নীলোফার- মুসলিম ফ্যাশনে মালয়েশিয়ার এক বিস্ময়কর নাম

0

কীভাবে একটা মৌলিক চিন্তাকে সামাজিক মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যবসায় পরিণত করা যায়? নীলোফার-এর ফ্যাশন স্টাইলবুক থেকে শুধু একটি অংশ দেখে আসলেই জানা যাবে সেই উত্তর।

মাত্র ২৫ বছর বয়সে শালীন পোশাকের ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘নীলোফার’ চালু করেন মালয়েশিয়ান নারী নীলোফা। হিজাব, প্রার্থনার পোশাক এবং অন্যান্য আনুষাঙ্গিক বিক্রি করে তিনি তার ব্যবসাকে সারা বিশ্বের ভক্তদের মাঝে এক মিলিয়ন-রিঙ্গিত সাম্রাজ্যে রূপান্তর করতে সক্ষম হন। তিনি এখন ফ্যাশন এবং বিলাসপণ্যের জায়ান্টদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বসেন এবং ডিওর, ল্যানকোম ও স্বরোভস্কির মতো আইকনিক হয়ে উঠেছে তার ব্র্যান্ড।

নীলোফা কে?
২০০৯-১০ সালে দেউই রেমাজা (মিস টিন মালয়েশিয়া)-য় বিজয়ী হয়ে নীলোফা বেশ কয়েকটি টেলিভিশন প্রোগ্রামে উপস্থিতির মাধ্যমে তারকাখ্যাতি পেয়েছিলেন। ২০১২ সালে তিনি ইনস্টাগ্রামে সক্রিয় হন এবং এই প্ল্যাটফর্মে তার ফলোয়ারের সংখ্যা দাঁড়ায় আট মিলিয়ন (৮০ লাখ) যাদের মধ্যে নীলোফা নিজের শক্তিশালী উপস্থিতি তৈরি করতে সক্ষম হন।

তাকে আকর্ষণীয় করেছে তার অনন্য স্টাইল এবং তা নারী, বিশেষ করে তরুণ মুসলিম জনগোষ্ঠির কাছে পৌঁছানোর ক্ষমতা থেকে এসেছে। জেনারেল এম নামে পরিচিত সহস্রাব্দের মধ্যবিত্ত উদার ধর্মীয় চিন্তার ভোক্তাদের এই দলটি ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনা প্রকাশ করেছে। ২০১৪ সালে তার ব্র্যান্ড ‘নীলোফার’ যাত্রা শুরু করে। ২০৩০ সালের মধ্যে তার গ্রাহক সংখ্যা তিনগুণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মালয় মেইলের মতে, তার উদ্যোগ শুধুমাত্র ইনস্টাগ্রাম থেকেই এক বছরের মধ্যে ৫০ মিলিয়ন মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছে। তরুণ নারী উদ্যোক্তার স্টাইলিশ হিজাব কালেকশন একটি সৃজনশীল প্রবৃদ্ধির মানসিকতার সাথে ‘নীলোফার’কে শিল্পের মধ্যে একটি শক্তিশালী প্রতিযোগী হিসাবে চিহ্নিত করেছে যে প্রতিযোগী অনেক বড় বড় ব্র্যান্ডকে ছাপিয়ে গিয়ে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।

একটি হিজাব সাম্রাজ্য গড়ে তোলা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নারী উদ্যোক্তারা সবসময় বলেন যে একটি পুরুষকেন্দ্রিক সমাজে একজন নারীর জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠাতো অনেক দূরের বিষয়, এ নিয়ে কথা বলাটাও কতোটা চ্যালেঞ্জিং তা শুধু উদ্যোক্তাই বুঝতে পারেন। অনেক কম সংখক ব্যবসাই পারে অসামান্য সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে। এক্ষেত্রে নীলোফা অনন্য। শক্তিশালী সামাজিক অডিয়েন্সের সাথে সংযুক্ত থাকার কারণে নীলোফা বুঝে নিয়েছিলেন যে গ্রাহকের এক্সপেরিয়েন্স জানাটা কতোটা প্রয়োজন।

ভোক্তাদের সাথে পুরো যাত্রার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে নজর রেখে ‘নীলোফার’ শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। চলুন কারণগুলি দেখে নেই:

১. শক্তিশালী গ্রাহক গোষ্ঠী:
সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় নীলোফা’র ব্যক্তিত্ব হিসেবে আত্মপ্রকাশ যা তার উপস্থিতি এবং ধারাবাহিক দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগে আরও শক্তিশালী হয়েছে এবং গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। সৃজনশীল ফ্যাশন এবং ইনস্টাগ্রাম জনপ্রিয়তার ফলে অনেক গ্রাহক ব্র্যান্ডের প্রতি গভীর আগ্রহ প্রকাশ এবং সমর্থন করেছেন। ‘নীলোফার’-এর কাস্টমার এনগেজমেন্ট কৌশলও গ্রাহকদের অনুপ্রাণিত করেছে। প্রতিটি টাচ পয়েন্টই নির্বিঘ্ন এবং ব্যবহারকারীবান্ধব– সেটি একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট হোক কিংবা বিজ্ঞাপন, কিংবা হোক সেখান থেকে সুবিধাজনক চেকআউট বিকল্প৷

