পেট স্ট্র্যাপ, প্লাস্টিক বোতল রি-সাইকেল করে তা দিয়ে বাধার প্লাস্টিক ফিতা উৎপাদন করছেন তরুণ উদ্যোক্তা মোঃ হাবিবুর রহমান জুয়েল।
১০০% রপ্তানিমুখী একটি শিল্পের জনক এই তরুণ উদ্যোক্তা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিষয় নিয়ে পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। জুয়েল সিদ্ধান্ত নেন উদ্যোক্তা হবেন, সেই সময় থেকেই তার উদ্যোক্তা হবার সংগ্রাম।
২০১১’র শেষ দিকে “সোলমাইত”- বাড্ডায় প্রথম ফ্যাক্টরিটি দিলেন। তরুণ উদ্যোক্তা জুয়েল তখন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আনা পরিত্যক্ত বোতল কাঁচামাল নিয়ে ভ্যান চালকের সাথে ঠেলেঠেলে ভেতর পর্যন্ত কিংবা মেইনরোডে উঠিয়ে নিয়ে আশা সব নিজের হাতে করতে শুরু করলেন।
সারা বাংলাদেশের ভাংরির দোকান থেকে সব পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বোতল কিনে নেয়া হয়। টনে টনে কিনে সেই প্লাস্টিক এর দুমড়ানো মোচড়ানো পরিত্যক্ত বোতল গুলো বেছে বেছে প্লাস্টিকের কুচা তৈরি করা হয়। শুরু থেকেই ফ্লেক্স বা কুচা উৎপাদন করছেন মোঃ হাবিবুর রহমান জুয়েল। তার মুনলাইট, পেট ফ্লেক্স ইন্ডাস্ট্রিতে এবং রপ্তানি করেছেন দীর্ঘ ছয় বছর, ২০১২-২০১৮ সাল পর্যন্ত।
মেরাদিয়া, নতুন বাজার ভাটারাতে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহৃত পেট বোতল গুলো সব প্রসেস করে ফ্লেক্স তৈরি করা হয়। উদ্যোক্তা জুয়েল তার দুটি ফ্যাক্টরিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন প্রায় ৮০ জন কর্মীর। ভীষণ পরিপাটি ব্যবস্থায় রাস্তা, নদী –নালা, ড্রেন, মাটির নিচে অর্ধেক পুতে থাকা, পরিবেশ নষ্ট করা সব প্লাস্টিক বোতল পেট বোতল গুলোকে পরিষ্কার করে তা থেকে ফ্লেক্স তৈরি হচ্ছে আজ।
২০১৮ সাল। এসএমই উদ্যোক্তা জুয়েল বাশবাড়ির মোহাম্মদপুর সোনার গাঁওতে ২০,০০০ স্কয়ার ফিটে গড়ে তুললেন তার মুনলাইট পেট ফ্লেক্স এবং পেট স্ট্র্যাপ উৎপাদনের নতুন ফ্যাক্টরি।
এখানে এসে উদ্যোক্তা নতুন ব্যবসার দুয়ার উন্মোচন করলেন। পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন শুরু করলেন বিশ্বে মিড হেভি, লাইট হেভি প্রোডাক্ট। পরিবহনের সুবিধায় সবচাইতে চাহিদা সম্পন্ন স্ট্র্যাপ।
বাংলাদেশের এক অভাবনীয় সক্ষমতার একটি খাত সৃষ্টি করলেন উদ্যোক্তা জুয়েল। যেখানে তার ফ্যাক্টরি মাসে ২০০ মেট্রিক টন পেট স্ট্র্যাপ উৎপাদন করছে বিশ্বমানে। সঠিক সময় তা পৌঁছে দিচ্ছেন উদ্যোক্তার নিজের সৃষ্টি করা বাজারে। চীনে রপ্তানী করছেন তার পণ্য।
ফ্যাক্টরি চলছে ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহের সবদিন। বছরের ৩৬৫ দিন। ৭০ জনেরও বেশি কর্মীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন তরুণ উদ্যোক্তা জুয়েল তার নতুন পেট ফ্লেক্স এবং পেট স্ট্র্যাপ ফ্যাক্টরিতে।
সারা দেশে ৬৪ জেলায় আজ রয়েছে উদ্যোক্তার এজেন্ট এবং সংরক্ষণাগার। ১৫০ জনেরও বেশি কর্মী কাজ করছেন। জীবন মানের পরিবর্তন এসেছে তাদের পরিবারের মানুষদের। কর্মীদের জন্য উদ্যোক্তা জুয়েল একটি যত্নের নাম। ব্যাক্তিগত ভাবে প্রতিটি কর্মীর আলাদা খোঁজখবর নেয়। কর্মের অগ্রযাত্রায় উৎসাহিত করায় কর্মীদের সকলকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন যেন একটি পরিবার তরুণ সফল উদ্যোক্তা।
আজ চীনে তার পণ্য পেট স্ট্র্যাপ এর এতটাই চাহিদা এবং সমাদর যে পণ্যের আন্তর্জাতিক মান, গুণগত সবদিক এবং নিয়মিত চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের মান নির্বাচিত করতে দেশীয় ১০ জনের বেশি সিনিয়র এর পাশাপাশি ২ জন চীনা প্রকৌশলীকে চাকুরি দিয়ে রেখেছেন সার্বক্ষণিক।
আজ বাজার চীন এবং ভারত। বাংলাদেশ আজ সেই বাজারের চাহিদা করছে পূরণ। পেট ফ্লেক্স ভারতে পেট স্ট্র্যাপ চীনে। আজ বাজার সৃষ্টি হচ্ছে এবং নিয়মিত যোগাযোগ করছে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান ও ফিলিপাইনে। আজ চাহিদা সৃষ্টি হচ্ছে ফ্লেক্স এর। বাজার সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে ইউরোপে। কথা বলছে অস্ট্রেলিয়া। আজ ভীষণ আগ্রহী ইউক্রেন।
পরিবেশকে সুস্থ রাখার এক উদ্যোক্তা। দূষণ-ক্ষতি ঠেকানোর উদ্যোক্তা। তিন জন কর্মী নিয়ে এসএমই উদ্যোক্তা জুয়েল তার উদ্যোগ শুরু করেন। আত্মপ্রত্যয়ে বলীয়ান এবং অদম্য মনোবল নিয়ে এগিয়ে এসেছেন উদ্যোক্তা হবার লক্ষ্য নিয়ে আজ হয়েছেন সফল তরুণ উদ্যোক্তা। সফলতার সাথে পরিচালনা করছেন স্বীয় ব্যবসা। শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পের উদ্যোক্তা হাবিবুর রহমান জুয়েল।
অপু মাহফুজ