পায়ে জোর নেই,মনের জোরেই উদ্যোক্তা হলেন মুসাফির জসিম

1
উদ্যোক্তা মুসাফির জসিম

১৯৯৯ সালের আগস্ট মাসে খাগড়াছড়ি জেলায় জন্ম মুসাফির জসিমের। জন্মের পর পায়ের রগগুলো বাঁকা হওয়াতে অন্য সবার মতো স্বাভাবিক জীবন ছিল না তার৷ যদিও ছোটবেলায় ভালোই ছিলেন কিন্তু ২০১১ সালে হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পড়ায় পায়ের সকল প্রকার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন জসিম।

নানান চড়াই উৎরাই পার করে তিনি তার দূর্বলতাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করেন। একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও বেছে নেন উদ্যোক্তা জীবন। ছোটবেলায় অন্যসব শিশুদের মতো হেসেখেলেই জীবন ভালোই চলছিলো জসিমের। স্কুলে ভর্তি হোন। ছোটবেলায় হাল্কা-পাতলা গড়নের থাকায় হাটতে চলতে সমস্যা হতোনা, তবে অন্য বাচ্চাদের তুলনায় অনেকটা শারীরিকভাবে দূর্বল ছিলেন।

মা রওশন আরা ছেলেকে স্কুলে আনা নেয়ার কাজটি করতেন। কেননা যত দিন যেতে থাকে জসিম ততটাই দূর্বল হতে থাকে। একা ছেড়ে দেয়াটা অসম্ভব ছিল। এক পর্যায়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর পর পড়াশুনা আর নিয়মিত করা সম্ভব হয়নি জসিমের। হঠাৎ ২০১১ সালে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। রুমের দরজা ধরে অনেক কষ্টে দাড়াতে সক্ষম হলেও তা কিছু সময়ের জন্য। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৯ বছর হয়ে গেলো জসিম দাঁড়াতে পারে না। এখন তার সঙ্গী হুইল চেয়ার।

২০১১ সাল থেকে এক অস্বাভাবিক জীবন কাটাতে শুরু করেন। শুয়ে বসে আড্ডা দিয়ে, মোবাইল চালিয়ে সময় কাটতো। একটা সময় হাঁপিয়ে উঠেন তিনি। ২০২০ সালে এক আপুর পরামর্শে জসিম কিছু একটা করবার দৃঢ় প্রত্যয়ে জেগে উঠেন। শূন্য হাতে শুরু করেন তার একটি নতুন উদ্যোগ। তিনি দেশীয় শাড়ি, থ্রিপিস, খাদি পাঞ্জাবি, বোরকা, উলের শাল, খাঁটি ঘি, ড্রাই ফ্রুটস নিয়ে কাজ শুরু করলেন। প্রথম দিনেই একটা অর্ডার পেয়েছিলাম সেই থেকেই শুরু। প্রথম মাসে বেশ কিছু অর্ডার সম্পূর্ণ করলেন এবং কিছু টাকা মায়ের হাতে দিয়েছিলেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে নিজের প্রথম উপার্জনের টাকা মায়ের হাতে দিতে পেরে এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে উদ্যোক্তা মুসাফির জসিমের।

স্বপ্ন যেন নতুনভাবে ধরা দিল। কারো দয়ায় নয়, নিজের চেষ্টাতেই এগিয়ে যেতে পারবেন এই দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন জসিম। নিজের তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণ দেশীয় গুণগতমান সম্পন্ন পণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। শূন্য হাতে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রায় লাখ টাকার সেল হয়েছে উদ্যোক্তা জসিমের অনলাইন প্লাটফর্ম মুসাফির শপ থেকে।

উদ্যোক্তা মুসাফির জসিম বলেন, “উদ্যোক্তা হোলাম আত্মনির্ভরশীল হয়ে চলতে, চারদিকে যখন বিদেশি পণ্যের জয়জয়কার ঠিক তখনই দেশীয় পণ্যের প্রতি মানুষের ভালোবাসা ফিরিয়ে আনতে দেশীয় শাড়ি, থ্রিপিস, পাঞ্জাবি নিয়ে আমার কাজ করা।”

নতুনদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, “নতুন যারা উদ্যোক্তা হবেন বলে ভাবছেন তাদেরকে বলতে চাই, উদ্যোক্তা হওয়ার আগে আপনাদের শিখতে হবে, জানতে হবে, ধৈর্য্য ধরে ভালোবেসে কাজ করতে হবে তবেই আপনি একজন সফল উদ্যোক্তা হতে পারবেন।”

পরিবারের জন্য আর্থিকভাবে কিছু করতে পারাটাই সব থেকে বড় অর্জন বলে মনে করেন উদ্যোক্তা মুসাফির জসিম।

সেতু ইসরাত,
উদ্যোক্তাবার্তা

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here