অবসর সময়ে শখের বশে অনেকে বই পড়তে পছন্দ করেন। অনেকেই বাসায় পশু-পাখি নিয়েও সময় কাটান। নাবিলার পছন্দ পাখি। পাখির সাথে কথা বলতে কিংবা খেলা করতে নাবিলার বেশ ভালো লাগে। কিন্তু পাখিকে শুধুমাত্র ঠিকমত খাওয়ালেই সঠিক যত্নটি আসলে হয় না। মানুষের যেমন একঘেঁয়েমি দূর করতে আনন্দ বিনোদনের প্রয়োজন, ঠিক তেমনি একটি পাখির জন্যেও। সেই ভাবনা থেকে নাবিলা হক তার পাখির জন্য তৈরি করেন রঙ বেরঙের নানা ধরনের খেলনা। খেলনা পেয়ে তার পাখিরা যেন আনন্দে আত্নহারা। আর এই আনন্দ সকল পাখিপ্রেমীর মাঝে ছড়িয়ে দিতেই নাবিলা হক তৈরি করছেন নানা ধরনের পাখির খেলনা সামগ্রী।
দুই ভাই-বোনের মধ্যে ছোট নাবিলা। বর্তমানে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ পড়ছেন। করোনার ঠিক প্রথম দিকে, অনলাইন ক্লাস আর লকডাউনে মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েন নাবিলা। সময়গুলো যেন কোনভাবেই কাটছিলো না। ছোটবেলা থেকেই কেজ বার্ড তার খুব পছন্দ। কিন্তু মানুষের মনকে প্রফুল্ল রাখা যেমন জরুরি, ঠিক তেমনি পাখিদেরও। তাদের আনন্দকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিতেই পাখির জন্য খেলনা তৈরির সিদ্বান্ত নেন। ক্রাফটিং এর কাজটি ছোট থেকেই ভালই পারতেন সেই অভিজ্ঞতা থেকে নিজ হাতে তার পাখির জন্য খেলনা তৈরি করেন। একসময় পাখির জন্য খেলনা তৈরি করা হয়ে গেলো তার আনন্দের কাজ। লকডাউনের সময়গুলো ভালোভাবেই কাজে লাগাতে পেরেছেন তিনি।
সামাজিক পাতায় বার্ডস গ্রুপগুলোতে তার পাখির সাথে খেলনার ছবিগুলো দেখে অনেকেই প্রশ্ন করতেন, এতো সুন্দর টয়গুলো কোথায় পাওয়া যায়? ঠিক এই প্রশ্নটাই যেন নাবিলাকে অনুপ্রাণিত করলো ভিন্ন কিছু করার। তিনি বলেন, “আমিও চাইতাম আমার পাখির মতো যেন বাংলাদেশের সব খাঁচার পাখিগুলো খুব ভালো থাকে, আর তাই পাখিদের ভালো থাকার দায়িত্বটি আমিই নিলাম।”
দায়িত্ব যখন নিয়েছেন তখন সেটা সঠিকভাবে পালন করাটাই প্রথম চ্যালেঞ্জ। তার জন্যও পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। পাখির জন্য কোন উপকরণগুলো নিরাপদ এবং অনিরাপদ, কী কী উপকরণ দিয়ে খেলনা তৈরি করলে পাখিরা খেলতে পছন্দ করবে, এসব জানার পাশাপাশি পাখিদের নিয়ে বিশদ পড়াশোনা করেন নাবিলা।
পাখিদের জন্য হাতে তৈরি নিরাপদ খেলনাই তার উদ্যেগের বিশেষ পণ্য। পাশাপাশি ওদের ভালো রাখার জন্য কিছু বিশেষ ইম্পোর্টেড এক্সেসরিজ রয়েছে। এছাড়াও ইউনিক কিছু প্রোডাক্ট রয়েছে, যেমন পাখিদের জন্য কেজ এর নেমপ্লেট। যারা পাখি পালন করেন তাদের জন্য ব্রেসলেট, কি-রিং, নেকপিস। তবে সবকিছুই পাখিদেরকে কেন্দ্র করে, ওদের ভালো রাখতে এবং কেজ এর পাখিদের নিয়ে দেশের মানুষদের চিন্তাধারণা বদলাতেই নাবিলার এই ভিন্ন উদ্যোগ।
নামকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “পাখি টেম হোক কিংবা না হোক, ওদের সাথে আমার সম্পর্কটা বন্ধুত্বপূর্ণ! ওদেরকে তাই নাম দিয়েছি Feather Friend’s। এছাড়াও আমার উদ্যোগের প্রতিটি পণ্যই ওদের উৎফুল্ল রাখার জন্য। তাই সবমিলিয়ে পেজ এর নামকরণ করেছিলাম “Feather Friend’s Funhouse”
প্রতিমাসে সাধারণত ৩০-৪০টি কিংবা এর চেয়েও বেশি অর্ডার আসে। প্রতিটি অর্ডারে থাকে বিভিন্ন ধরনের একাধিক পাখির খেলনা। আনুমানিক বিক্রির পরিমাণ মাসে গড়ে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকার মতো। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগেই নাবিলার পণ্য পৌছে গেছে। এছাড়াও দেশের বাইরে আমেরিকা, কানাডা, মালয়েশিয়া থেকে অনেকেই রিপিট পারচেজ করেছেন। তবে সরাসরি রপ্তানি হয়নি। সবাই পার্সোনালি পণ্য সংগ্রহ করে থাকেন।
নাবিলা হক উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, “আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা আমার ছোট প্ল্যাটফর্মটাকে আরও বড় করা যেন হাতে তৈরি দারুণ এবং নিরাপদ টয়গুলো যারা পাখি পালন করেন তাদের কাছে সহজলভ্য হতে পারে।”
পাখির যত্নে যেন কোন ত্রুটি না থাকে সেটাও তিনি সবসম মনে করিয়ে দিতে চান। এ বিষয়ে তার পেজ এবং গ্রুপে তিনি কন্টেন্ট শেয়ার করেন যেখানে পাখিদের নিরাপত্তা-অনিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়। অসুস্থ পাখিদের ইমারজেন্সি চিকিৎসার বিষয়েও পরামর্শ দিয়ে সাহায্য কেরেন তিনি।
তিনি বলেন: শুধু খেলনা নয়– পাখির সুস্থতা ও ভালো থাকার জন্য অনেক বিষয় মেনে চলা জরুরি। পাখিদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন ভালো থাকে, এটাও আমার উদ্যেগের সামাজিক দায়িত্ব, যা আমি দায়িত্ব হিসেবে নয় ভালোবেসেই করি।
সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা