পাট শিল্পের উন্নয়ন ও সমস্যাগুলো সমাধানে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক।
২৪ এপ্রিল, বুধবার ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী সেন্টারে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) ৪০তম বার্ষিক সাধারণ সভায় এ কথা বলেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নানক বলেন, পাটবীজের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ দেশে তৈরি হয়। বাকি তিন- চতুর্থাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় যা দুঃখজনক। এছাড়াও পাট গবেষণা কেন্দ্র পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান নয়। এটা কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান।
তিনি আরো বলেন, হাজারো সমস্যার কারণে পাট শিল্পে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হচ্ছে না। জুট কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে এ সব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। জুট কাউন্সিল গঠন করা হলে পাট উন্নয়নের সমন্বিত পথনকশা প্রণয়ন করাও সহজ হবে বলে আশা করি।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, পলিথিন বা প্লাস্টিকের তৈরি ৫০ কেজি চালের বস্তা নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন বিজিএমের সদস্যরা। শুধু ৫০ কেজির বস্তা নয় সব ধরনের পলিথিন ও প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে ডিসি কনফারেন্সে রমজান মাসের পর প্লাস্টিক ব্যাগ বন্ধ করে পাটের ব্যাগ কার্যকরের ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
মন্ত্রী আরো জানান, প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে পাটজাত পণ্য তৈরির করতে এর মধ্যেই ১০০ কোটি টাকার তহবিলের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং এ খাতে আরো বিনিয়োগ নিশ্চিত করা হবে।
নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর বার্তাবাহক উল্লেখ করে নানক বলেন, ‘আমি আপনাদের বার্তা তার কাছে পৌঁছে দিব। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বার বার বলেছেন, পাট ও চামড়া শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে পোশাক শিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে হবে।’
আগে পাট থেকে দেশের রফতানি আয়ের সিংহভাগ আসত জানিয়ে পাটমন্ত্রী আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু পাট ও পাটের সাথে সম্পৃক্ত জনগণের উন্নতি চেয়েছিলেন, তিনি পাটের উন্নতির জন্য পাট মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাটজাত পণ্যের রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দিয়েছেন। ৬ মার্চ জাতীয় পাট দিবস ঘোষণা করেছেন। পাট ও পাটজাত পণ্যকে ২০২৩ সালের ‘বর্ষ পণ্য’ ঘোষণা করেছেন।’
সরকার পাটের উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে পাটমন্ত্রী বলেন, পাটশিল্পকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। গার্মেন্টসশিল্পের মতো পাটশিল্পের উন্নয়ন চান এবং এজন্য যা যা করার দরকার তা করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর কাছে পাটশিল্প খাতের কিছু সমস্যা তুলে ধরেন বিজেএমএর চেয়ারম্যানসহ বোর্ড সদস্যরা।
সমস্যাগুলো সমাধানে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ২৮২টি বহুমুখী পাটজাত পণ্যের তালিকা অর্থ মন্ত্রণালয় ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে বলা হয়েছে। এতে করে রফতানিকারকরা বহুমুখী পাটজাত পণ্য রফতানিতে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা পাবে।
পাটশিল্পের বকেয়া ঋণ সুদ-আসলসহ একটি হালনাগাদ তারিখভিত্তিক ব্লক হিসেবে স্থানান্তরের বিষয়ে ২ বছরের মরাটোরিয়াম সুবিধাসহ ১০ বছরে পরিশোধ এবং ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের পরিবর্তে ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট আদায় নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি আরো বলেন, কাঁচা পাটের উপর ২ শতাংশ উৎসে কর, প্রতিবেশী দেশে পাটজাত পণ্য রপ্তানির ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটি আরোপ রহিতকরণ, ২ শতাংশ সরল সুদে পাটশিল্পের কাঁচামাল ক্রয় করার জন্য দেশীয় মুদ্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার একটি জুট সেক্টর উন্নয়ন তহবিল গঠন, কাঁচাপাটের পাশাপাশি পাটজাতপণ্যকে কৃষিজাত পণ্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাটির প্রজ্ঞাপন জারি, পাটমিলগুলোর পুরাতন মেশিনারি স্থানান্তরের জন্য সরকারিভাবে অন্তত ৩০ শতাংশ নগদ সহায়তার বিষয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাজারে পাটজাত পণ্যের বিক্রি বাড়ানো প্রয়োজন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, অভ্যন্তরীণ বাজারে পাট পণ্যের বিক্রি বাড়াতে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০’ শতভাগ বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।
বিদেশের বাজারে পাটজাত পণ্যের বিক্রি বাড়াতে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
মন্ত্রী জানান, বিদেশের বিভিন্ন মেলা এবং বাজারে যাতে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্য ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা সহজেই অংশগ্রহণ করতে পারেন সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের পাটজাত পণ্য ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের মানোন্নয়নের জন্য এর ডিজাইন, কালারিং, নকশা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাটশিল্প খাতকে গার্মেন্টসশিল্পের মতো সুযোগ সুবিধা দেয়া ও উন্নত করার প্রচেষ্টা চলছে।
বিজেএমএর চেয়ারম্যান মো: আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজী নাবিল আহমেদ, ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শমী কায়সার, বিজেএমএর প্রাক্তন ও নবনির্বাচিত পর্ষদ পরিচালকরা এবং পাট ও পাট পণ্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।
সূত্র : ইউএনবি