ছোটবেলা থেকেই সেলাই এর প্রতি অসম্ভব ঝোঁক ছিল নাসরীনের। সেই সেলাইয়ের নেশাকে পেশাতে রূপ দিতেই ব্যবসার উদ্যোগ নেন। অবশ্য ব্যবসা করার পর দেড় বছর পারিপার্শ্বিক কারণে ব্যবসা বন্ধ ছিল। তবুও ব্যবসা বন্ধ করেননি। নতুন করে শুরু করে কর্মসংস্থান করেছেন কিছু মানুষের।
পেয়েছিলেন সরকারী চাকরিও কিন্তু স্বামী চাকরি করতে না দেওযায় আর হয়ে ওঠেনি চাকরি করা৷ তবে তিনি হতাশাগ্রস্ত নন চাকরি করতে না পেরে, বরং মনে করেন যা হয়েছে ভালো হয়েছে। চাকরি হয়তো নাসরীনের মনের খোরাক মেটাতে পারতো না, তাইতো ব্যবসাকে আপন করে নিয়ে সামনের দিকে পা বাড়িয়েছেন কলি।
নাসরীন রেজা কলি ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং-এ এম.বি.এ করেছেন ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি), কুষ্টিয়া থেকে।
২০১৬ সালে ১৩০০ টাকা পুঁজি আর কিছু বাকিতে পণ্য নিয়ে শুরু করেছিলেন শৈলী বেবি হ্যাম্পার নাম দিয়ে ব্যবসা। যার ফেসবুক পেজ ( https://www.facebook.com/shoily09)। বর্তমানে নাসরীন রেজা কলির মূলধন ৩৫০০০ টাকা।
শৈলী বেবি হ্যাম্পারে পাওয়া যায় মূলত সদ্যজাত বাচ্চাদের জন্য(০-৬ মাস বয়সী) নকশীকাঁথা, ন্যাপী, নিমা, বালিশের কভার, ফিডারের কভার ও জুতা। যার সর্বোচ্চ মূল্য ৩৫০ টাকা এবং সর্বনিম্ন মূল্য ৩৫ টাকা।
নাসরীন উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘যেহেতু আমি ঢাকার বাইরের ব্যবসায়ী তাই অনেকেই সেটা বুঝতে চায়না। এছাড়াও নারী ব্যবসায়ী হবার জন্য অনেক অনলাইন হ্যারাসমেন্টের স্বীকার ও হতে হয়েছে। ছোট বাচ্চা নিয়ে মাঝে মাঝে অসুবিধা হয়। কিন্তু তাতে আমি পিছিয়ে যাইনি বরং একা হাতে সংসার, বাচ্চা এবং ব্যবসা সমান তালে সামাল দিচ্ছি।
সব রকম পরিস্থিতিতে পরিবারের সাহায্য পেয়েছেন নাসরীন রেজা কলি। বিশেষ করে নাসরীনের স্বামী তাকে কাছ থেকে সবসময় বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সাহস জুগিয়েছেন।
ভবিষ্যতে বাচ্চাদের সাথে সাথে মায়েদের জন্যও কিছু পণ্য তৈরী করবেন, সেই সাথে শৈলী বেবি হ্যাম্পারকে একটা ব্রান্ড এ রূপান্তর করতে চান বলে জানান নাসরীন।
ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছেন। নিজের তৈরি পণ্য সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু দেশেই নয় দেশের বাইরেও পৌঁছে যাচ্ছে শৈলী বেবি হ্যাম্পারের পণ্য।
নাসরীন রেজা কলি নিজের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। সব সময় চিন্তা করতেন বাচ্চার পাশে থেকেই কিছু করতে হবে। তিনি মনে করেন, ব্যবসা যতই ছোট হোক না কেন সেখানে নিজের সৃজনশীলতা স্বাধীনভাবে প্রকাশ করা যায়। সেই সৃজনশীলতাকে পুঁজি করে একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে শুরু করেছিলেন অনলাইন ব্যবসা। তবে নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন নাসরীন।
বর্তমানে নাসরীনের কর্মী সংখ্যা ৬ জন। সকলেই খুব পরিশ্রমী ও কাজকে ভালবাসে বলে জানান নাসরীন। নাসরীন নিজে যেমন স্বাধীন নারী হয়ে বাঁচতে ভালবাসেন। তেমনি করেই নারী কর্মীদেরও স্বাধীন ভাবে জীবিকা নির্বাহের জন্যই তিনি নারী কর্মী দিয়ে কাজ করান।
ব্যবসা করার জন্য উদ্যোগ নিতে কোটি কোটি টাকার দরকার হয় না । যেমনটা নাসরীনের মতো সাধারণ মানুষেরও দরকার হয়নি কিন্তু নাসরীনের ছিল স্বপ্ন আর ইচ্ছে শক্তি। আর সেই স্বপ্ন ও ইচ্ছে শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে হয়েছেন সফল নারী ব্যবসায়ী।
খাদিজা খাতুন স্বপ্না