পর্যটনশিল্পে অপার সম্ভাবনার নাম বাংলাদেশ

0

সার্থক চিত্রশিল্পীর নিঁখুত চিত্রকর্মের সাথে তুলনা করা হয় বাংলাদেশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি বাংলাদেশকে রূপের রাণী হিসেবে পরিণত করেছে। প্রত্যেকটি এলাকা বিভিন্ন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে বিশেষায়িত। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যুগে যুগে ভ্রমণকারীরা মুগ্ধ হয়েছেন। দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসে ভ্রমণকারী। পর্যটন শিল্পে এক অপার সম্ভাবনার নাম বাংলাদেশ।

এদেশের রয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ ও মিনার, বিশ্বের দীর্ঘতম নিরবচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কোর ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান পৃথিবীর একক বৃহত্তম জীববৈচিত্রে ভরপুর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন, একই সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত অবলোকনের স্থান সমুদ্রকন্যা কুয়াকাটা, দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির সবুজ রঙের নয়নাভিরাম চারণভূমি সিলেট, স্বচ্ছ জলরাশির লালাখাল, পাথর জলের মিতালিতে বয়ে যাওয়া জাফলং ও বিছনাকান্দির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য, পাহাড় ভেদ করে নেমে আসা পাংথুমাই ঝরনা, রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, মিনি কক্সবাজার, হাকালুকি হাওর ও কানাইঘাটের লোভাছড়া, একমাত্র পাহাড়ঘেরা দ্বীপ মহেশখালি, আদিবাসীদের বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি ও কৃষ্টি-আচারসমৃদ্ধ উচ্চ সবুজ বনভূমি ঘেরা পাবর্ত্য চট্টগ্রাম, সমৃদ্ধ অতীতের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ইত্যাদি। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পে উন্নয়নের সব সম্ভাবনা বিদ্যমান।

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বছরে পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ১৪৫ কোটি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৩ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ২০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। আর বিপুলসংখ্যক পর্যটকের প্রায় ৮০ শতাংশ ভ্রমণ করবেন এশিয়ার দেশগুলোতে। ২০২৩ সালের মধ্যে এ শিল্প থেকে ২৯ কোটি ৭০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে অবদান রাখবে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ (সূত্র: ডব্লিউটিটিসি)। বাংলাদেশ যদি এ বিশাল বাজারে টিকে থাকতে পারে, তাহলে পর্যটনের হাত ধরেই বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনীতির রূপরেখা।

বর্তমানে কক্সবাজারকে কেন্দ্র করে নেয়া হচ্ছে নানাবিধ পরিকল্পনা। সম্প্রতি কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাগরের পাড়ে বিশ্বের দীর্ঘতম ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ সড়ক নতুন করে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। পাশাপাশি কক্সবাজারে বেড়াতে আসা বিদেশি পর্যটকদের জন্য করা হচ্ছে পৃথক ট্যুরিস্ট জোন। বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক আকর্ষণে কক্সবাজারে তিনটি পর্যটন পার্ক তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ তিনটি ট্যুরিজম পার্ক হল সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক।

তবে, নানা সমস্যার কারণে সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্রে আগমন ঘটছে মাত্র ৪% পর্যটকের। সেন্টমার্টিনের মতো প্রবাল দ্বীপও হতে পারে পর্যটনের এক অনন্য সম্ভাবনাময় স্থান। এখানকার জেলে সম্প্রদায়ের সহজ-সরল জীবনযাত্রা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। ইউরোপীয় পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য এ স্থানকে মনের মতো করে সাজানো যেতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রসার পর্যটন খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে অনেকগুলো ট্রাভেল গ্রুপ রয়েছে যার মাধ্যমে পর্যটকরা দলবেঁধে ট্যুর প্রোগ্রাম আয়োজন করে। এতে কম সময় ও কম খরচে ভ্রমণপিপাসুরা বেড়াতে পারছেন। শুধু তাই নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সৌন্দর্যগুলোকে তুলে ধরছে দেশের কাছে। তরুণদের কৌতুহলী অ্যাডভেঞ্চারের কারণে অনেক লুকায়িত প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি আজ পর্যটন খাতে নাম লেখাতে সক্ষম হয়েছে৷ ভ্রমণ শেষে অনেকেই তাদের অভিজ্ঞতাগুলো লিখছেন। কিছু কিছু অনলাইন পোর্টাল আবার ভ্রমণ বিষয়ক লেখা প্রতিযোগিতা আয়োজন করে, যেখানে পুরষ্কারের ব্যবস্থাও থাকে। এ থেকে ভ্রমণপিপাসুরা আরো নিত্য-নতুন তথ্য পাচ্ছে ও তাদের মধ্যে ভ্রমণের আগ্রহ বাড়ছে। সেই সাথে আবিষ্কৃত হচ্ছে দেশের আনাচে কানাচে অবস্থিত নতুন নতুন পর্যটন স্থানসমূহ। এভাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রসার পর্যটন খাতের প্রচার ও প্রসারে অসামান্য অবদান রাখছে। সরকারের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তা আরও বাড়বে।

সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here