২. ইন্টার‌্যাকশন ও কার্যকর বার্তা 
২০২০ সালে নীলোফা একটি অনুপ্রেরণামূলক ব্র্যান্ডের উদ্দেশ্যে “গো ফার” চালু করেন যাতে মানুষজন পরিশীলিত ফ্যাশন সম্পর্কে কথা বলতে পারেন এবং তারা তাদের নিজস্ব পরিচয়ের সাথে সেটা সম্পৃক্ত করতে পারেন। এই নতুন ব্র্যান্ডিং ধারণাটি বিশ্বব্যাপী মুসলিম নারীদের একটি সম্প্রদায়কে সামনে নিয়ে আসে, যারা সবসময় শালীন ফ্যাশনের পোশাক পরে গর্বিত এবং আত্মবিশ্বাসী বোধ করেন।

স্টাইল আইকন এবং উদ্যোক্তা নীলোফা বলেন, “যতবার আমি আন্তর্জাতিক ইভেন্টগুলোতে উপস্থিত হয়েছি– বিশেষ করে ফ্যাশন উইকগুলোতে– আমি সর্বদা পরিমিত ফ্যাশনের প্রকৃত অর্থ ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব বহন করি।” প্রতিটি ফ্যাশন শোতে অংশগ্রহণ করে তিনি এই বিশেষ ফ্যাশন সম্পর্কে আরও বেশি প্রচার করতে সক্ষম হয়েছেন।

৩. সার্বজনীন অভিজ্ঞতা শেয়ার
খুচরা বিক্রিতে মালয়েশিয়ায় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোই এখন প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। নীলোফা ডিজিটাল চ্যানেলের গুরুত্ব বোঝেন এবং তাই ‘নীলোফার’-এর ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্লাটফর্মের সুবিধাগুলোকে কাজে লাগিয়ে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন, এমনকি ‘শপি সেলিব্রিটি স্কোয়াড’-এর সাথেও আছেন।

৪. কোলাবরেশন:
বৈশ্বিক মহামারীর পর থেকে ক্রস-বর্ডার ই-কমার্সের উন্নতির সাথে সাথে নীলোফা তার বিতরণ নেটওয়ার্ক প্রসারিত করতে মালয়েশিয়া ছাড়াও সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিক্রেতাদের সাথে কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত ৭০০টিরও বেশি ডিস্ট্রিবিউটরসহ অনলাইনে বিক্রি করার এবং বিশ্বের যেকোন স্থানে ডেলিভারির ক্ষমতা নিয়ে ‘নীলোফার’ একটি বিশ্বব্যাপী ব্রান্ডে পরিণত হচ্ছে৷

ফ্রান্সের একটি সংস্থার সাথে নীলোফা চুক্তি করেছেন, যেখানে তিনি ইউরোপীয় বাজারে ফেস-অফ-হিজাব ফ্যাশনের আইকন হিসেবে পরিচিত হবেন। আপাতত তিনি ফ্রান্স, মিলান (ইতালি) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন-শোতে অংশ নেবেন। ওইসব জায়গায় তিনি নিজের ব্র্যান্ডকে আরও ভালোভাবে তুলে ধরতে পারবেন। একবার তিনি একটি শক্তিশালী কাস্টমার বেস প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে ইউরোপীয় মূলধারার বাজারেও প্রতিষ্ঠিতি হবে তার ব্র্যান্ড।

‘নীলোফার’ তার সকল শিপিং প্রয়োজন পরিচালনা করতে ডিএইচএল এক্সপ্রেসের সাথে এক্সক্লুসিভভাবে কাজ করে। এই অংশীদারিত্ব নীলোফাকে তার গ্রাহকদের জন্য একটি টেকসই এবং ইতিবাচক রিটেইল অভিজ্ঞতা দিতে সক্ষম।

নীলোফা একজন সফল নারী উদ্যোক্তা যিনি শুধু মালয়েশিয়ায় নয়, বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন, যা অনেককে অনুপ্রাণিত করতে পারে। ‘নীলোফার’-এর প্রতিষ্ঠাতা দেখিয়েছেন যে একটি ব্যবসাকে ক্রমাগত তার গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে, ক্রয়ের টাচ পয়েন্ট প্রসারিত করতে হবে, অর্থপূর্ণ কথোপকথন চালাতে হবে এবং উন্নতির জন্য স্মার্ট কাজের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

ডেস্ক রিপোর্ট,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here