পৃথিবী এখনও কঠিন এক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত মার্চ মাস থেকে প্রথম বাংলাদেশে করোনা রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। তারপর থেকেই থমকে যেতে থাকে সকল কার্যক্রম। অফিস, আদালত, স্কুল, কলেজ, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। ধীরে ধীরে কর্ম হারাতে থাকে মানুষ। চারিদিকে শুধু অসহায়ত্ব এবং হাহাকার।
বন্দী জীবনে ঘটতে থাকে মানসিক বিপর্যয়। ঠিক সে সময় উদ্যোক্তা নির্ভর একটি সংগঠন ‘নারী উদ্যোক্তার খোঁজে’ তাদের সোশ্যাল মিডিয়া নিভর্র গ্রুপে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নেয়। অসহায়দের অর্থনৈতিক এবং খাদ্য সহযোগীতার পাশাপাশি যারা ঘরে আছেন, বন্দী মনে করছেন তাদের মানসিক সুস্থতার জন্য কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

অনলাইনে জুম প্লাটফর্ম ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি প্রশিক্ষণ, ব্লক, বাটিক, টেইলারিং, পেইন্টিং ইত্যাদি বিষয়ে শেখানো হচ্ছিলো সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এ ছাড়াও আর একটি পদক্ষেপ তারা গ্রহণ করে। যার নাম নিউ ডিজাইনার এন্ড ডিজাইন প্রতিযোগিতা। যা বাংলাদেশে ইতিমধ্যে কেউ করেনি এখনও। যেহেতু কোভিড সিচুয়েশনে সাধারণ চলাচলে বাধা। তাই পুরো প্রক্রিয়াটা চলে ভার্চুয়ালি।
দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে এই আয়োজনে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়। আবেদন জমা পড়ে ৮০ টি। প্রাথমিক বাছাই এর পরে ৩৭ জনকে আয়োজনের প্রতিযোগী হিসেবে অংশগ্রহণের জন্য বাছাই করে। এরপর IS OF WE class room এর মাধ্যমে তাদের নিয়ে পরিচালিত হয় গ্রুমিং সেশন। দীর্ঘ এক মাস জুম এর মাধ্যমে তাদের ফ্যাশান ডিজাইন সম্পর্কে, কিভাবে পোর্টফলিও তৈরি করতে হয়, কিভাবে স্কেচ আকঁতে হয়, রং, সুতা, ফেব্রিক্স, ডিজাইন সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়।

এক মাস প্রশিক্ষণের পর প্রতিযোগীরা তাদের নিজেদের নকশাতে তাদের পোর্টফলিও এবং পোশাক প্রস্তুত করে জমা দিতে সক্ষম হয়। তিনটি ক্যাটাগরিতে এই প্রতিযোগীতা পরিচালিত হয়। জামদানি, গামছা এবং টাই-ডাই বা বাটিক। ৩৭ জন থেকে সেরা দশ নির্বাচন, এবং সেরাদের সেরা নির্বাচন করার বিচারক হিসেবে ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মডেল, ফ্যাশন আইকন বিবি রাসেল। তিনি নিজে হাতে ধরে দেখে তার মতামত দিয়েছেন। তিনি খুশি। বিশেষ কিছু করতে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দরকার হয়। কিন্তু এই মেয়েদের তেমন প্রশিক্ষণ না থাকলেও এতটা ভাল করেছে৷ যাতে তিনি অভিভূত হয়েছেন।

