বাড়ছে এসএমই বা ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ

0

২০২২ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর তিন মাসে ব্যাংকগুলো ৬০ হাজার ৬১২ কোটি টাকার ক্ষুদ্র বা এসএমই ঋণ বিতরণ করেছে। ফলে ২০২২ সাল শেষে এসএমইতে ঋণ বিতরণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮২ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা। হিসাব অনুযায়ী বিতরণ করা মোট ঋণের ২০ শতাংশ দেওয়া হয়েছে এসএমই খাতে।

২০২২ সাল শেষে ব্যাংক খাতের মাধ্যমে বিতরণ করা মোট ঋণস্থিতি ছিল ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। ঋণ বিতরণের পরিমাণ আর না বাড়লেও শুধুমাত্র এ হিসাবেই আগামী বছরের মধ্যে এসএমইতে ঋণ দিতে হবে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। ফলে ২০২৪ সালের মধ্যে এসএমই খাতে বাড়াতে হবে প্রায় ৮৭ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু ঋণ বিতরণের যে প্রবৃদ্ধি রয়েছে, তাতে ২০২৪ সালের মধ্যে এসএমইতে আরও অন্তত এক লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করতে হবে।

দেশে কর্মসংস্থান ও অর্থনীতির প্রসার ঘটাতে এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত ১৬ মার্চ এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২০২৪ সালের মধ্যে মোট ব্যাংকঋণের ২৫ শতাংশ এসএমইতে বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এমন নির্দেশনার ফলে এসএমইতে ঋণ বিতরণ আরও বাড়বে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, কোভিডকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এ ব্যবসায়ীরা যেন ক্ষতি সামলে টিকে থাকতে পারেন, সেজন্য সরকার তাদের কয়েক দফায় স্বল্পসুদে প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ দিয়েছে। কোভিড-১৯ এর প্রভাব এখন আর নেই, তাই নতুন বিনিয়োগের কারণে ঋণের পরিমাণও বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এসএমই ঋণের উপখাতে মাইক্রো ক্রেডিটে ৩৩ হাজার ৮৭৯ কোটি, ক্ষুদ্র উপখাতে এক লাখ ২৬ হাজার ৪৩৬ কোটি ও মাঝারি উপখাতে ৫৫ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো।

তথ্যমতে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এসএমই খাতে দেওয়া ঋণ পেয়েছেন ১১ লাখ ২৪ হাজার ১৯৩ জন উদ্যোক্তা। আলোচ্য সময়ে এসমএই ঋণ বিতরণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮২ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা। ২০২১ সালে এসএমই ঋণের এই স্থিতি ছিল ২ লাখ ৫২ হাজার ৮২ কোটি টাকা। এক বছরে খাতটিতে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে সিএমএসএমই খাতে যে ঋণ বিতরণ করা হবে, তার ৫০ শতাংশ দিতে হবে কুটির, অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোগে।

এছাড়াও নারী উদ্যোক্তাদের দিতে হবে এ খাতে দেওয়া মোট ঋণের ১৫ শতাংশ ঋণ। সিএমএসএমই খাতে মোট যে ঋণ দেওয়া হবে, তার মধ্যে ৪০ শতাংশ যাবে উৎপাদনশীল খাতে, সেবা খাতে ২৫ শতাংশ ও ব্যবসা খাতে ৩৫ শতাংশ। এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের কম সুদে ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য চালু করা হয়েছে একাধিক পুনঃঅর্থায়ন তহবিল। আবার এসএমই ঋণে গ্যারান্টি সুবিধাও দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর সময়ে এসএমই খাতে নতুন উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৭ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো। পল্লী এলাকার এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিতরণ করা হয় ১৭ হাজার ৪২২ কোটি টাকার ঋণ। আলোচিত সময়ে জামানতবিহীন ৮ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়।

নিয়মিত এসএমই ঋণের পাশাপাশি কোভিড-১৯ এর প্রকোপে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্রশিল্পের উদ্যোক্তাদের স্বল্পসুদে ঋণ দিতে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজের নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই প্যাকেজ থেকে প্রণোদনা প্যাকেজের প্রথম পর্যায়ের পর এবার দ্বিতীয় পর্যায়ের বিতরণ কার্যক্রম এর মধ্যে শেষ হয়েছে।

জানা যায়, গত বছরের জুলাই মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা সিএমএসএমই খাতে ২৫ হাজার কোটি টাকার রিফাইন্যান্স স্কিম গঠনের ঘোষণা দেয়। এ স্কিমের আওতায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের কাছে থেকে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদ নিতে পারবে। পাশাপাশি তারা এ স্কিমের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২ শতাংশ সুদে রিফাইন্যান্স পাবে। সে সময় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে স্কিমের আওতায় বিতরণ করা মোট ঋণের ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে সামগ্রিকভাবে বিতরণ করার শর্ত দেওয়া হয়। বাকি সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ মাঝারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করতে বলা হয়। এছাড়া ঋণগুলোর কমপক্ষে ৭০ শতাংশ উৎপাদন ও সেবা খাতে এবং সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ ব্যবসা খাতে প্রদান করা যাবে বলেও জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট থেকে এ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে উৎপাদন, সেবা ও ব্যবসা খাতের ঋণের বিভাজনের হার সাময়িক শিথিল করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

ডেস্ক রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here