উদ্যোক্তা আলী জাকির

দেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য কিছু তৈরি করা। একজন উদ্যোক্তার জন্য সর্বোচ্চ সম্মানের কথা বলে। কর্মপথে কতই না এগিয়ে যাওয়ার কথা বলে উদ্যোক্তার এই কৃতিত্ব। হ্যাঁ তেমনই কৃতিত্ব অর্জন করেছেন স্বনামখ্যাত সফল উদ্যোক্তা আলী জাকির।

অক্টোবরের শুরুতে তার কাছে আসে একটি অর্ডার। বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের তরফ থেকে আসে এই কাজটি। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) কর্মকর্তাদের ৭০তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে এই ফাইল ফোল্ডার গুলো বিতরণ করা হয়। ব্যবহার হবে জুটের ফাইল ফোল্ডার, সেই ফাইল ফোল্ডার তৈরির গুরু দায়িত্ব আসে সফল উদ্যোক্তার কাছে এবং সফলভাবে তিনি তা সম্পন্ন করে ডেলিভারি দিয়েছেন।

উদ্যোক্তার তৈরি পণ্যের গুণগত মান দেখেই তারা এই অর্ডারটি করেছেন বলে জানান উদ্যোক্তা আলী জাকির। তিনি পাবনা, দিলালপুরের সন্তান। কিন্তু জন্ম, বেড়ে ওঠা সব ঢাকাতেই। বাবা-মার দ্বিতীয় সন্তান আলী জাকির। পড়াশোনা করেছেন সেন্ট যোসেফ স্কুলে, পাবনা ক্যাডেট কলেজ, খুলনা ইউনিভার্সিটি এবং শেষে ঢাকা ইউনিভার্সিটির (আই.বি.এ) ব্যবসা প্রশাসন নিয়ে পড়েছেন।

পড়াশোনা শেষে দীর্ঘ এক যুগ  চাকরি করেছেন। এ্যাডভারটাইজিং, ফার্ম, নিউজ চ্যানেলসহ ওয়ারিদ টেলিকম এবং এয়ারটেল বাংলাদেশে ছিলেন অনেক দিন। প্রথম শ্রেণির চাকরি, ভালো বেতন সহ সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেতেন। তারপরেও মনে তৃপ্তি কাজ করত না। নিজে কিছু করার ইচ্ছা, একটি স্বাধীন জীবনের ইচ্ছা, নিজের সৃজনশীলতাকে ফুটিয়ে তুলবো আর এই প্রয়াস থেকেই উদ্বুদ্ধ হলেন। প্রশিক্ষণ নিলেন জেডিপিসি থেকে। তখন ২০১৭ সাল, সমভাবাপন্ন ৪ বন্ধু মিলে ১০ লক্ষ টাক পুঁজি নিয়ে শুরু।

জুটের তৈরী ব্যাগ, শপিং ব্যাগ, ল্যাপটপ ব্যাগ, বাজারের ব্যাগসহ প্রায় ১০ ধরনের ব্যাগ তৈরী শুরু করেন ৫ জন কর্মী এবং ৫ টা মেশিন নিয়ে। ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে ব্যাগের ধরণ, আসতে থাকে নতুনত্ব ব্যাগের ডিজাইনে, বাড়তে থাকে মেশিন সংখ্যা। কেরানীগঞ্জে তার একটি ফ্যাক্টরি আছে যেখানে স্থায়ীভাবে ১০ জন এবং অস্থায়ীভাবে কাজের ধরনের ওপর কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এছাড়াও অনলাইনে মেসার্স আমালী এক্সপোর্ট ইমপোর্ট নামে একটি পেইজ আছে। যেটা ক্রেতাদের কাছে খুব জনপ্রিয়।

অচিরেই  স্কটল্যান্ড, ইতালী, জার্মানী সহ বিভিন্ন দেশে তার পণ্য রপ্তানি হবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তা। ইতিমধ্যেই উদ্যোক্তা আলী জাকির হংকং, চীন ও জাপানের বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন। এই অংশগ্রহণ তাঁকে পণ্য সম্পর্কে বিস্তর ধারণা নিতে সাহায্য করেছে বলে তিনি মনে করেন।

মাসে প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ টাকার পণ্য তিনি  উৎপাদন করেন  এবং দেড় থেকে ২ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করে থাকেন। উদ্যোক্তা আলী যাকের বলেন, “জুট নিয়ে কাজ করছেন এমন  অনেক উদ্যোক্তা আছেন কিন্তু এই সেক্টরে আরো অনেক উদ্যোক্তা প্রয়োজন। এখনো অনেক প্রয়োজন আমরা পূরণ করতে পারছি না। দেশের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরে রপ্তানির জন্য আরও অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক তরুণ এই সেক্টরে নিজেকে জড়াতে পারেন, আমি একজন উদ্যোক্তা হিসেবে বলব তারা ভুল করবে না। মেধা দিয়ে কাজ করতে হবে তাহলে তারা সফল হবেই”।

তার ইচ্ছা ভবিষ্যতে তিনি ২০ থেকে ৩০টি দেশে পণ্য রপ্তানি করবেন এবং এই জুট দিয়ে আরো যুগোপযোগী ব্যবহারের পণ্য তৈরী করবেন। মানুষের কাছে জুটকে তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া। তিনি আরো মনে করেন এই সেক্টরে এখনো ভালো ডিজাইনারের অভাব, ভালো ডিজাইনার হয়েও সফল উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব এই সেক্টরে।

বিপ্লব আহসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here