নারী উদ্যোক্তার খোঁজে সংগঠন এর ফাউন্ডার চেয়ারম্যান উর্মি রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা এই আয়োজনটা এত কঠিন সময়ে শুরু করি যখন গোটা পৃথিবীর মানুষ থমকে আছে৷ রোগ শোকের পাশাপাশি মানুষ মানসিক ভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত ছিল। তাই আমি প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর কাজে মেয়েদের ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করেছি। এছাড়া আমরা যারা একটু শহর কেন্দ্রীক তারা সব কিছুতে একটু সুযোগ বেশি পেয়ে থাকি। কিন্তু অন্যান্য জেলা থেকে চাইলে হুট কর কোথাও অংশগ্রহণ করতে পারেনা। কিন্তু দেখেন আমাদের এই আয়োজনে অংশগ্রহণকরী সেরা দশের প্রতিযোগি শিলা চাকমা রাঙামাটি থেকে, ওয়ারেকা বিনতে ওয়ালি কুষ্টিয়া থেকে, শাহীন সীমা ময়মনসিংহ থেকে, উর্মী রেজওয়ান আজগর নারায়ণগঞ্জ থেকে, হাফিজা গাজীপুর থেকে, মিতু মিতালি ঢাকা থেকে, শিখা ঢাকা থেকে, মীম বিশ্বাস পাবনা থেকে কাজ করেছেন। তারা অনেকেই রেস্ট্রিকশন মেইনটেইন করা পরিবার থেকে আসলেও এই আয়োজনে আসতে কোন কিছুই তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।

উর্মী রহমান আরো বলেন, আমি সকলের সহযোগিতা চাই৷ এই আয়োজন আমরা প্রতিবছর একবার করে করতে চাই। আমাদের সকলের স্বপ্ন বিবি রাসেল আপা এই আয়োজনে তার গুরত্বপূর্ণ মতামত দিয়ে পাশে ছিলেন এ জন্য উদ্যোক্তা বার্তার মাধ্যমে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সকলের সহযোগিতা পেলে ইনশাআল্লাহ অবশ্যই নারীদের নিয়ে এগিয়ে যাবো।
নারী উদ্যোক্তার খোঁজে আয়োজিত নিউ ডিজাইনার এন্ড ডিজাইন প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা করা হয় গত ২রা অক্টোবর। জামদানি থীমে প্রথম হন ঢাকার উত্তরা থেকে নাজমুন নাহার শিখা, টাই-ডাই/বাটিক ক্যাটাগরীতে উর্মী রেজওয়ান আজগর এবং গামছা ক্যাটাগরীতে প্রথম হন ঢাকার শনির আখড়া থেকে মিতু মিতালি।

তারা সকলেই এমন একটা আয়োজনের জন্য IS OF WE পরিবার কে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। উর্মী রেজওয়ান বলেন, আমি টাই-ডাই সম্পর্কে কাজ জানতাম। তবে কোথাও একটু সাহস এবং আত্ম বিশ্বাসের অভাব ছিলো। এই আয়োজনের মাধ্যমে এবং নারী উদ্যোক্তার খোঁজের মাধ্যমে নিজেকে নুতন করে চিনতে শিখছি।
মিতু মিতালি বলেন, আমি আমার বাবার স্বপ্ন বুকে বেধে এই আয়োজনে অংশ নিয়েছিলাম। এত মানুষের ভীড়ে আমি কিছু করতে পারবো আশা করিনি। আমার থেকে আমার বাবা বেশি আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেছে৷ আলহামদুলিল্লাহ, আমি কৃতজ্ঞ সবার প্রতি।

জামদানি থীমে প্রথম হওয়া নাজমুন নাহার শিখা এবং তার পোশাক বিবি রাসেল ম্যাডামের প্রশংসা পাওয়া নিয়ে বলেন, আমি আশা করতে পারিনি এমনটা হবে। বিবি রাসেল আপা আমার পোশাকের প্রশংসা করেছেন। এমনকি মূল্য জানতে চেয়েছেন। এটা আমার পরম প্রাপ্তি। আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি IS OF WE পরিবারের প্রতি।
আয়োজনটির ফলাফল ঘোষণা হলেও পুরস্কার বিতরণি অনুষ্ঠান হবে আগামী ৯ই অক্টোবর। ধানমন্ডি WVA সেন্টারে। যেখানে উপস্থিত থাকবেন সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী জনাব শাজাহান খান এমপি এবং ফ্যাশন আইকন বিবি রাসেল।
বিপ্লব আহসান