বিভিন্ন মার্কেট থেকে গজ কাপড় কিনতেন ইতু মতিন। তারপর সেগুলো দিয়ে ডিজাইন করে সালোয়ার কামিজ, শাড়ি, ফতুয়াও তৈরি করা শুরু করলেন। বন্ধুরা সকলে ভীষণ উৎসাহ দিলেন। সকলে কিনতে শুরু করলেন তার ডিজাইনে বানানো পণ্য।
যখন অনেক কষ্টকরে নিজে পোশাকগুলো তৈরি করতে শুরু করলেন, তখন নিজের তৈরি করা প্রথম ১০টি পোশাক একদিনেই বিক্রি হয়ে যায়। আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাবার দারুণ মানসিক শক্তি পেলেন উদ্যোক্তা ইতু মতিন।
এরমাঝে বড় একটি ফ্যাশন হাউস থেকে ১২০ টি নকশি ডিজাইনের ফতুয়ার সেলাইয়ের অর্ডার এলো। ভীষণ উৎসাহ পেলেন। যথাসময়ে অর্ডার ডেলিভারী দিলেন।
তারপর আর অন্যকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়, নিজেই উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন দেখলেন, নিজেই নিজের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সংকল্প আঁটলেন নিজের ভেতর। আর এভাবেই বনানীর এফ.আর টাওয়ারে যাত্রা শুরু করে ইতু’স কালেশন।
২০১২ সালে ছোট্ট একটি অফিস স্পেস শেয়ার করে কাজ করা শুরু করলেন উদ্যোক্তা। উৎপাদিত এবং অ-উৎপাদিত দুই ভাবেই পণ্যের অর্ডার অর্থাৎ একজন ডিজাইনার উদ্যোক্তা হিসেবে ইতু মতিনের কাজ শুরু হলো।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রথম একটি অর্ডার ট্রেনিং ব্যাগ, বেশ বড় একটি অর্ডার মিললো ইতুর কাজ দিয়ে। উৎসাহ বাড়তে থাকলো উদ্যোক্তা হবার পথে, চলার পথে।
আমেরিকা থেকে অর্ডার আসলো শাড়ির। বৈশাখী উৎসবে পেইন্টিং ডিজাইনের শাড়ি উদ্যোক্তার প্রত্যয়কে আরো দৃঢ় করে তুললো। ডিজাইন করা পোশাক এবং সেই সাথে ট্রেডিং এর ব্যবসা শুরু করলেন উদ্যোক্তা ইতু মতিন।
দেশী কাপড় দিয়ে পোশাক উৎপাদন করে যে লাভ, তাঁর সাথে বিদেশের পোশাকও যোগ হলো এবং কাপড়ের কাজটিও উদ্যোক্তা শুরু করলেন। শাড়ি ডিজাইনের এমব্রয়ডারী, বিভিন্ন উৎসবের বৈশাখ থেকে বসন্ত নানা উৎসবের রঙে, কালার পেইন্টিং এ ফুটে উঠতে শুরু করলো উদ্যোক্তার কাজ।
উদ্যোক্তা সফলতার পথে ধীরেধীরে হাঁটতে শুরু করেন। প্রয়োজন দেখা দিলো কর্মীবাহিনীর। রাজারবাগে ৫ জন নিয়মিত কর্মী নিয়ে কাজ শুরু হলো। বড় অর্ডার আসলে আরো ২৫ থেকে ৩০ জন ইতুর টিমে যোগ দেন। উদ্যোক্তা গড়ে তুললেন সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য বৃত্তনারী ও শিশু সংস্থা। সেখানে ট্রেনিং দেওয়া শুরু করলেন এবং সেখান থেকে উদ্যোক্তার বিশাল একটি কর্মীবাহিনী তৈরি হয়। যারা তৈরি করছেন কাঁথা, ফতুয়া, শাড়ি, হাতপাখা এবং অর্ডার মত যেকোনো পণ্য।
চীনের কুনমিং এ মেলায় অংশ নিলেন উদ্যোক্তা। এরপর আমেরিকা এবং নেপালেও নানান মেলায় অংশ নিয়েছেন উদ্যোক্তা ইতু মতিন। বিভিন্ন ডিজাইনের অর্ডার আসতে শুরু করলো হোল সেলে এবং রিটেইলে।
উদ্যোক্তা সেই পণ্যগুলো তৈরি করলেন সময় এবং খুব যত্ন দিয়ে। নানান প্রোডাক্ট লাইনে সেগুলো ডেলিভারী করলেন সঠিক সময়ে।
২০১৬ সালে কনকর্ড পুলিশ প্লাজায় দিলেন শোরুম। ৫ম তলায় নতুন করে সাজাচ্ছেন ২৭০ স্কয়ার ফিটে নিজের আরেক স্বপ্নভুবন।
উদ্যোক্তার স্বপ্ন ইতু’স কালেকশনে আজ কর্মীবাহিনী পণ্য এবং সকল কিছু মিলিয়ে দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছেন। ১০ হাজার টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করে এখন সফলতার সাথে নিজের ব্যবসা পরিচালনা করছেন উদ্যোক্তা ইতু মতিন।
খুরশিদা পারভীন সুমী