বংশ পরম্পরায় ১০০ বছরের উদ্যোক্তা তারা

0

অন্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হলেও বর্ষার আগমনে নড়াইলে নৌকার বেচা-কেনা এখন জমজমাট। সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়নের রামসিদ্ধি ও ডহর রামসিদ্ধি গ্রাম দুটির ১৫-১৬টি পরিবার শতবর্ষ ধরে নৌকা তৈরির কাজে নিয়োজিত। তাদের সঙ্গে কারিগর ও সহকারি মিলে প্রায় ৬০ জন নৌকা তৈরির কাজে সরাসরি জড়িত আছেন।

পৈত্রিক সূত্রে দীর্ঘদিন যাবত কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি করে তারা বিক্রি করে থাকেন। এছাড়া তুলারামপুর হাট ডুঙ্গা বিক্রির জন্য এলাকায় বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে।

ভদ্রবিলা ইউনিয়নের রামসিদ্ধি ও ডহর রামসিদ্ধি এলাকায় বর্ষা মৌসুমে প্রতি বুধবার বসে নৌকার হাট। সকাল ৬টায় শুরু হয়ে বেচা-কেনা চলে ১০টা পর্যন্ত। প্রতি হাটে গড়ে ৭০ থেকে ৮০টি নৌকা বিক্রি হয়। আকারভেদে প্রতিটি নৌকা সাড়ে চার হাজার থেকে ছয় হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।

জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা আসেন নৌকা কিনতে। এছাড়া নৌকা ব্যবসায়ীরা এখান থেকে নৌকা কিনে নিয়ে আশপাশের জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিক্রি করে থাকেন।

এ দুটি গ্রামের নৌকা তৈরির প্রতিটি কারখানায় তিন থেকে পাঁচজন কারিগর ও সহকারি কাজ করেন। শনি থেকে মঙ্গলবার এ পাঁচদিনে একেকটি কারখানায় সাধারণ মানের পাঁচ থেকে ছয়টি নৌকা তৈরি হয়। অনেক সময় ক্রেতারা সরাসরি অর্ডার দিয়ে তাদের চাহিদামতো নৌকা তৈরি করিয়ে নেন। সে ক্ষেত্রে নৌকার সাইজ ও কাঠের ধরনের ওপর নির্ভর করে একটি নৌকা বানাতে ৫ থেকে ১০ দিন সময় লেগে যায়। দাম পড়ে ১৫ হাজার থেকে শুরু করে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

বর্ষাকালের দুই মাস আগে থেকে শুরু করে ভাদ্র-আশ্বিন মাস পর্যন্ত চলে নৌকা তৈরির কাজ। তবে এবার বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি কম হওয়ায় কারিগররা অন্যবারের তুলনায় দেরিতে নৌকা তৈরি শুরু করেছেন।

নৌকা তৈরির কারিগর রামসিদ্ধি গ্রামের প্রসেনজিৎ বিশ্বাস বলেন, একশ’ বছর আগে থেকে আমাদের পরিবার নৌকা বানিয়ে আসছে। তাদের কাছ থেকে আমিও নৌকা তৈরির কাজ শিখেছি। ছাত্রাবস্থায় এ কাজ করতাম। স্নাতক পাস করার পরও পৈত্রিক পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছি।

নৌকা তৈরির কারখানার মালিক ডহর রামসিদ্ধি গ্রামের হরেন বিশ্বাস জানান, তিনি গত বছরও প্রতি হাটে সাত থেকে আটটি নৌকা বিক্রি করেছেন। এবার বিলে বেশি পানি না থাকায় চার থেকে পাঁচটি নৌকা বিক্রি করতে পারছেন। এছাড়া কাঠের দাম বৃদ্ধি ও এ কাজে ব্যবহৃত লোহার পাতামের (নৌকা তৈরিতে প্রয়োজনীয় উপকরণ) দাম বাড়ায় নৌকার দামও বেড়ে গেছে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন,একজন কারিগরের দৈনিক মজুরি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আর সহকারির মজুরি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।

জেলার কালিয়া উপজেলার বুড়িখালি গ্রামের নৌকা ব্যবসায়ী সৈয়দ মোল্যা বলেন, আমি গত ১০ বছর যাবত এখান থেকে নৌকা পাইকারি দরে কিনে নিয়ে গাজিরহাটসহ আশেপাশের এলাকায় বিক্রি করে থাকি। এলাকায় নিয়ে বিক্রি করে আমার নৌকা প্রতি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা লাভ হয়।

লোহাগড়া উপজেলার এড়েন্দা গ্রামের ক্রেতা আবুল হোসেন জানান, ধান কাটা, শাপলা তোলা, ঘাসকাটা, মাছধরা এবং ঘের থেকে সবজি কেটে আনতে নৌকার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।এখানকার নৌকার মান ভালো থাকায় এবং সাশ্রয়ী মূল্যে কিনতে পারায় জেলার বেশিরভাগ লোকজন এখান থেকে নৌকা কিনে থাকেন।

নড়াইল বিসিক-এর উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো: সোলায়মান হোসেন বলেন, নৌকা তৈরির কারিগরদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে। নৌকা তৈরির কারিগরদের দক্ষতা বৃদ্ধিসহ এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য যা যা করা দরকার, তা করা হবে বলে তিনি জানান।

ডেস্ক রিপোর্ট,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here