উদ্যোক্তা মোসাঃ মৌসুমী আখতার

স্কুলে পড়ার সময় আমরা সবাই ছোট-বড় অনেক স্বপ্ন দেখি; বড় হয়ে কি হব? কেউ হতে চায় ডাক্তার কেউবা ইঞ্জিনিয়ার আবার অনেকেই চায় ব্যবসায়ী বা শিক্ষক। তেমনই স্বপ্ন দেখতেন মোসাঃ মৌসুমী আখতার। স্কুলে পড়ার সময় মায়ের সহচার্যে কাজ দেখতে দেখতে শিখেন দর্জির কাজ। সালোয়ার কামিজ ও বাচ্চাদের পোশাক তৈরি করতে পারতেন সপ্তম/অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে। আজ আপনাদের বলবো আমাদের সম্মানিত সফল উদ্যোক্তা মোসাঃ মৌসুমী আখতার এর স্বপ্ন গাঁথার গল্প।

২০০০ সালে মাধ্যমিক সম্পন্ন করার কিছুদিন পর বাল্য বিবাহ  বন্ধনে আবদ্ধ হন। বছর যেতেই মা হয়ে সংসার জীবনে মনোনিবেশ করতে গিয়ে  পড়াশোনা  করা  আর হয়ে ওঠেনি। বিয়ের পাঁচ বছর পর স্বামীর চাকুরীর  পাশাপাশি  নিজের বাসাতেই মায়ের দেওয়া একটি সেলাই মেশিন ও নগদ সাত শত টাকা দিয়ে দর্জির কাজ শুরু করলেন। আশপাশ থেকে বেশ সাড়া পেলেন এবং শুরু হয়ে গেল তাঁর নিজের কর্মজীবন।

এভাবে কাজ করতে করতে কেটে গেল  আরও পাঁচ বছর। বিয়ের ঠিক দশ বছর পর স্বামীর চাকুরী চলে যাওয়ায় সংসার নিয়ে একটু বিপাকে পড়েন মৌসুমী। তখন থেকেই ঠিক করলেন ব্যবসাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, হয়ে ওঠেন আরও উদ্যমী।

২০১৪ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর হতে তিন মাসব্যাপী পর্যায়ক্রমে প্যাটার্ন মেকিং, ড্রেস মেকিং ও ব্লক বাটিক এ তিনটি কোর্সের এর উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে মায়ের কাছ থেকে পঞ্চাশ  হাজার ও স্বামীর কাছ থেকে দশ হাজার টাকা নিয়ে নিজেই মহল্লার কিছু নারীকর্মী নিয়ে পণ্য তৈরির কাজ শুরু করেন।

কাজে পারদর্শী হয়ে ওঠার পাশাপাশি তাঁর প্রচার ও প্রসার হতে লাগলো। এরপর বিভিন্ন বুটিক হাউস থেকে কাজের অর্ডার নিয়ে এসে কাজ করতে লাগলেন। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে কর্মীদের জন্য কিছু সমস্যায় পড়লেন। কাজের মানের ও ডিজাইনের সমস্যা। প্রতিনিয়ত বুটিক হাউসগুলো থেকে অভিযোগের পাশাপাশি নানা ধরনের কটূক্তি শুনতে লাগলেন। তখন তিনি ঠিক করলেন না এবার একা কিছু করবো।

২০১৫ সালে ‘পদ্মপাতা বুটিক হাউস’ নামে ট্রেডলাইসেন্স করে ব্যবসা শুরু করলেন। স্বামীর পরিবার থেকে কিছু বাধা থাকলেও স্বামী ও মায়ের উৎসাহ ছিল পুরোপুরি।

নিজের এলাকায় ও আশেপাশের বিভিন্ন গ্রামে প্রায় একশত পঞ্চাশ জন কর্মী নিয়ে কাজ করে চলেছেন। তিনি মূলত সুতার কাজের উপর ওয়ান-পিস, টু-পিস, থ্রি-পিস এবং সিল্কের উপর হ্যান্ডপ্রিন্ট শাড়ী ও কুশন কভার, ছেলেদের কোটি ইত্যাদি তৈরী  করে থাকেন।

বর্তমানে মৌসুমী আখতারের মূলধন প্রায় ৩/৪ লক্ষ টাকা। ভবিষ্যতে  বড় পরিসরে শো-রুম দিতে এবং গ্রামে বিশাল একটি কারখানা তৈরী করতে চান এই উদ্যোক্তা। যেখানে অনেক নারীকর্মীর কর্মসংস্থান হবে।

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here