বরিশাল বিএম কলেজ থেকে সোস্যালজিতে অনার্স এবং মাস্টার্স কমপ্লিট করেন আমিনা ফেরদৌস নীলা। অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে পড়াকালীন সময় কিছুদিন শিক্ষকতা করেন একটি স্কুলে। বিয়ের পর চলে এলেন ঢাকায়।
নিউজ রুম এডিটর হিসেবে কিছুদিন কাজ করলেন গণমাধ্যমে। প্রায় বছরখানেক কাজ করলেন সেখানে। কিন্তু চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করা নীলা শুরু থেকেই বিশ্বাস করতেন নারী মুক্তির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো নারীর নিজের অর্থনৈতিক মুক্তি, অর্থনৈতিক উপার্জন এবং সেই সাথে উপার্জন ক্ষমতা।
সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স যখন প্রায় শেষের দিকে তখন মানষিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন নীলা।
তারপর ভাবলেন চাকরির চিন্তা আর নয়, দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করলেন, সিদ্ধান্ত নিলেন ব্যবসা করবেন, ব্যবসা করেই স্বাবলম্বী হবেন। পাশাপাশি এটাও সিদ্ধান্ত নিলেন যে, গতানুগতিক এমন কোনো ব্যবসা তিনি পরিচালনা করবেন না যা সচারচর বিভিন্ন নারীকে করতে দেখা যায়।
নিজের বিয়েতে উপহার হিসেবে যা টাকা পেয়েছিলেন, সবমিলিয়ে নীলার হাতে ছিলো ৮ লক্ষ টাকা। সেই টাকায় যাত্রা শুরু করেন একটি ট্র্যাভেল এজেন্সির। বন্ধু মহলে ট্র্যাভেল এজেন্সিতে চাকরি করতেন যারা, তাদের কাছ থেকে খোঁজখবর নিলেন। জানলেন ট্র্যাভেল এজেন্সির ভেতর ও বাহির।
সি অ্যান্ড ট্যুর অপারেশন্সের সব বইগুলো বাসায় থেকে নিজে পড়ে এই জগতের নানা খুঁটিনাটি বিষয়গুলোকে আত্মস্থ করলেন। ট্র্যাভেল এজেন্সি অ্যান্ড ট্যুর অপারেশন ফাইনালাইজড হলো। কাকরাইল মোড়ে আঞ্জুমান মফিদুর ইসলাম রোডে আজমেরি ম্যানশনে মাত্র ৪০০ স্কয়ার ফিটের একটি অফিসে নিজের কর্মের স্বপ্নভুবন সাজালেন উদ্যোক্তা আমিনা ফেরদৌস নীলা।
স্বামী সরকারী চাকরিজীবী এ কে এম শাহীনুল হক, ভীষণ উৎসাহ নিয়ে স্ত্রীর পাশে দাঁড়ালেন। তিনি বললেন, তুমি পারবেই এবং তুমি সফল হবেই, এই উৎসাহটি তাকে বহুদূর এগিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখিয়েছে। একটি ছোট্ট স্বপ্ন, দুটি কম্পিউটার এবং একজন কর্মী নিয়ে যাত্রা শুরু হলো ২০১৬ সালের এপ্রিলে।
ব্যবসার চাকা সবার সমান গতিতে ঘোরে না, তার প্রথম প্যাকেজেই ৬৪ জনের একটি কর্পোরেট ট্যুরের অর্ডার পেলেন, ১৮ লক্ষ টাকার একটি ডিল জানান দিয়েছিলো সম্ভাবনা আছে এই সেক্টরে। প্রথম একজন ক্লায়েন্টের একটি আন্তর্জাতিক প্যাকেজই বলে দেয় আমি ব্যবসায় সফল হবোই।
বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়সজনের মাঝেও সবাই এখন টিকিট কিনতে কিংবা বিদেশ ট্যুরের ভিসা প্রসেসিং, হোটেল বুকিং, ট্যুর প্ল্যান এবং কমিউনিকেশনের সকল দায়িত্ব ধীরে ধীরে দিতে থাকেন নীলার কাছে, আসতে থাকেন তার কাছে জানবার জন্য, বুকিং দেবার জন্য। ভীষণ ভালো সাড়া মিললো, প্রতিদিন একটি দুটি, পাঁচটি, দশটি, এভাবে ‘ফেমাস এভিয়েশন’ উদ্যোক্তার স্বপ্ন ধীরে ধীরে তার পরিসরে ফেমাস হয়ে উঠলো যেনো।
ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন আয়াটার এজেন্ট হলেন নীলা। অ্যাটাব সদস্য হলেন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্র্যাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ। ভীষণ কঠিন একটা সময়ে নিজের অক্লান্ত পরিশ্রম, ব্যবহার এবং ফাস্টেস্ট সার্ভিস উইথ কেয়ার এভিয়েশন জগতে নিজের নামকে খুব দ্রুত চিনিয়ে দেন তরুণ উদ্যোক্তা নীলা।
৪০টিরও উপরে কর্পোরেট সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং ৫০০ এর ওপরে ব্যক্তিগতভাবে বিদেশ ভ্রমণে যারা সার্বক্ষণিক যাওয়া আসার মাঝে থাকেন, সব ধরনের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন গ্রাহকদের আজ উদ্যোক্তা নীলার ‘ফেমাস এভিয়েশন’।
বর্তমানে উদ্যোক্তার সেলস বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিনগুণ। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের সাথে প্যাসেঞ্জার সেলস এজেন্ট হিসেবে যুক্ত হয়েছেন এবং তার স্বপ্ন ওমরা হজ্জ এর লাইসেন্স করার জন্যে আবেদন করেছেন। বিভিন্ন দেশের উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা প্রদান করার উদ্দেশ্যে ‘হেলথ ফাস্ট বাংলাদেশ লিমিটেড’ এ মেডিক্যাল ট্যুরসিম কনসালটেন্ট এবং ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছেন নীলা ফেরদৌস।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, “আমি অনলাইন টিকেটিং ফ্যাসিলিটিস প্রদান করার জন্য একটি অনলাইন পোর্টাল গড়ে তুলতে চাই, যেখানে কোনো সেবাগ্রাহকের ফোন করে টিকেট বুক করার প্রয়োজন হবে না, তারা অনলাইনেই টিকেট বুকিং এর কাজ মুহূর্তের মধ্যেই সম্পন্ন করতে পারবেন। আশা করি, ব্যাংক কিংবা উন্নয়নমূলক সংস্থা থেকে ঋণের সাহায্য পেলে তা কাজে লাগিয়ে আমার এই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবো।”
জেবুননেসা প্রীতি
এসএমই করেস্পন্ডেন্ট ,উদ্যোক্তা বার্তা