উদ্যোক্তা মনিকা সিনহা

আপনি কি ভ্রমণ পিপাসু? আপনি কি বনে-বাদাড়ে, পাহাড়-পর্বতে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন? হ্যাঁ, হয়তো করেন। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে আচ্ছাদিত হয়ে বিবাগী হয়েছেন শতবার কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন! এই প্রকৃতি প্রেমী উদাস ভাবটায় হতে পারে একটি উদ্যোগ, হতে পারেন একজন সফল সামাজিক উদ্যোক্তা?

বলছি নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মণিপুরি কন্যা মনিকা সিনহার কথা। প্রকৃতির সবটুকু সৌন্দর্য যেন ঢেলে দিয়েছে এমন পরিবেশেই বেড়ে ওঠেন চঞ্চলা স্বভাবের মেয়ে মনিকা।

শ্রীমঙ্গল থানা থেকে প্রায় ২৫ কি.মি. দূরে অবস্থিত ভানুবিল গ্রাম। বুদ্ধি হওয়ার পর সেই ছোট্ট বেলা থেকেই বন্ধুদের নিয়ে এ পাহাড়ে ও পাহাড়ে দলবেঁধে ঘুরে বেড়াতেন। আর মনে মনে ভাবতেন পাহাড়ে বসবাসকারীদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, হরেকরকম খাবারদাবার, পোশাক এসব যদি সকলের সাথে ভাগাভাগি করা যেতো। তার সাথে দলবদ্ধ হয়ে সারাজীবন প্রকৃতির রূপ অন্বেষণ করা যেতো তাহলেও মন্দ হতো না।

মনিকার বাবা জনাব নিরঞ্জন সিনহা মণিপুরি কমিউনিটি ট্যুরিজমের পরিচালক হওয়ায় মেয়ের মধ্যে বংশ পরম্পরায় আতিথেয়তার ইচ্ছে গুলো সংক্রামিত হয়েছে বললে ভুল হবে না। আর মনিকার পিসোমশাইয়ের কাছ থেকেও পেয়েছেন অনেকটা অনুপ্রেরণা। পিসো একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। উনি দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে জাপানী পোশাক, অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিস বানাতেন এবং সেটা জাপানেই বিক্রি করা হতো। সেই সুবাদে জাপানী অনেক পর্যটক ঘুরতে আসতেন।

মনিকার সাথে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, পর্যটকরা যখন আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার-দাবার, পোশাক, চাল-চলনে মুগ্ধ হতেন, তাদের চোখে মুখে তৃপ্তির ঢেঁকুর দেখে নিজের ছোট বেলার স্বপ্নকে যেনো ছুঁতে পারতাম। খুব ভালো লাগত। নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে মরিয়া হয়ে উঠলাম আর সুযোগ খুঁজতে থাকতাম কখন আমি নিজেই এমন করবো।

সেই ছোট্ট মনিকা সিনহা এখন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিষয়ে মাস্টার্স শেষ বর্ষে পড়ছেন। কিন্তু তার স্বপ্নের জলাঞ্জলি হতে দেননি সে। পড়াশোনার পাশাপাশি গুছিয়ে নিয়েছেন তার উদ্যোগ। বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট বোর্ড, বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশ, জেলা, উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন মনিকা তার উদ্যোগ বাস্তবায়িত করার জন্য।
অবশেষে ৩রা জুন ২০১৮ইং তারিখে আদমপুর মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্সে দশটি ঘর নিয়ে যাত্রা শুরু করে মণিপুরি কমিউনিটি ট্যুরিজম। অনেক আগের সেই ইচ্ছেটা বাস্তবায়িত হলো মণিপুরি কমিউনিটি ট্যুরিজমের মাধ্যমে। গত এক বছরে এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজারেরও বেশি দেশী-বিদেশী ট্যুরিস্ট এসেছে মনিকার মণিপুরি কমিউনিটি ট্যুরিজমে।

 

মনিকা বলেন, “আমাদের লক্ষ্য মণিপুরিদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি দেশ তথা সারা বিশ্বের মানুষের কাছে তুলে ধরা। ট্যুরিস্টদেরকে আমরা হোম স্টে-এর পাশাপাশি আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার, পোশাক (মণিপুরি শাড়ি, ওড়না, গামছা), অনুষ্ঠান (ঐতিহ্যবাহী নাচ, গান, মৃদঙ্গ নৃত্য) ইত্যাদি সেবা দিয়ে থাকি। তাছাড়াও এলাকা হেঁটে পরিভ্রমণ করিয়ে থাকি। আশেপাশের পর্যটন কেন্দ্র যেমন- রাবার বাগান, চা বাগান, লেক ইত্যাদি ভ্রমণেরও সুব্যবস্থা দিয়ে থাকি। রোমাঞ্চপ্রিয় ভ্রমণপিপাসুরা চাইলেই হামহামও ঘুরে আসতে পারে”।

এভাবেই মনিকা হয়ে ওঠে ট্যুরিজম সেক্টরের একজন সফল উদ্যোক্তা। সম্প্রতি ওয়াই গ্যাপের (Y-gap) এক প্রতিযোগিতায় সারাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করা হাজার হাজার প্রতিযোগিদের মধ্যে মনিকা প্রথম ১২তে স্থান পেয়েছেন। বাংলাদেশের সামাজিক উদ্যোক্তাদের স্বীকৃতি দিতে এবং তাদেরকে এগিয়ে নিতে ওয়াই গ্যাপ (y gap) কাজ করে চলেছে ২০১৬ সাল থেকে। এ পর্যন্ত তারা প্রায় ৭৫ জন সামাজিক উদ্যোক্তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

 

বিপ্লব আহসান
স্পেশাল করেস্পন্ডেন্ট ,উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here