রমেশ জয়ন্তিলাল চৌহান

১৯৬২ সালে ২২ বছর বয়সী একজন যুবককে আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে স্নাতক করে অনিচ্ছা সত্ত্বেও জন্মভূমি ভারতে চলে আসতে হয়েছিল। ভারতের মুম্বাইয়ে পারিবারিক ব্যবসা যখন ভেঙে পড়ে তখন তিনি তা পুনরুদ্ধার ও আর্থিক অবস্থার উন্নতি করার জন্য দেশে ফিরে আসেন। তিনি তার পারিবারিক ব্যবসাকে নিজের মেধা ও শ্রম দ্বারা  ১৮০০০ কোটি রুপির কোম্পানিতে পরিণত করেছিলেন ।  

আলোচিত ব্যক্তির নাম রমেশ জয়ন্তিলাল চৌহান। তিনি বর্তমানে বিলেলি ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক । তাঁর নেতৃত্বেই গোল্ড স্পট, থামস আপ, মাজার মতো ব্র্যান্ডগুলো তিন দশকেরও বেশী সময় ধরে ভারতীয় বাজারে রাজত্ব করেছে। তাঁর হাত ধরে এই ব্র্যান্ডগুলো তৈরী হয়েছে যার ফলে তিনি হয়ে ওঠেন কর্পোরেট বিশ্বের অন্যতম নাম।

১২ বছর বয়সে তার দাদা গুজরাট ছেড়ে মুম্বাই যান এবং সেখানে সেলাই শেখেন। কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে তিনি মুম্বাইয়ে এক টুকরো জমি কিনেন। পরবর্তীতে সেখানেই তার ব্যবসার ভিত্তিস্তম্ভ স্থাপিত হয়।

রমেশ গুজরাটি মিডিয়াম স্কুল থেকে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার জন্য গোয়ালিয়রে চলে যান। ১৫ বছর বয়সে তিনি বোস্টনের উদ্দেশে পাড়ি জমান এবং সেখানে এমআইটি থেকে স্নাতক করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি রুটি প্রস্তুতের জন্য একটি নীল প্রিন্ট তৈরি করেছিলেন যা মাত্র এক মিনিটে ৬০ টি রুটি তৈরি করতে পারতো।

ইঞ্জিনিয়ারিং শেষে নিজ দেশে ফিরে আসেন রমেশ। বোস্টনে থাকা কালীন তিনি অনেকগুলো বিস্কুট, সফট ড্রিঙ্কসের সংস্থা পরিদর্শন করেছিলেন, যা তাঁকে খাদ্য ও পানীয় শিল্প নিয়ে কাজ করার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।তিনি ভারতে ফিরে এসে পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরেন, কিন্তু তার পারিবারিক সংস্থাটি ততোদিনে ভেঙ্গে পড়েছিল। ফলে রমেশকে নতুন কিছু করার প্রয়োজনীয়তায় কোমল পানীয়ের ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর বাবার দেশীয় কৌশল সাথে রমেশের প্রযুক্তিগত জ্ঞান মিলিত হয়ে ঝড়ের গতিতে ভারতীয় গ্রাহক ও বাজার দখলে চলে আসে রমেশের।

১৯৯৭ সালটা রমেশের জন্য স্বর্ণবর্ষে পরিণত হয়েছিল কারণ সেই সময় ভারতে কোকাকোলা পানীয় দ্রব্যকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল ভারত সরকার। এই সুযোগটায় কাজে লাগিয়েছিলেন রমেশ। তিনি জানত যে পানীয় দ্রব্যে বাজারজাত করার এইটি একটি উত্তম সুযোগ তাই থমস আপ, সিট্রা এবং মাজা বাজারজাত করেছিলেন। যার স্বাদ প্রতিটি বয়সের ভোক্তা এবং বিভিন্ন গোষ্ঠি গ্রহণ করেছিল।

কিছু সময়ের জন্য এই সংস্থাটি ভারতের কিছু অঞ্চল তাদের আয়ত্তে নিয়ে নিয়েছিল। তবে কোকাকোলা ৯০ এর দশকে আবারো ফিরে এলে রমেশ বুঝতে পেরেছিল যে, এটি কোনো সহজ লড়াই হবে না। তাই তিনি তার কোম্পানিকে উচ্চ দামে কোকাকোলার কাছে বিক্রি করে দেন। তিনি নিজের সংস্থাটি বিক্রি করে দিয়েছিলেন কিন্তু বিসলেরি নামে একটি ইটালিয়ান সংস্থাকে স্বল্প দামে (চার লাখ টাকা) কিনেছিলেন যা বর্তমান বাজারে পানীয় দ্রব্যের একটি বৃহত্তম বাজার দখল করে রেখেছে।

এই কিংবদন্তি ব্যবসায়ী বিশ্বাস করেন যে, প্রতিটি মানুষই সফল হতে পারে তার দৃঢ় মনোবল এবং কঠোর পরিশ্রম দ্বারা।

 

মোঃহৃদয় সম্রাট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here