বাংলাদেশে আমদানি নির্ভর যন্ত্রপাতি সংখ্যায় একসময় ছিলো অনেক বেশী। সকল ভারী যানবাহন বা লাইট পরিবহনের যন্ত্রাংশগুলো এবং তাদের যে ফিল্টার গুলো লাগে তার সবগুলোই একটা সময় আসতো বিদেশ থেকে।
আজ আমাদের দেশে মাঝারি উদ্যোক্তাগণ দেশেই তৈরি করছেন এমন অনেক যন্ত্রাংশ যেখানে আমাদের সোনার বাংলা হয়ে উঠছে আরও স্ব-নির্ভর। বিশ্বমানের পণ্যপ্রস্তুত করে এগিয়ে যাচ্ছে একটি খাত।
১৯৯২ সাল। নর্থব্রুক হল রোডে মাত্র ১০০ স্কয়ার ফিট জায়গায় ব্রেকশু, লিফ স্প্রিং, ইঞ্জিন ভালভ, ইঞ্জিন পিস্টন, হেভি ভেহিক্যাল লাইনার, ক্লাচ প্লেট, প্রেসার প্লেট এমনই হাজারো মোটর পার্টস এর ব্যবসা শুরু করেন রফিকুল ইসলাম।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2019/01/uddoktabarta-3-1.jpg)
১০০ স্কয়ার ফিটের শোরুমটিতে বিদেশী গাড়ির পার্টস এর ব্যবসা তখন রমরমা বাংলাদেশে। একটি আন্তর্জাতিক ব্রান্ডের সকল হেভি ভেহিক্যালের পার্টস এর অত্যন্ত স্বনামখ্যাত ব্যবসায়ী হলেন উদ্যোক্তা। ভীষণ সুনাম অর্জন করলেন উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম। একেবারে প্রথম থেকে সকল পার্টস সহজলভ্য এই মূলমন্ত্রে সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কর্ম অবিরাম। কোন ছুটির দিন বাসায় কাটাননি। সপ্তাহের ৭ দিন কঠোর পরিশ্রম করে ব্যবসাকে দাঁড় করিয়ে এক কঠিন সফলতায় নিয়ে গেলেন রফিকুল ইসলাম।
হেভি ভেহিক্যালস, ট্রাক, বাসের নানা ধরণের ফিল্টার সেই সময়টাতে আসতো ভারী যন্ত্রাংশের সাথে বিদেশ থেকে। বেশিরভাগ সময় ফিল্টারগুলো দুমড়ে মুচড়ে নষ্ট হয়ে যেতো ভারী যন্ত্রাংশের চাপে। ভীষণ বুদ্ধি খাটিয়ে রফিকুল ইসলাম কাজ করলেন তা হলো বিদেশ থেকে ফিল্টার এর বিভিন্ন অংশ এনে বাংলাদেশে সংযোজন করা।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2019/01/uddoktabarta-5-1.jpg)
ব্যবসায় দ্বিতীয় ধাপে আরেক সফলতার অধ্যায় রচিত হলো, ভীষণ সাড়া মিললো। এয়ার ফিল্টার, ফুয়েল ফিল্টার এর ব্যবসা বাড়তে থাকলো বড় পরিসরে। ব্যবসার মুনাফা বৃদ্ধি পেতে থাকলো কারণ, যা ফিল্টার আনা হয় তা আর নষ্ট হয়না। শুধু মাত্র একটি ছোট্ট নতুন সিদ্ধান্ত নিলেন রফিকুল ইসলাম তাই নয়, সাথে আরও একটি ঘটনাও ঘটালেন আর তা হলো, বিদেশী পার্টস গুলো যে বাংলাদেশে তৈরি হতে পারে তার চিন্তাটা করে ফেললেন, ল্যান্ডমার্ক স্থাপন করলেন।
২০১০ সাল। গাজীপুর এর কাশিমপুর এ প্রায় ১০ হাজার স্কয়ার ফিটে স্থাপন করলেন বাংলাদেশে হেভি ভেহিক্যালের এয়ার, ওয়েল, ফুয়েল, হাইড্রলিক এবং ইকো-ফিল্টার তৈরি করবার ফ্যাক্টরি।
২০০৭ সালে পরিবারের নতুন এক সদস্য কন্যা জামাতা জাফর ইকবাল খালেদ তরুণ সহ-উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যবসায়ে যোগ দিলেন। নতুন সহ-উদ্যোক্তার তারুণ্যদীপ্ত সাহসিকতাপূর্ণ দৃঢ়প্রত্যয়ের নেতৃত্বের উপর নির্ভর করে ব্যবসা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিলেন উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2019/01/uddoktabarta-1-1.jpg)
