প্যান্ডেমিক এর আঘাতে অর্থনৈতিক ভাবে দিশেহারা পরিবারের কান্ডারী হলেন সাবিহা

0

রাজশাহীতে উদ্যোগ শুরুর প্রথম মাসেই পঞ্চাশ হাজার টাকার কেক, ত্রিশ হাজার টাকার নারকেল নাড়ু এবং বিশ হাজার টাকার অন্যান্য খাবার বিক্রয় করে স্বামীর হাতে তুলে দিলেন এক লাখ টাকা।

করোনা মহামারীর প্রথম আঘাতে পুরো পরিবার করোনা আক্রান্ত হয়েগেলে এবং স্বামীর বেতন তিন মাসের জন্য বন্ধ হয়েগেলে স্বামীর পাশে দাঁড়াতেই উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সাবিহা তামান্না। রান্নার প্রতি ভালোবাসা থেকে ঘরে তৈরি খাবার কে উদ্যোগ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তিনি।

এখন প্রতি মাসে বিক্রয় করছেন প্রায় ১০ কেজি নারকেল নাড়ু। কখনো এর পরিমাণ দ্বিগুণ ছাড়ায়। তামান্নার রান্নাঘরের মেনুতে রয়েছে রসুনের আচার, কাঁচাগোল্লা, কেক, জার কেক, দুধ চিতই, দুধ পুলি, বিরিয়ানি সহ লোভনীয় সব খাবার। এছাড়াও খাঁটি সরিষার তেল, মধু, ড্রাই ফুটস, বড়ি এবং ঘি নিয়েও কাজ করেন এই উদ্যোক্তা।

ফেসবুকে ‘তামান্নার রান্নাঘর’ নামে পেজ রয়েছে এই উদ্যোক্তার। ঘরে তৈরি খাবারের পাশাপাশি বিছানার চাদর নিয়েও কাজ করছেন তিনি। উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিন থেকে আজ পর্যন্ত সাহস যুগিয়ে যাচ্ছেন উদ্যোক্তার স্বামী ডাক্তার শহিদুল ইসলাম। বাজার করা থেকে পণ্য প্যাকেজিং করে সহধর্মিণীকে সহযোগিতা করেন নিয়মিত।

সারা রাজশাহী জুড়ে এবং কিছু কিছু খাবার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কুরিয়ারের মাধ্যমেও পৌঁছে দিচ্ছেন উদ্যোক্তা সাবিহা তামান্না। আমরা রাজশাহীর উদ্যোক্তা নামক একটি গ্রুপ মেম্বার তিনি। সেখান থেকে স্বপ্ন জয়ের মিলনমেলা নামক প্রোগ্রামে ৪৭ হাজার মেম্বারদের মধ্যে অক্টোবরের টপ ওয়ান হয়েছিলেন এই উদ্যোক্তা।

রাজশাহীর নওদাপাড়া এলাকায় ফুড মেলা এন্ড রেস্টুরেন্টে নিয়মিত খাবার পাঠান সাবিহা তামান্না । এছাড়াও নওদাপাড়া ইসলামি ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যান্টিনেও জার কেক পাঠাতেন তিনি। তবে বর্তমানে পিঠেপুলি মৌসুম চলায় পিঠার অর্ডার বেশি থাকায় কিছুদিনের জন্য অনিয়মিত হয়েছেন সেখানে।

উদ্যোক্তা বার্তাকে এই উদ্যোক্তা বলেন ‘আমার কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষী, ইউটিউব এবং নিজে নিজে বার বার চেষ্টা করে কেক এবং আমি যে রান্নাগুলো করতে পারতাম না সেগুলো শিখেছিলাম। ঐসময় যেহেতু সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো তাই বাইরে বের হয়ে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ আমার হয়নি তবে খুব শীঘ্রই প্রশিক্ষণ নেব। আমাকে ঐ সময় যারা সাহায্য করেছিলেন উদ্যোক্তা বার্তার মাধ্যমে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

সাবিহা তামান্নার জন্ম থেকে বেড়ে উঠা চাঁপাইনবাবগঞ্জের বেহুলা গ্রামে। রাজশাহী কলেজ হতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শেষ করেন তিনি। বর্তমানে রাজশাহীর তেরখাদিয়া, ডাবতলা এলাকায় বাস করেন এই উদ্যোক্তা।

উদ্যোগ গ্রহণের পর থেকে স্বামী বরাবর পাশে থাকলেও একমাত্র ভাই এবং পরিবারের অনেকে মেনে নিতে পারেন নি। বোন খাবার বিক্রয় করবে এটি মেনে নেওয়া তাদের কাছে কষ্টকর ছিল। তাই বোনের সাথে কথা বলাও বন্ধ ছিলো বছর খানেক।পরে বোনের কাজ এবং বোনের কাজের প্রতি মানুষের ভালোবাসা এবং সম্মান দেখে ভাই ও এখন বোনের পাশে।

তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here