উদ্যোক্তা- শহিদুল হক হায়দারি ও তাঁর সহধর্মিনী মোসাঃ নূর রাফিয়া খানম

আচার কখনোই আচার মানে না, তাই সে অবলুপ্তপ্রায় প্রাণীর মতো সভ্যতার দীর্ঘকাল ব্যাপী ঘড়িতে কিঞ্চিতও আছাড় না খেয়ে কাঁচের জারে নিজ অস্তিত্বে, সর্বদা সত্য প্রমাণিত করে চলেছে। হয়তো ঢাকা শহরের গগণচুম্বী অট্টালিকার আড়ালে সেসব জারকে রোদের আলো আপন জনের মতো আলিঙ্গন করতে পারে না তবে সকল পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার এক প্রকার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে তার কারণ আচার জন্মগত ভাবে টক ধর্মে দীক্ষিত, আর এই মায়ার জগতে বিজ্ঞান ভিত্তিক নিয়ম অনুসারে টকে নিমজ্জিত সকল বস্তু সম ধর্মে বশীভূত।

ভাত, রুটি, পরোটা- এমন অনেক কিছুর সঙ্গী হিসাবে এই আচার মানুষের ক্ষণিক বিলাসে নিয়োজিত। যুগ যুগ ধরে মানুষ নিজের অজান্তে দীর্ঘায়ু বিশিষ্ট এই সংরক্ষিত পদার্থটির গবেষণা করে চলেছে কখনো স্বাদেন্দ্রিয়র তৃপ্তিতে আবার কখনো বা রোজগারের আশায়।

বিরতিতে দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের দুয়ারে, চারমাথা বা সাত মাথার মোড়ের তপ্ত দুপুর কিংবা দিনের গোধূলি আলোর শেষ বিকেলের সমাপ্তিতে শান্ত বিকেলে পাখিদের ঘরে ফেরার সময়কালে, প্রেমময় উদ্যানে আচারওয়ালাদের উপস্থাপনা এখনও বিরাজমান।

তবে নিপুণতায় পরিপূর্ণ কর্মচারী তথা আচার উৎপাদন এবং সরবরাহকারীদেরও আচারওয়ালা পদবীতে ভূষিত করলে খুব একটা ভুল হয় না। রাজশাহীর কানসাট এর কলাবাড়ি গ্রামের, শিবগঞ্জ উপজেলার চাঁপাইনবাবগঞ্জে আছে এমনই এক আচারউদ্যোক্তা। ধনরত্নে পরিপূর্ণ রাজার কোষাগারের ভিন্ন ভিন্ন কক্ষে যেমন নির্দিষ্ট ভিন্ন ভিন্ন রত্নে পরিপূর্ণ থাকে ঠিক তেমনই “চাঁপাই ম্যাংগো-হিমসাগর এগ্রোর ” আচার ভাণ্ডারে রয়েছে ২২ পদের ভিন্ন আচারের বাহার। তাঁর অধীনে স্বল্প রোজগেরে কর্মচারীর সংখ্যা বর্তমানে ২০জন।

আমি আজকে যাদেরকে নিয়ে গল্প লিখতে চলেছি তাদের নামকরণটা- ” ম্যাংগো পরিবার” বেশি ঠিক হবে বলেই আমার মনে হয়েছে, তাই এই গল্পের মুখ্য চরিত্র অনুযায়ী আজকে আমাদের উদ্যোক্তার গল্পের নামকরণ ” ম্যাংগো পরিবার” দেওয়াটা সমীচীন বলে মনে হ’ল।

“চাঁপাই_ম্যাংগো” – একটি ফ্যামিলি বেইজ প্রতিষ্ঠান পরিবারের সবাই এর উদ্যেক্তা। ৩ ভাইসহ পুরো পরিবার এই প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত।। আমরা নিজেরাই মালিক নিজেরাই ওয়ার্কার। গ্রাহকদের নিকট মানসম্মত খাবার তুলে দেওয়ায় আমাদের অঙ্গীকার।

বাজারে প্রচলিত ” চাঁপাই ম্যাংগো ” এর পণ্য গুলো হচ্ছে -গার্ডেন ফ্রেশ আম, আমের আচার, জলপাই আচার, চালতা আচার, রসুন আচার, তেঁতুল আচারসহ ২২ পদের আচার, আমস্বত্ত, আমচূর, শরিষার তৈল, খাবার মশলা ইত্যাদি খাঁটি ভোগ্য পণ্য ইত্যাদি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের মেয়েরা জন্মগতভাবে আমের আচার তৈরীতে দক্ষ হয়, কথা প্রসঙ্গে উদ্যোক্তা শহিদুল বলেন – শাশুড়ি, আমার আম্মা এবং আমার অর্ধাঙ্গিনী তিন জনেই আচার তৈরীতে দক্ষ।। তাদের মাধ্যমে গ্রামের গৃহবধূদের ট্রেনিং দিয়ে আমরা একটা টিম তৈরী করে নিয়েছি। যার ফলে আমাদের আচারের মান , স্বাদ বৈচিত্র্য, আচারের মশলার ভিন্নতার কারণে এর আসল স্বাদ থাকে অকৃত্রিম। কড়াই থেকে নামাবার পূর্বেই আমাদের আচার বিক্রি হয়ে যায়।। আমরা আমাদের সেল নিয়েও সন্তুষ্ট।

