“প্লাব অন প্রোডাকশন” মনিপুরী ফ্যাশনের নতুন ধারা

0
উদ্যোক্তা প্লাবন সিনহা

শ্রীমঙ্গলে বেড়ে উঠেছেন প্লাবন সিনহা। বিটিআরআই হাই স্কুল, শ্রীমঙ্গল; বিএএফ শাহীন কলেজ, শমসেরনগরে লেখাপড়া করে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন শান্ত মরিয়ম ইউনিভার্সিটি থেকে।

স্নাতক সম্পন্ন করার পর তিনি ইন্টার্নশিপ করেছেন বিটপি গ্রুপে। তারপর থেকে তার নিজের সংস্কৃতি নিয়ে কাজ। এই মুহূর্তে তার ব্র্যান্ড “প্লাব অন প্রোডাকশন” নিয়ে কাজ করছেন।

তিনি একজন মনিপুরী। তাদের ঐতিহ্যবাহী মনিপুরী বস্ত্র বাংলাদেশে সুপরিচিত।
কিন্তু আজ তা প্রায় হারানোর দোরগোড়ায়। কালের বিবর্তনে এর ডিজাইন, মোটিফ,
সবকিছুই বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। তাই তিনি তাদের এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে, তাদের সংস্কৃতিকে, একজন সচেতন মনিপুরী হিসেবে সংরক্ষণ  করতে চাচ্ছেন, নতুন আঙ্গিকে। এ কারণেই তার উদ্যোক্তা হয়ে উঠা।

২০১৯ সালে ‘প্লাব অন প্রোডাকশন’ এর পথচলা শুরু। তার ব্র্যান্ড যে প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাজ করে সেই তাড়েং (মনিপুরী হ্যান্ডলুম এন্ড ক্রাফট রিসার্চ সেন্টার) ২০১১ সাল থেকে মনিপুরী সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করছে।

যখন তিনি  বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন, স্বপ্ন ছিল গ্র‍্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে ভালো কোনো চাকরি করবেন। কোনো স্বনামধন্য ব্র‍্যান্ডের ডিজাইনার হিসেবে নিজেকে দেখতে চেয়েছিলেন নিজেকে। কিন্তু করোনা মহামারীকালীন সময়ের পর যখন তিনি তার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করা শুরু করেন, তখন বুঝতে পারেন যে এখানে কতোটা সম্ভাবনা রয়েছে।

একটা সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের যে মূল্য, সেটা বোঝার চেষ্টা করেছেন তিনি।
সে চিন্তা থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি তার ঐতিহ্যকে নিয়েই কাজ করবেন এবং নতুনত্ব নিয়ে উপস্থিত হবেন মনিপুরী তাঁত শিল্পে।

তার প্রোডাকশন এর অধীনে মনিপুরী কটন ডিজাইনার শাড়ি তৈরি হচ্ছে। খুব দ্রুতই আসছে পাঞ্জাবি। এছাড়াও ব্যাগ এবং বিভিন্ন গৃ্হসজ্জা সামগ্রীও আসবে সামনে।

এই তরুণ উদ্যোক্তা ঢাকায় থাকেন, কিন্তু তার পণ্য প্রস্তুত হচ্ছে আদমপুর, কমলগঞ্জ এবং মৌলভীবাজারে। সেখানে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

প্লাবন জানালেন, অনেক অসাধু ব্যবসায়ী মেশিনে শাড়ি বুনে তা মনিপুরী তাঁত বলে বিক্রয় করছেন, যে কারণে অনেক মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। পণ্যের প্রতি ক্রেতার আগ্রহ কমে যাওয়া যেকোন শিল্পের জন্য হুমকি।
সরকারের এদিকে সচেতন দৃষ্টি দেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। বললেন, ক্রেতারাও যেন বুঝতে পারেন কোনটা মেশিনে তৈরি পণ্য আর কোনটা তাঁত, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

তাদর সাথে ৭০ জনের বেশি তাঁতি কাজ করছেন। মনিপুরী টেইলারিং নিয়ে যারা কাজ করছেন, তাদেরকেও যুক্ত করা হচ্ছে যাতে তারাও কাজ করার সুযোগ পান।

তিনি জানান: মনিপুরী কন্যাশিশুদের হাতে সেলাই শেখানো হচ্ছে যাতে আমাদের মনিপুরী সম্প্রদায় নিজে নিজে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। মনিপুরী শাড়ি সম্পর্কে কমবেশি সবাই জানে এবং এর চাহিদাও রয়েছে বেশ। পুরো দেশেই এই মনিপুরী শাড়ি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

তার এই উদ্যোগের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে তার পরিবার।
তারা সবসময় পাশে থেকেছে। তাঁতিরাও তাদের নিপুণতা, নিষ্ঠা ও পরিশ্রম দ্বারা পাশে আছেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় তিনি বলেনন, “এই ব্যবসাকে কিভাবে বড় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়, কিভাবে আরও নতুন তাঁতি যুক্ত করা যায় তার চেষ্টা করছি। আমাদের এই প্রয়াসের দ্বারা আমাদের মনিপুরী অবকাঠামো সুগঠিত করাও একটা লক্ষ্য। আমাদের সাথে ক্রেতাদের যে কমিউনিকেশন গ্যাপ আছে, সেটা কমিয়ে আনার জন্য আউলেট তৈরি করার পরিকল্পনা আছে, যেখানে আসল মনিপুরী পণ্য পাওয়া যাবে এবং ক্রেতারা যেকোন প্রকার জালিয়াতি থেকে নিরাপদ থাকবেন।”

তরুণদের জন্য তার পরামর্শ: নিজের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখুন। নিজের ঐতিহ্যের প্রতি ভালোবাসাই এই দেশের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখবে।

মাসুমা শারমীন সুমি
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here