বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক পরিবেশ সুরক্ষায় প্লাস্টিকের পরিবর্তে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেছেন পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে পাটশিল্পের জাগরণ শুরু হয়েছে।
শুক্রবার রাজধানীর বেইলী রোডস্থ অফিসার্স ক্লাবে পাট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্লাষ্টিকের অতি ব্যবহারের ফলে পরিবেশের ক্ষতি বেড়েছে। পরিবেশ রক্ষায় পাটের তৈরি বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন করছে বাংলাদেশ।
‘আমরা ইতোমধ্যে ২৮২ টি বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন করছি’ উল্লেখ করে মন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন,‘আপনারা পাট মেলায় যাবেন এবং পাট সম্পর্কে জানবেন। সেখানে গেলে কোনো না কোনো পণ্য আপনাদের পছন্দ হবেই। এ বিশ্বাস আমাদের আছে।’
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2020/03/WhatsApp-Image-2020-03-06-at-10.53.52-PM-1.jpeg)
গোলাম দস্তগীর বলেন, পাট হারিয়ে গেছে, এ ধারণা থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে এসেছে। সবাই ভেবেছিল পাটের সুদিন শেষ। কিন্তু পাট হারিয়ে যায়নি, আবারও পাটের সুদিন ফিরেছে। চলতি অর্থবছরে পাটখাতে দেশে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনই এর বড় প্রমাণ ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬ মার্চকে জাতীয় পাট দিবস হিসেবে ঘোষণা দেওয়ায় তাকে (শেখ হাসিনা) কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে পাট পণ্যের বিস্তার ঘটেছে।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2020/03/WhatsApp-Image-2020-03-06-at-10.53.54-PM.jpeg)
তিনি বলেন,‘অনেকে আগে বলতো পাট মরে গেছে, কিন্তু এখন থেকে মনে করতে হবে পাঠ জেগে উঠেছে। কারণ চলতি অর্থ-বছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে আমরা ৬শ’ ১৬ দশমিক ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমান অর্থ আয় করেছি।’ যা গত অর্থবছরের চেয়ে ২০ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি।
অন্যান্যের মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিমু মন্সী ও বস্ত্র ও পাট সচিব লোকমান হোসেন মিয়া অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একটা সময় আমরা পাট দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতাম। কিন্তু আমরা সে অবস্থান ধরে রাখতে পারিনি। এখন আমরা আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছি। আমাদের পাটের সোনালী আঁশের স্বপ্ন শুরু হয়েছে। এটি আমরা নিশ্চিত করবো। আর বেশি দিন নেই যেখানে বিশ্ব বাজারে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হবে।’
টিপু মুন্সি বলেন, ‘অনেকের ধারণা ছিল পাট দিয়ে ছালা-বস্তা হয়। কিন্তু ধারণা পাল্টিয়েছে। পাট দিয়ে এখন বিভিন্ন রকমের গিফট আইটেম তৈরি হয়। আমাদের দেশে যখন বিদেশী কোন কুটনীতিক আসে তখন আমরা তাদেরকে পাটের তৈরি বিভিন্ন গিফট আইটেম দিয়ে থাকি। তারা সেগুলো সে দেশে নিয়ে যায় এবং বিশ্বময় এগুলো তুলে ধরেন। এটাও আমাদের একটা অর্জন।’
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2020/03/WhatsApp-Image-2020-03-06-at-10.53.52-PM.jpeg)
বস্ত্র ও পাট সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, ২০১৬ সালের পর থেকে বিশ্বব্যাপী পাটের উৎপাদন, সরবরাহ চাহিদা ও বাড়তে থাকে। তাই বিশ্বব্যাপী ৬৫টি দেশে পাট ব্যবহার নিশ্চিত করতে পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে। বিশ্ব ফুটবলার রোনালদোর পায়ের সু বাংলাদেশের পাট দিয়ে বাংলাদেশে তৈরি হয়, যেটি আর কোথাও বিক্রি হয় না।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম, পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) সওদাগর মুস্তাফিজুর রহমানসহ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর/সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী ৫ দিনব্যাপী বহুমুখী পাটপণ্যের মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এসময় তিনি মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন।
এর আগে বস্ত্র ও পাট খাতে বিশেষ অবদানের জন্য ১১ টি ক্যাটাগরিতে ১১ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।
পাটের সুতা রফতানিকারক সেরা পাটকল হিসেবে আকিজ জুট মিলস্ লিমিটেড, পাটের সুতা উৎপাদনকারী সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে করিম জুট স্পিনার্স লিমিটেড, বহুমুখী পাটজাত পণ্য রফতানিকারক সেরা প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেড, বহুমুখী পাটজাত পণ্যের সেরা মহিলা উদ্যোক্তা হিসেবে কোহিনুর ইয়াছমিন, পাটবীজ, পাট ও পাটজাত পণ্যের গবেষণায় সেরা গবেষক/বিজ্ঞানী/উদ্ভাবক ক্যাটাগরিতে ড. মো. শহিদুল ইসলাম, সেরা পাটবীজ উৎপাদনকারী চাষি হিসেবে মো. শাহানুর আলম (সান্টু), সেরা পাট উৎপাদনকারী চাষি হিসেবে মো. আরিফ শেখ, পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী সেরা পাটকল হিসেবে আলীজান জুট মিলস লিমিটেড, পাটজাত পণ্য রপ্তানিকারক সেরা প্রতিষ্ঠান নওয়াপাড়া জুট মিলস লিমিটেড, বহুমুখী পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী সেরা পাটকল হিসেবে জনতা জুট মিলস লিমিটেড এবং বহুমুখী পাটজাত পণ্যের সেরা পুরুষ উদ্যোক্তা হিসেবে পুরস্কার পান মো. তৌহিদ বিন আবদুস সালাম।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2020/03/WhatsApp-Image-2020-03-06-at-10.53.53-PM.jpeg)
এরআগে, শুক্রবার সকালে ‘সোনালি আঁশের সোনার দেশ, মুজিববর্ষে বাংলাদেশ’- এই স্লোগানে জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীতে এক বর্ণাঢ্য র্যা লি অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সচিবালয় প্রাঙ্গণ থেকে র্যাদলিটি শুরু হয়ে জিপিও মোড়, পল্টন ও কাকরাইল সড়ক দিয়ে ঢাকা অফিসার্স ক্লাবে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে বস্ত্র ও পাট সচিব ফিতা কেটে এবং পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে র্যািলি ও জাতীয় পাট দিবসের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
পাট অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি), মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল কালাম আজাদ, বিটিএমসির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুজ্জামান সহ অন্যান্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পাট অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন, জেডিপিসি, বিজেএমএ, বাংলাদেশ জুট গুডস এসোসিয়েশন, বিজিএসহ সারাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন পাটকল কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ও শ্রমিকরা র্যাসলিতে অংশগ্রহণ করেন।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা