবে কয়েকজন কর্মী আছেন, যারা বাসা থেকে সব রেডি করে দেন। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৭০০ কর্মী রয়েছেন যারা হস্তশিল্পের কাজ করেন, তারা এসে কাজ নিয়ে গিয়ে কাজ করে জমা দিয়ে যান । আমার অধিকাংশ বিক্রিই অনলাইনে, সেক্ষেত্রে রিপিট কাস্টমারই বেশি। মাসে আমার সেল প্রায় দেড়/দুই লাখ টাকা। আমার পণ্যের সেলাই কাজ করে অনেক নারী নিজেই ব্যবসায়ী হয়েছেন, প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছেন।
প্রতিবন্ধকতা প্রসঙ্গে উদ্যোক্তা শীলা আহম্মেদ জানান: পরিবার সবসময়ই আমাকে সর্মথন করেছে, কখনও বিরোধিতা করেনি; এটা আমার জন্য অনেক কিছু। আমি সব সময় চেয়েছি নিজে কিছু করতে, সেটা পেরেছি। তবে আমি চেষ্টা করেছি সংসারের সবকিছু শেষ করে অবসর সময়টায় কিছু করতে। যে সময়টা আমার একান্তই নিজের ছিল, সেই সময়টা আমি কাজে লাগিয়েছি, সব সময় চেষ্টা করেছি, কেউ যেন বলতে না পারে যে, আমার কাজের জন্য সন্তান ও সংসারের ক্ষতি হয়েছে।
এই উদ্যোক্তা আরও বলেন, ‘সামাজিকভাবে সরাসরি বাধার সম্মুখীন না হলেও আড়ালে সমালোচনা হয়েছে যে, এই বাড়ির বউ শেষে কিনা ব্যবসায় নামলো! এছাড়া কয়েকবার চুরি হয়েছে শোরুমে। প্রথম চুরি হয় ২০০৫ বা ২০০৬ এর দিকে, প্রায় লাখ টাকারও ওপরে ক্ষতি হয়েছিল। হয়তো কেউ হিংসা থেকে এটা করেছিল। তবুও আমাকে দমিয়ে রাখা যায়নি।’
তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে শীলা আহম্মেদ বললেন: তরুণদের ঝুঁকি নেওয়ার সাহস থাকতে হবে। সততা ও নিষ্ঠার সাথে কঠোর পরিশ্রম করে যেতে হবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি জানান, নিজের একটা পরিচিতি গড়ে তুলতে চান, সমাজে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে দেখতে চান; কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে চান। ‘বিশেষ করে সমাজে নির্যাতিত অবহেলিত নারীদের জন্য কাজ করে তাদের স্বাবলম্বী করে তুলতে চাই। আমি মনে করি প্রতিটা নারীর স্বাবলম্বী হওয়া খুব জরুরি।’
আফসানা অভি
উদ্যোক্তা বার্তা,