উদ্যোক্তা উদ্যেক্তা পরিবারের সদস্য মোসাঃ নূর রাফিয়া খানম রাজশাহী বিসিক কর্তৃক ৩ মাসের একটি ফুড প্রসেসিং ট্রেনিং প্রোগ্রামে অংশ সম্পন্ন করেছেন। ফুড প্রসেসিং সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান না থাকলে ‘নিরাপদ খাবার’ তৈরী সম্ভবপর হয় না। ‘নিরাপদ খাদ্য, নিরাপদ বাংলাদেশ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে “চাঁপাই_ম্যাংগো”। চাঁপাই ম্যাংগোর আচারে কখনো স্যাকারিন ব্যাবহার করা হয় না। অতএব চাঁপাই ম্যাংগোর আচার খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ভয় নেই বলে জানালেন এর উদ্যোক্তা।

“চাঁপাইম্যাংগো” দেশের কোথায় বাজারজাত করা হয় জিজ্ঞেস করলে উদ্যোক্তা বলেন – “ঢাকার শ্যামলি আদাবর ‘বায়তুল আমান’ হাউজিং এর মেইন রাস্তা হতে ৭নং এবং ৮ নং রাস্তায় প্রবেশের মাঝামাঝি জায়গায় চাঁপাইম্যাংগো’-এর ভ্রাম্যমান বিক্রয়কেন্দ্রটি শুক্রবার বাদে সপ্তাহের ৬দিন সেখানে অবস্থান করে। মোহম্মদপুর, আদাবর শ্যামলীর ক্রেতারা হোমডেলিভারির সুবিধা গ্রহণ করে থাকে।
এছাড়া ঢাকার বাইরে সিলেট ,বগুড়া ,চিটাগং ,শহরে বিভিন্ন নামকরা দোকানে পাওয়া চাঁপাই ম্যাংগো এর পণ্য যায়”।

ঢাকার গ্রাহকরা মোহম্মদপুর, শ্যামলি, আদাবরের বাসিন্দা হলে হোম ডেলিভারির পণ্য নিতে পারবেন, হোম ডেলিভারি চার্জ ৫০/- টাকা।। এছাড়া কুরিয়ারের মাধ্যমে সারা দেশে চাঁপাই ম্যাংগো আচারগুলো বিক্রয় করা হয়।

উদ্যোক্তা শহিদুল হক হায়দারি ও তাঁর সহধর্মিনী মোসাঃ নূর রাফিয়া খানম তাঁরা আজকে ১০ বছর ধরে এই চাঁপাই ম্যাংগোর ব্যবসা করছেন। ব্যবসার শুরুতে ৫০,০০০ হাজার থেকে ১,০০,০০০ টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন।প্রথম দিকে তাঁরা তাদের আম বাগান থেকে আম বিক্রি করতেন , পরবর্তীতে আম ব্যবসায় ধস নামার কারণে তাঁরা পাশপাশি আচারের ব্যবসা শুরু করেন। আচার ব্যবসায় সফলতা পাবার পরতাদের আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

করোনা মহামারীর আগে প্রতি মাসে ৪ লক্ষ টাকা করে সেল হতো, করোনা পরবর্তীতে এখন প্রতি মাসে ২লক্ষ টাকা থেকে ৩ লক্ষ টাকার মতো সেল হয় প্রতিমাসে। চাঁপাই ম্যাংগো আগামী ১ বছরে ১ কোটি টাকা সেল এর লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করেছে। যা এই প্রতিষ্ঠান এর অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন উদ্যোক্তাদ্বয়। বর্তমানে চাঁপাই ম্যাংগোর মূলধন ২০ লক্ষ টাকা।

কানসাট কলাবাড়ি গ্রামে নিজস্ব ১৫ কাঠা জায়গার উপর “চাঁপাই ম্যাংগো -হিমসাগর এগ্রো” সমস্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। চাঁপাই ম্যাংগো তাঁর কার্যক্রম সাড়া দেশব্যাপী ৪ ভাবে বিক্রয় কার্যক্রম করে থাকে- ডিরেক্ট সেল, কুরিয়ার সেল, রিসেলার সেল এবং এলাকা ভিত্তিক দোকান সেল এর মাধ্যমে।

নতুন উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে উদ্যোক্তাদ্বয় বলেন – “আমকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠুক নতুন নতুন উদ্যোক্তা, আমের বহুমূখী ব্যবহারের মাধ্যমে আমার মতো ক্ষুদ্র আম চাষীরা স্বাবলম্বী হোক এই প্রত্যাশা করেন। কারণ এতো পরিশ্রম তবুও এর মাঝে আনন্দ রয়েছে। কর্মের মধ্যেই রয়েছে সুখ। স্বপ্ন দেখি দেশ সেরা আচারের ব্রান্ড হবার স্বপ্ন ইনশাআল্লাহ একদিন পূরণ হবে।

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here