ব্যবসা বাড়াতে থাকে লাকি অটো প্রোডাক্টস। যার পণ্য ‘লাকি ফিল্টার’ প্রস্তুত করতে থাকলো সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। মেশিনের অবিরাম শব্দ বলছে এগিয়ে যাবার কথা বাংলাদেশের একটি শিল্পে, মাঝারি শিল্প।
বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভর যে ফিল্টার একসময় বাংলাদেশের সকল হেভি ভেহিক্যাল তথা বাস, ট্রাকে অপরিহার্য ছিলো তা আজ বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশে হেভি ভেহিক্যাল ফিল্টারের আজ যে খাত তার ৪০-৬০ শতাংশ চাহিদা মেটাচ্ছে বাংলাদেশের যে প্রতিষ্ঠানগুলো তার মধ্যে অন্যতম শীর্ষস্থানে নিয়ে গেলেন নিজেদের পণ্যের মান এবং নিজেদের সুনামকে জনাব রফিকুল ইসলাম এবং সহ-উদ্যোক্তা জাফর ইকবাল খালেদ।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2019/01/uddoktabarta-4-1.jpg)
পরিবারের নতুন সদস্য ছেলে জুবায়ের হোসেন পড়াশোনা শেষ করে উদ্যোক্তার উদ্যোগে যোগ দিলেন এবং মনোনিবেশ করলেন কঠোর প্রত্যয় নিয়ে ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার। ৭০ জন কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে উদ্যোক্তার ফ্যাক্টরিতে। আজ নারী-পুরুষ সবাইকে তিন মাসের ট্রেনিং দিয়ে কর্মপন্থা, উৎপাদন ব্যবস্থার ট্রেনিং দিয়ে কর্ম নির্নয় করে দেয়া হয়। এবং এরপর তারা উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত হন। তাদের সম্পৃক্ত কর্মের প্রতিফলন ‘লাকি ফিল্টার’।
২০১০ সালে দেয়া ফ্যাক্টরিতে নারী-পুরুষ সবাই সমান তালে কাজ করে হয়েছেন স্বাবলম্বী দূর করছেন দারিদ্র।
ফ্যাক্টরির শুরুর সময় উৎপাদন হতো তিনটি ক্যাটাগরিতে ৩৭ টি পণ্য। আজ মাত্র ৮ বছরে ৫ ক্যাটাগরিতে ২৪০ টি পণ্য উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছেন উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম তার স্বপ্নের ফ্যাক্টরি লাকি অটো প্রোডাক্টস।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2019/01/uddoktabarta-2-1.jpg)
তরুণ প্রজন্মের দুই সহ-উদ্যোক্তা জাফর ইকবাল খালেদ এবং জুবায়ের হোসেন।তারা দুজন সফল উদ্যোক্তার সাথে এক হয়ে দেখছেন দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের পণ্যকে পৌঁছে দিয়ে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার স্বপ্ন এবং প্রচন্ড পরিশ্রম করছেন সেই লক্ষ্যকে বাস্তবে পরিণত করতে।
টয়োটা, টাটা, লিল্যান্ড, আইশার, জেএসি, টি-কিং, জেএমসি, ফোরল্যান্ড, মাহিন্দ্রা, ইসুজু, হিনোর মত সকল হেভি ভেহিক্যাল এবং লাইট ভেহিক্যালে আজ ব্যবহৃত হচ্ছে উদ্যোক্তার তৈরি পণ্য। ফোর স্ট্রোক সিএনজি চালিত স্কুটার আজ লিস্টে।
কথা চলছে বেশ কয়েকটি দেশী বিদেশী ব্র্যান্ডের সাথে। সরকারী বিভিন্ন সংস্থা, পুলিশ, বিজিবি, আর্মি, র্যাবের সকল ভেহিক্যালে আজ ব্যবহৃত হচ্ছে উদ্যোক্তার পণ্য। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ভেহিক্যালে আজ ব্যবহৃত হচ্ছে উদ্যোক্তার উৎপাদিত পণ্য।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা
ভাই আমি সি এন জি এর পাটর্স এর ব্যবসা করতে চাই।এগুলো পাইকারী কোথায় পাওয়া যাবে?জানালে অনেক উপকার হতো।