উদ্যোক্তা- সারোয়ার হোসেন

পরিবেশকে সুন্দর রাখতে হবে, টয়লেট ব্যবহার হতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত। এই দুটি কমিটমেন্টই পরিবেশ সচেতন উন্নয়ন কর্মী সারোয়ার হোসেনকে উদ্যোক্তায় পরিণত করেছে। গণমানুষের জন্য বিশ্বের সবচাইতে উন্নত প্রযুক্তির তথা কম খরচে, টেকশই এবং চিরাচরিত দুর্গন্ধহীন  বায়োফিল টয়লেট নির্মানের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে হয়ে উঠলেন বদ্ধ পরিকর।

২০১৬ সালের জানুয়ারিতে যাত্রা শুরু। ফেব্রুয়ারিতে ৪টি বায়োফিল টয়লেটের অর্ডার আসলো। কল্যাণপুর নতুন বাজারে নিজ উদ্যোগে একটি বায়োফিল টয়লেট স্থাপন করলেন তিনি। এরপর মিরপুরের ধামালকোটা থেকে অর্ডার আসলো তিনটি বায়োফিল টয়লেটের।

প্রকৃতির লাঙ্গল-কেঁচো

উদ্যোক্তা সারোয়ার হোসেন নিজ উদ্যোগে বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় নির্মান করলেন ৩টি টয়লেট। কক্সবাজারে উখিয়া থেকে আসলো ১৩৫ টি টয়লেটের অর্ডার। সবাই ভীষণ আগ্রহী হয়ে ওঠে স্বাস্থ্যসম্মত বায়োফিল টয়লেট সম্পর্কে।

বায়োফিল টয়লেট সর্বপ্রথম উদ্ভাবন করেন মি. কিওকো আনোর। মি. কিওকো আনোর বাংলাদেশ পরিদর্শণ করে উন্নয়ন সংস্থা সমূহের সাথে নানান টয়লেট স্থাপনা নিয়ে কাজ করার পর সেখান থেকেই এক সুনিপুণ অভিজ্ঞতা অর্জিত হয় উদ্যোক্তা সারোয়ার হোসেনের।

বায়োফিল টয়লেটের কাঁচামাল

পরিবেশ বান্ধব বায়োফিল টয়লেট নির্মান এবং একে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ওয়াসা ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং, আইটি এন্ড বুয়েট এবং নানা সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ, বৈঠক এবং আলোচনা উদ্যোক্তাকে দেয় এক অনন্য গতি। ভীষণ সাড়া মিললো উদ্যোক্তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে পরিবেশ রক্ষায়।

আমাদের দেশে প্রচলিত টয়লেটের ট্যাঙ্ক বা গর্ত নির্দিষ্ট সময়ের পর মল দ্বারা পূর্ণ হয়ে যায়। যা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের পরিবেশে অথবা তা ভরাটকৃত স্থান থেকে তুলে নিয়ে ফেলতে হয় অন্য কোনো স্থানে। জনস্বাস্থ্যের জন্য এটা মারাত্মক ক্ষতিকর এবং হুমকি। এ থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়, ছড়ায় নানান রোগজীবাণু।

বায়োফিল টয়লেটে পানি এবং মলের যে বিভাজন ছাকনী সে ছাকনীর পর প্রকৃতির লাঙল কেঁচো মানব বর্জ্যকে সার’এ পরিণত করে। এ প্রযুক্তিতে কোন দুর্গন্ধ ছড়ায় না, টয়লেট ভরে গিয়ে উপচে পড়েনা।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বায়োফিল টয়লেট

পার্বত্য এলাকায় বায়োফিল টয়লেট স্থাপনের পর নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহারের উদ্যোগে ব্যাপক সাড়া পান সারোয়ার হোসেন।

উঞ্চিপাং ক্যাম্পে নির্মান করেন প্রায় ৫০০ টি বায়োফিল টয়লেট, কুতুপালং এ ৮০ টি বায়োফিল টয়লেট এবং বালুখালিতে করেন ২০০ টি বায়োফিল টয়লেট নির্মাণ।
১ লক্ষ ৪৪ হাজার বর্গকিলোমিটারে বাংলাদেশ, পুরো দেশজুড়ে একটিও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশের ক্ষতিকারক টয়লেট থাকবে না, এমনই স্বপ্নভরা চোখে বাস্তবতার দিকে পথচলা পরিবেশ সচেতন উদ্যোক্তা সারোয়ার হোসেনের।

উদ্যোক্তার তৈরি- অস্থায়ী টয়লেট

উদ্যোক্তা বার্তাকে সারোয়ার হোসেন জানান, ইতমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩ হাজার বায়োফিল টয়লেট বিক্রি করেছেন। তিনি আরও জানান, বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বায়োফিল টয়লেট সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে পাশাপাশি ভাসানটেক থেকে ৪০০ বায়োফিল টয়লেটের অর্ডার পেয়েছি যা আগামী বছরের মধ্যে সরবরাহ করতে হবে। সাম্প্রতিককালে কক্সবাজারে উন্নয়ন মেলায় অস্থায়ী ৮টি বায়োফিল টয়লেট স্থাপন করেন এবং বিভিন্ন ধরণের মেলা বা যেকোনো ইভেন্টে বায়োফিল টয়লেট নিয়ে কাজ করবেন। এছাড়াও আগামী ৬ থেকে ৮ নভেম্বরে চীনের বেইজিং এ পরিবেশ বান্ধব টয়লেট বিষয়ক একটি মেলায় অংশ নেয়ার আমন্ত্রন পেয়েছেন বলেও জানান উদ্যোক্তা সারোয়ার হোসেন।

খুরশিদা পারভীন সুমী 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here