বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া পৌরসভার সাবিহা সবনম কাজ করছেন বাঁশপণ্য নিয়ে। জেলার এই আদি ঐতিহ্য ছড়িয়ে দিচ্ছেন দেশব্যাপী। তবে তার জন্য উদ্যোক্তাকে প্রতিনিয়ত পাড়ি দিতে হয় মাইলের পর মাইল। নিজের উদ্যোগের পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানে পার্টটাইম চাকরি করছেন সাবিহা। সব মিলিয়ে উদ্যোক্তাকে বেশ একটা কঠিন লড়াই-ই করতে হয়।
বাঁশের পর্দা, জুয়েলারি বক্স, ঝুড়ি, হাতপাখা, সোরপশ (ঢাকনা), ডালা, কুলা, টেবিলম্যাটসহ নানারকম বাঁশপণ্যের সমাহার রয়েছে তার উদ্যোগ ‘মিরিতিনা’য়। ২০২০ সালে মাত্র পাঁচশ টাকা মূলধন নিয়ে যাত্রা করেছিলেন। দুই বছরের মধ্যে ৩০টি জেলায় ‘মিরিতিনা’র পণ্য পৌঁছে দিয়েছেন সাবিহা। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়াসহ বেশকয়েকটি দেশে উপহার হিসেবেও গেছে ‘মিরিতিনা’র বাহারি পণ্য।
একসময় বগুড়াতে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের ব্যাপক চাহিদা ছিল। কয়েক দশক আগেও বগুড়ার বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হতো এ অঞ্চলের কারিগরদের তৈরি বাঁশের পণ্য। বর্তমানে তা ফিকে হয়ে এসেছে, তাই এ কাজের সঙ্গে যুক্ত অনেক কারিগর অন্য পেশামুখী হচ্ছেন। তবুও অভাব-অনটন সঙ্গী করে কয়েকটি পরিবার আজও পৈতৃক পেশাটি ধরে রেখেছেন। এমন কিছু অভিজ্ঞ কারিগরের কাছ থেকে ‘মিরিতিনা’র জন্য বাঁশের পণ্য তৈরি করিয়ে নেন উদ্যোক্তা সাবিহা সবনম। সেজন্য নিজ বাড়ি থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের পথে কখনও তিন কিলোমিটার, কখনও বা ২০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে কারিগরদের কাছে পৌঁছাতে হয় তাকে। ‘মিরিতিনা’র পণ্যগুলো তৈরি করতে তল্লার বাঁশ বেশি ব্যবহার হয়, যা সংগ্রহ করতে ওই এলাকাগুলোতে খুব একটা ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয় না সাবিহার সহযোদ্ধাদের।
‘মিরিতিনা’র বেশিরভাগ পণ্যই তৈরি হয় কাস্টমাইজ করে। ক্রেতারা যেমন চান তেমনভাবেই একেকটি পণ্য তৈরি করে নেন উদ্যোক্তা। ‘মিরিতিনা’র বাঁশের পর্দা/সড়কির চাহিদা ব্যাপক। এখন পর্যন্ত ১০০টিরও বেশি পর্দা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি।
উদ্যোক্তা বার্তাকে তিনি বলেন “এই পর্দাগুলোর চাহিদা শহরের দিকে বেশি। যারা নিজের ঘর, ব্যালকনি বা ড্রয়িংরুমে আধুনিকতার ছোঁয়া রাখতে পছন্দ করেন, তারাই মূলত বাঁশের পর্দাগুলো নিয়ে থাকেন।”
তার উদ্যোগে পরিবারের সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবিহা সবনম বলেন: শুরুর দিকে পরিবারের সকলে সাপোর্ট না করলেও আলহামদুলিল্লাহ এখন সকলে সাপোর্ট করেন। বিশেষ করে আমার ছোট খালা যিনি শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমার পাশে রয়েছেন। ‘মিরিতিনা’র কাজে তার অবদান অনেক। আমি কাজটি পারবো কি পারবো না এটি ভেবে পরিবার শুরুর দিকে পাশে না থাকলেও এখন যখন তারা দেখছেন আমি এতো কম সময়ে দেশের অসংখ্য জেলা, উপজেলায় পণ্য পাঠাচ্ছি; তখন তারা আমার প্রতি সেই আস্থা পেয়েছেন, আজ তারাও আমার পাশে আছেন।
পাঁচশ টাকার ‘মিরিতিনা’য় আজ ১২ জন সহযোদ্ধার কর্মসংস্থান হয়েছে। চল্লিশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হলেও থেমে থাকেননি উদ্যমী এবং স্বপ্নবাজ এই তরুণী। ‘মিরিতিনা’র নিজস্ব কারখানা গড়ার লক্ষ্যে সামনে এগিয়ে চলেছেন দুর্বার গতিতে।
তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা,রাজশাহী