ফিজিওথেরাপিস্ট যখন উদ্যোক্তা

0
উদ্যোক্তা মাহমুদা খানম মনামী

পেশায় একজন ফিজিওথেরাপিস্ট। এখন নতুন পরিচয় উদ্যোক্তা। তিনি রাজশাহীর তানোরের কন্যা মাহমুদা খানম মনামী।

কাজ করছেন রেডি টু কুক দেশী মুরগী, রাজহাঁস, পাতিহাঁস, কবুতর নিয়ে। মাংস যেমন রান্নার জন্য একেবারে প্রস্তুত করে দেওয়া হয়, আবার ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী রান্না করেও দেওয়া হয়। পাশাপাশি মনামীর হোম কিচেনের মোস্ট সেলিং আইটেম এর মধ্যে রয়েছে চিকেন কালা ভুনা, গলদা চিংড়ি ভুনা ও কম মসলার হেলদি বিরিয়ানি। এছাড়াও মনামীর প্রতিষ্ঠান মনিকা মার্ট-এ গরুর ঘানিতে এবং মেশিনে ভাঙ্গানো খাঁটি সরিষার তেল, ছাতু, মৌসুমী আম এবং খেজুর গুড় রয়েছে। মনিকা মার্ট-এ আরও আছে কুমিল্লার খাদি পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, তাঁতের শাড়ি, জামদানি শাড়ি ইত্যাদি। সম্প্রতি বাসায় একটি রুমে মনামী এবং তার স্বামী সহ-উদ্যোক্তা তারেক আহমেদ তাজ মিলে প্রতিষ্ঠানে নতুন পণ্য ওয়েস্টার মাশরুম চাষ শুরু করেছেন। সেখান থেকেও বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছেন তারা।

ফিজিওথেরাপিস্ট মনামীর শুরুটা ছিলো ২০১৮ সালে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে সার্জিক্যাল পণ্য বিক্রয়ের মধ্যে দিয়ে। তখন তিনি অন্যদের থেকে পণ্য সংগ্রহ করে বিক্রয় করতেন যা মূলত ব্যবসা ছিলো। বর্তমানে তিনি সার্জিক্যাল পণ্য বাদ দিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে নতুন নতুন পণ্য নিয়ে কাজ করছেন।

মাহমুদা খানম মনামী উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, “আমার গ্রামের একজন একদিন আমাকে বললেন, একটু সমস্যায় পড়েছি; আমার ১০০ টা হাঁসের ডিম এবং কিছু হাঁস তুমি কিনে নিলে আমার ভীষণ উপকার হবে। আমি নিয়ে নিলাম, কিন্তু ১০০টা ডিম সাথে এতগুলো হাঁস নিয়ে কী করবো? আমি চিন্তা করতে করতে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এত রেসপন্স আসে যে ওগুলো শেষ হয়ে গেলেও অর্ডার আসতে থাকে। তখন আমি আমার গ্রামে গিয়ে মাঠ পর্যায়ে নেমে পড়ি, কে কে হাঁস মুরগী পালন করছেন তা দেখি। তাদের সাথে কথা বলে সেগুলো নেওয়ার ব্যবস্থা করি। আরও যারা অসহায় মা-বোন রয়েছেন তাদের বলে আসি, আপনারা হাঁস-মুরগি পালন শুরু করেন, আমি আপনাদের থেকে কিনবো। এভাবে আমার উদ্যোগ বড় হতে থাকে।”

তিনি বলেন: এখন আমি বেশ কিছু পণ্য নিয়ে কাজ করছি। করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইন উদ্যোগ জনপ্রিয়তা লাভ করলে সেসময় একদিনে ১২ প্লাস পাঞ্জাবি, শাড়ির অর্ডার থাকলেও এখন রেডি টু কুক আইটেম এবং রান্না করা খাবারের চাহিদা বেশি। এ বছর মহরমে আমি ২০০ পিস শেরমাল বিক্রয় করেছি। আর নিয়মিত ১০ থেকে ১২ কেজি রেডি টু কুক আইটেম অর্ডার থাকেই। আমার সাথে বর্তমানে ৬ জন সহযোদ্ধা কাজ করছেন। তাদের জন্যই আমি চাকরি এবং পড়াশোনার পাশাপাশি আমার উদ্যোগ এত ভালোভাবে এগিয়ে নিতে পারছি।

ডিপ্লোমা শেষ করার পরদিনই ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেছিলেন মনামী। বর্তমানে তিনি রাজশাহীতে প্রাইম ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল টেকনোলজি থেকে বিএসসি করছেন, পাশাপাশি চাকরিও করছেন। হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট মা চাইতেন মেয়ে ফিজিওথেরাপিস্ট হয়ে সামনে এগোবে, এটাতেই আরও ভালো করুক। তাই উদ্যোগ গ্রহণের প্রথম পর্যায়ে আপত্তি জানালেও মেয়ের প্রোডাক্টে ক্রেতাদের সাড়া দেখায় মা, বাবা, স্বামী সকলেই এখন মনামীর পাশে রয়েছেন। তাকে সাহস দিচ্ছেন যেন সুন্দরভাবে উদ্যোগ, পড়াশোনা, চাকরি, সংসার সবকিছু ব্যালেন্স করে এগিয়ে যেতে পারেন।

রাজশাহী এবং আশেপাশের অঞ্চলে নিয়মিত মাহমুদা খানম মনামীর মনিকা মার্ট-এর পণ্য যাচ্ছে। মনামীর ৭০ শতাংশই রিপিট ক্রেতা। এছাড়াও প্রতিমাসে ৬০ জন নিয়মিত ক্রেতা রয়েছেন এই উদ্যোক্তার। আগামীতে তার সকল পণ্য নিয়ে একটি আউটলেট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এই ভাবনা নিয়েই সামনে এগোচ্ছেন মনামী।

তামান্না ইমাম,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here