বিদেশ নয়, স্বদেশেই ভাগ্য ফিরিয়েছেন ১৮টি দোকানের ও’নার আজহার উদ্দিন

0
উদ্যোক্তা আজহার উদ্দিন রাজা

দরিদ্র আজহার উদ্দিন রাজার জন্ম ছনের ঘরে। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্হা। বাবা অভাবের ভেতর তাদের ছয় ভাইবোনকে বড় করেন। ছোটবেলা থেকেই অভাব-অনটনের ভেতর বেড়ে উঠা আজহার উদ্দিনের স্বপ্ন ছিল কোনদিন টাকা হলে বাবাকে ভালো একটা  ঘর করে দেবেন। সেই ভাবনা থেকেই উদ‍্যোক্তা হয়ে উঠা।

আজহার উদ্দিন রাজার জন্ম ময়মনসিংহের ত্রিশালে নওধার গ্রামে। বাবাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে মানুষের বাড়ি, অন‍্যের জমি চাষাবাদ, অন‍্যের গরু দেখা, হকারের কাজ থেকে শুরু করে নানা রকম কাজ করেছেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই আয় রোজগার করে আজহার উদ্দিন রাজা পরিবারকে সাহায্য করতেন।

নানা কাজ করেও যখন সুবিধা করতে পারছিলেন না, তখন অভাব থেকে মুক্তি পেতে একজনের পরামর্শে বিদেশ পাড়ি দিতে চান। কিন্তু বিদেশ যেতে তো অনেক টাকা লাগবে! এত টাকা কোথায় পাবেন! তখন পরিচিত লোকটি বললেন, এখনই টাকা দিতে হবে না; তুমি যখন চাকরি পাবে, বেতন থেকে টাকা কেটে নেওয়া হবে। অভাব থেকে মুক্তি পেতে রাজি হয়ে যান, পাড়ি দেন প্রবাসে।

পরেরটা শোনা যাক তার কাছ থেকে: দুবাই নেমেই আমি বুঝতে পারি আমাকে গলাকাটা পাসপোর্টে আনা হয়েছে। বাইরে বের হলেই পুলিশ ধরবে। আমাকে একটা হোটেলে কাপড় পরিস্কারের কাজ দেওয়া হয়। হোটেলে যারা কাজ করতো তাদের হাতে ঘা দেখে আমি ভয় পেয়ে যাই। ওই কাজ ছেড়ে অন‍্য কাজ খুজঁতে থাকি। সেসময় হোটেলে ভারতীয় ও পাকিস্তানীরা রান্নার কাজ করতো। তাদের সাথে একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলি এবং তাদের থেকে চা বানানোর কৌশল রপ্ত করি। এভাবে চার পাঁচ মাস চলে যায়। এর মধ‍্যে সুযোগ পেয়ে হোটেল থেকে পালিয়ে যাই। এবং এক সময় পুলিশের কাছে ধরা পড়ি। পুলিশ কিছুদিন পর আমাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়। দেশে এসে সোজা ত্রিশালে চলে যাই। নতুন করে ভাবতে শুরু করি কী করা যায়? এরপর ঢাকা এয়ারপোর্ট এলাকায় কার ওয়াশের কাজ নেই।

এভাবেই চলছিল। সময়টা তখন ২০১৯। “আমি সবসময়ই চাইতাম মানুষের ভালোবাসা আর মানুষের কাছে থাকতে। সেই চিন্তা থেকে কার ওয়াশের কাজ ছেড়ে এয়ারপোর্টে তিন হাজার টাকা দিয়ে ছোট্ট একটা চা দোকান দেই। দোকানের নাম রাখি ‘রাজা চায়ের আড্ডা’। প্রথমে আমি পাঁচ টাকার চা বিক্রি করতাম। দুবাই যাবার আগে আমার  ধারণা ছিল মানুষ শুধু পাঁচ টাকার চা-ই খায়। বিদেশে গিয়ে হরেক রকম চা দেখে আমার ধারণা পাল্টায়।”

পাঁচ টাকার চা থেকে একটু বেশি দামের কালোজিরা চা, মাল্টা চা, তেঁতুল চা আর নরমাল দুধ চা বিক্রি করা শুরু করি। পাশাপাশি বিদেশে শেখা কিছু স্পেশাল চা বানাতে শুরু করেন। ক্রেতারা সেসব চা সাদরে গ্রহণ করলেন। বিশেষ করে কাজুবাদামের চা এবং ইন্ডিয়ান মাশালা চা বেশ জনপ্রিয় হয়ে গেলো। কাজুবাদাম চায়ের মধ‍্যে কাজুবাদাম, কাঠকাদাম, হরলিক্স, কিসমিস, গুঁড়া দুধ, কনডেনসড মিল্ক দেন আর ইন্ডিয়ান মাসালা চা-ও বানান অনেক উপকরণ দিয়ে। প্রতি কাপ চায়ের দাম ১৫ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পর্যন্ত। এখন দিনে হাজারেরও বেশি কাপ চা বিক্রি হয় । স্কুল,কলেজের  ছাত্রছাত্রীসহ নানা প্রান্ত থেকে লোকজন আসে ‘রাজা চায়ের আড্ডায়’।

‘রাজা চায়ের আড্ডা’র অন‍্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এখানে পিতলের নানা ধরনের  কেটলি সাজানো। সেগুলো দেখতে অনেকটা রাজা বাদশাদের যুগের মতো। দোকানে যারা কাজে নিয়োজিত তাদের পোশাকও সেই আমলের মতো চাকচিক‍্যময়। আজহার উদ্দিন রাজার পোশাকটিও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

উদ‍্যোক্তা আজহার উদ্দিন জানান: এখন ঢাকা, ময়মনসিংহ, ত্রিশালসহ বিভিন্ন জায়গায় ১৮টি দোকান এবং ৬৫ জন সহকর্মী রয়েছেন। চায়ের দোকান দিয়েই আমি এখন আমার বাবাকে দুইটা পাকা ঘর করে দিয়েছি। আমি চাই বাংলাদেশের প্রতিটা জেলায় রাজা চায়ের শাখা করতে।

তরুণ উদ‍্যোক্তাদের জন‍্য ‘রাজা চায়ের আড্ডা’র উদ‍্যোক্তা আজহার উদ্দিন বলেন, “বসে না থেকে তরুণরাও উদ‍্যোক্তা হতে পারেন। তারা যদি উদ‍্যোক্তা হতে চান তাহলে আমিও তাদের সাহায্য সহযোগিতা করবো। যুব সমাজকে কাজে লাগানোই আমার এখন প্রধান উদ্দ‍েশ্য।”

আফসানা অভি
উদ‍্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here