প্রিয় গহনা বিক্রি করে ইমনের কালিনারি উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প

0
উদ্যোক্তা ফারজানা আনোয়ার ইমন

নিষ্ঠা ও আবেগের সাফল্যমণ্ডিত এক নাম ফারজানা আনোয়ার ইমন। তিনি একজন রন্ধনিশল্পী এবং রন্ধনশিল্পে সেরা উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার প্রিয় গহনা বিক্রি করে নিজের পরিচয় তৈরি করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন ১০ বছর আগে। বর্তমানে নিজেকে সেরা রন্ধনশিল্পী হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন একজন প্রশিক্ষক ও রেসিপি রাইটার হিসেবে।

সোশ্যাল মিডিয়া বেজড রন্ধনসম্পর্কীয় প্ল্যাটফর্ম ‘‘ফারজানার কুজিন অ্যান্ড গ্যাস্ট্রোনমি’র মাধ্যমে রান্না বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন তিনি। এছাড়াও অফলাইনে প্রশিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন কোর্স করিয়ে থাকেন। রন্ধনশিল্পে আগ্রহী যে কেউ তার কোর্সে অংশ নিতে পারেন।
ফারজানার জন্ম খুলনায় হলেও পৈতৃক ঠিকানা ঢাকার বিক্রমপুর। তার আগে পরিবারের কারও কর্মজীবী হওয়ার নজির নেই। সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী ফারজানা। তিনি চেয়েছেন এবং আলাদাভাবে নিজের পরিচয় নিজে তৈরি করতে পেরেছেন।

ফারজানা ইমন বলেন, “১৫ বছর আগে বিয়ে হয়ে যায়। এরপর সন্তান হওয়ার পর আমি আবার আমার ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে শুরু করি। তারপর আমি অল্প সময়ের জন্য বৃটিশ কাউন্সিলের একটি কোর্সে অংশ নেই। তেমন কিছু না ভেবেই পেশাদার কোর্সটি করেছিলাম। তবে আশা ছিল যে ভবিষ্যতে এটি আমাকে এগিয়ে যেতে এবং প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করবে।“

তিনি মনে করেন, যে কেউ রন্ধনশিল্পকে পেশা হিসেবে নিতে পারেন। শেফ, হোম কুক, উদ্যোক্তা, ক্যাটারিং এবং আরও অনেক দিক রয়েছে।এসব বিষয় থেকে নিজের পছন্দসই একটি বেছে নিয়ে হতে পারেন রন্ধনশিল্পের একজন উদ্যোক্তা।

২০১২ সালে ফারজানা বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন থেকে পেশাদার শেফ কোর্স ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন (ন্যাশনাল সার্টিফিকেট কোর্স) সম্পন্ন করেন। পরে কোর্সের অংশ হিসেবে বিএফসিসি (বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টার) এবং রেডিসন ব্লু-তে ৬ মাস কাজ করেন। ২০১৪ সালে দ্য বেস্ট ওয়েস্টার্ন ম্যাপল লিফ হোটেলে কোল্ড কিচেনের ইনচার্জ হিসেবে যোগ দেন ফারজানা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন
“এ সময়টাতে আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি এবং রান্না ও খাদ্য শিল্প সম্পর্কে আরও ব্যাপকভাবে জানার চেষ্টা করেছি। প্রতিদিন আমি ডিউটি শেষে পেস্ট্রি এবং বেকারি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতাম। এছাড়াও রেডিসন ব্লু-তে নামীদামি শেফের কাছ থেকে ফল ও সবজির রেসিপি সম্পর্কে আরও দক্ষতা বিকাশের চেষ্টা করেছি। এসবের ফলেই আমার কাজের জায়গায় অভিজ্ঞতা যেমন বেড়েছে তেমনি পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে পেরেছি, এবং আমি পদোন্নতিও পেয়েছি,”

২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি চাকুরী ছেড়ে দেন এবং নয়া দিল্লির ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কালিনারি থেকে HACCP প্রশংসাপত্র অর্জন করেন। এরপর ইন্টারন্যাশনাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউট অফ কালিনারি (ITICA)‘র অন্যতম পরিচালক হিসেবে নিজের নাম আরও উজ্জ্বল করেন।

ফারজানা সেখানে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন। পরে ফ্রিল্যান্সার ফ্যাকাল্টি অফ এইস হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট (ACE), TKCI (টনি খান কালিনারি ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হোটেল ম্যানেজমেন্ট), আরএইচটিআই (রিজেন্সি হসপিটালিটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের ফ্যাকাল্টি হিসেবে যোগদান করেন।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি জানান: একজন উদ্যোক্তা হওয়ার পাশাপাশি আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো নিজেকে একজন মিশেলিন তারকা হিসেবে দেখা, অধ্যয়ন করা এবং প্রতিদিন শেখা। অবশ্যই রন্ধনশিল্পের বিকাশ করতে চাই এবং বাংলাদেশের প্রতিটি মহিলার কাছে আমার বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। যাদের অনেক কিছু করার ইচ্ছা এবং সক্ষমতা আছে কিন্তু সামাজিক এবং পারিবারিক বাধার কারণে সুযোগ পাচ্ছেন না, তাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here