উদ্যোক্তা ও তার কর্মীগণ

২টি সেলাই মেশিন, অনার্স পড়ুয়া এক তরুণীর জীবনকে আমূল বদলে দিতে পারে তা ভাবা কারও পক্ষে সম্ভব নয়, যদি তিনি না হন একজন উদ্যোক্তা।

এস এস সি দিয়ে রেজাল্টের জন্য বসে থাকার মত অলস আমি নই বললেন নিলুফা ইয়াসমিন। ঐ সময় টাতেই ড্রেসমেকিং এর কোর্স করে ফেলতে হবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে।

বাবা ভীষণ কড়া। ফরম পূরণ করে দেবার টাকা বা পাসপোর্ট সাইজ ছবি তোলার যে খরচ সেটা চাইবার সাহস নীলার হয়নি বাবার কাছ থেকে। নিজের উৎসাহের কথা জানাতেই এক আত্মীয় ভাবী ভর্তি করিয়ে দিলেন, পরেরটা ইতিহাস…

কর্মরত কর্মীগণ

৬ মাস হেঁটে হেঁটে নিয়ে কাজ করলেন নীলুফা। ভীষণ ভালো রেজাল্ট আনলো। ঢাকার সাভারে পাঠানো হলো উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য। প্রশিক্ষণ শেষ হলে এলাকায় অনার্স পড়ুয়া নীলুফা একটি শোরুম করতে চাইলেন।

বাবার ভয়ে এবং সামাজিক অবস্থায় তখন একজন তরুণীর দোকান বা শো রুম করার কথা ভাবাও দুঃস্বপ্নের মত।

বাবার কাছে নিলুফার আকুতি জানান “দোকান না দিন- একটি দরজা দিন”।

সেই একটি দরজায় জীবনের এক মহা দরজা হিসেবে ভাগ্য লিপিতে ধরা দেয় নীলুফার জীবনে।

২০০১ সাল। শেখ নীলার সংক্ষিপ্ত নাম এস. এন.। সেই এস. এন. নাম দিয়েই তৈরি হলো এস এন টেইলার। ছোট্ট ছোট্ট করে অর্ডার আসে, টাকা ছাড়াই অনেকের কাজ করে দিয়েছেন শুধু নিজের কাজকে চেনাবার জন্য। দোয়া পাবার জন্য। দিন বদলালো, ৩ বছরের মধ্যে নীলুফা ইয়াসমিন নীলার অর্ডারে মেশিনে সুঁই বসলো ১৪টি। ঘরে বসেই সব অর্ডার নিতেন, কাজ করতেন নীলা।

উদ্যোক্তা ও তার পণ্যের ভুবন

২০০৪ সালে, এস. এন. ফ্যাশন ব্যবসা রেজিস্ট্রেশন হলো নীলার। ঢাকা থেকে অর্ডার আসলো ৫০ পিস। অর্ডার আসতেই থাকে হাজার হাজার পিসের। কিন্তু হাজার হাজার পিস তৈরি করবার মত সক্ষমতা তখনো নীলা অর্জন করেননি। অর্ডার গুলো সব তুলে দেবার মত জনবল- একটি এনজিও আশ্রয় তার পাশে এসে দাঁড়ালেন। তারা ৫ বছরের জন্য যৌথভাবে কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হলেন নীলার সাথে। দক্ষ কর্মী তৈরি করবার জন্য নীলা নিজেই ৪ জন ট্রেইনারকে তৈরি করলেন মানসম্মত পোশাক বা পণ্য তৈরি করবার জন্য। তৈরি হলো কর্মী।

জেগে উঠলো গ্রামের পর গ্রাম- তানোর, মুন্ডুমালা, আমনুরা, বাঘা, চারঘাট এমন অনেক গ্রাম জেগে উঠেছে নীলার কর্ম দিয়ে কর্মী তৈরিতে।

কর্মব্যস্ত কর্মী

ব্লক প্রিন্টিং, ডিজাইন ট্রেসিং, সুইং ফ্যাক্টরি তিনটি আলাদা ফ্যাক্টরিতে ৮৩ জন কর্মী কাজ করছেন।

একটি দরজা আজ ৪টি ফ্যাক্টরির। মাত্র দুটি মেশিন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন আজ মেশিন ৬৫ টি, ৩৫ টি ক্লায়েন্ট, ৮৩ জন নিয়মিত কর্মী এবং ৩ হাজারেরও ওপর কর্মীর আত্মকর্মসংস্থান নিয়ে আজ সফলতা কথা বলছে তরুণ উদ্যোক্তা নীলুফা ইয়াসমিন নীলা।

খুরশিদা পারভীন সুমী 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here