ভেনচার ক্যাপিটাল রিসার্চ ডেটাবেজ পিচবুক থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ একটি পরিসংখ্যান(২০১৭) বলে, পৃথিবীর মাত্র দুই শতাংশ নারীর কাছে তাদের ব্যবসা পরিচালনার মূলধনটি থাকে। এমনকি এ গবেষনা থেকে আরো জানা গেছে বিনিয়োগকারীরা একজন পুরুষ উদ্যোক্তার উপর তাদের সফলতার সম্ভাব্যতার প্রতি দৃষ্টি রেখে যখন বিনিয়োগ করে ঠিক তখনই একজন নারীর ক্ষেত্রে তার চিত্রটি যেন মুদ্রার এপিঠের ঠিক উল্টো। শতকরা হিসেবে গুটিকয়েক বিনিয়োগকারী ব্যতীত সকলেই নারী উদ্যোক্তার উপর বিনিয়োগের সময় সর্বপ্রথম যাচাই করেন স-প্রমান ট্র্যাক রিপোর্ট। যা একজন নবীন নারী উদ্যোক্তার জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রায় অসম্ভব।
যেখানে পুরো পৃথিবী দিচ্ছে প্রতি ১০০জনে ২জন উদ্যোক্তা হয়ে উঠার পরিসংখ্যান, সেখানে বাংলাদেশের চিত্রটি আশার আলো দেখায়। বাংলাদেশে মোট উদ্যোক্তার শতকরা ৩১.৬১ ভাগ নারী। নারী উদ্যোক্তা তৈরীর ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। পরিবার, আর্থসামাজিক অবস্থান, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ, পারস্পরিক সহযোগিতা, আর্থিক সহায়তা এবং ব্যবসায়িক পরিবেশ এর দিক থেকে অবস্থা অনুকূলে না থাকলেও নানান প্রতিকূলতার সাথে মোকাবেলা করে বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তারা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের ব্যবসা দৃঢ়তার সাথে। ব্যবসার সুযোগ পেয়ে নয়, নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদ থেকেই তাদের সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠা।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় নারী উদ্যোক্তার এই বিপুল সম্ভাবনা কেবল শহরকেন্দ্রিক নয়। বরং বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এসএমই ক্লাস্টারগুলো নিয়ে একটু পড়াশুনা করলেই দেখা মিলবে হাজার হাজার নারী উদ্যোক্তার। যারা সফলতার সাথে এগিয়ে যাচ্ছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে। এছাড়াও এসএমই এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্ষেত্র যেমন চামড়া শিল্পের দিকে তাকালে দেখা যায় নারীদের জয়জয়কার।
বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্যের বেশিরভাগই আসে হাজারীবাগ, বংশাল, সিদ্দিকবাজার, ছুড়িটোলা, মারিটোলা থেকে। এসব এলাকাগুলো পরিদর্শন করলে দেখা যায় এই এলাকাগুলো কর্মের জন্য নারীবান্ধব নয়। কিন্তু বিভেদ ভেঙে বর্তমানে অসংখ্য নারী উদ্যোক্তা তাদের ব্যবসাক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে এই চামড়াশিল্পকে। এই ক্ষেত্রকে সমৃদ্ধ করতে এবং নিজেদের পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে তাদের নানান সামাজিক ও মানসিক প্রতিকূলতাকে জয় করে নিজেদের কাজ সম্পাদন করতে হয়৷ বিশেষ দিবস ও উৎসবকে কেন্দ্র করে পণ্যের চালান যখন বাড়তিমুখী তখন রাত জেগে কাজ করতে হচ্ছে এর নজির আছে অগণিত। এসময়ে দীর্ঘসময় কারখানায় কাজ করার কারনে পারিবারিক সহযোগিতা মিললেও প্রতিবেশীদের কাছে সহযোগিতা ও সহমর্মিতা মেলে কদাচিৎ। তবুও সবকিছুকে সামলে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা, স্বাবলম্বী হচ্ছেন নিজেরা, গড়ছেন কর্মসংস্থান।
কেবল চামড়াজাত শিল্পের ক্ষেত্রেই নয়! জুট, হ্যান্ডিক্রাফট, প্রিন্টিং, ব্লক-বাটিকে দেশীয় পোশাক, নকশীকাঁথা, তাঁতশিল্প, ট্রাভেল এজেন্সী, তথ্য-প্রযুক্তি, শিক্ষা, চিকিৎসা কোথায় নেই নারী উদ্যোক্তারা! দেশের উন্নয়নের সকল এসএমই খাতে তারা হয়ে উঠেছেন দুর্জয় কাণ্ডারী। নানা প্রতিকূলতাকে জয় করে এগিয়ে যাওয়া এই নারী উদ্যোক্তারা নারী ক্ষমতায়নের দূত হয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন একটি বলিষ্ঠ কর্মীবাহিনীকে, গড়ে তুলছেন দক্ষ জনশক্তি। আজ নারী উদ্যোক্তা দিবসে উদ্যোক্তা বার্তা অভিবাদন জানায়, সকল সফল নারী উদ্যোক্তাদের, যারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে দেশ ও দেশের বাইরে পর্যন্ত বাংলাদেশকে পরিচিত করছেন তাদের কর্মে ও সাফল্যে।
সাদিয়া সূচনা