বাগেরহাটের রোজী আহমেদ। কাজ করছেন পরিবেশবান্ধব প্রোডাক্ট নারকেলের মালা থেকে তৈরি ফুলের টব, মাজনি, নারকেলের আঁশের তৈরি দশ মডেলের পাখির বাসা। সঙ্গে পাটের তৈরি পাখির বাসা, হ্যাঙ্গিং প্লান্টার, এবং কয়ার ফ্লাওয়ার বাস্কেট। পণ্যগুলো তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে নারকেলের আঁশ, নারকেলের মালা, বিভিন্ন ধরনের সুতা ও বাঁশ, নেট পুথি চট, ব্যানানা ফাইবার এবং পাট।
উদ্যোক্তা রোজী আহমেদ এর প্রতিষ্ঠান ‘অর্গানিক প্রোডাক্টস’ এর পরিবেশবান্ধব পণ্যগুলো সারা দেশে তো বটে দেশের বাইরেও উপহার হিসেবে পাঠিয়েছেন অনেকে। এছাড়াও নেদারল্যান্ডস, জার্মানি এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় স্যাম্পল পাঠানো হয়েছে। আশানরূপ ফল পেলে আগামীতে এই দেশগুলোতে পণ্য পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে উদ্যোক্তার। খুচরা এবং পাইকারি দুইভাবে ক্রেতাদের পণ্য দিয়ে থাকেন রোজী আহমেদ। তবে খুচরা থেকে এই উদ্যোক্তার পাইকারি ক্রেতার সংখ্যাই বেশি। যারা নার্সারির সাথে সম্পৃক্ত তারাই ‘অর্গানিক প্রোডাক্টস’ এর রিপিট কাস্টমার। এছাড়াও পাখির বাসা যারা নেন তারা উপহার হিসেবে অন্যকে দেওয়ার জন্যেও পুনরায় পণ্য ক্রয় করে থাকেন।
উদ্যোক্তা রোজী আহমেদ বলেন, “আমার শ্বশুর বাড়ির পারিবারিক ব্যবসা হলো তারা নারকেলের আঁশ থেকে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করেন। আমার ভাসুর এবং বর এই কাজ পরিচালনা করেন। তারা ফার্নিচারের দোকানে তাদের বেশির ভাগ পণ্য সরবরাহ করেন। এছাড়াও দেশে এবং দেশের বাইরে তাদের পণ্য যায়। যদিও করোনা পরিস্থিতির পর বাইরে যাওয়ার পরিমাণ সীমিত। তাদের দেখে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। এরপর আমার সন্তান বড় হয়ে গেলে আমি বিষয়টি তাদের জানাই যে আমিও কাজ করতে চাই। তারা শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমাকে সব ধরনের সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন। আমি যাতে আরো ভালো করতে পারি সবসময়ই তারা আমাকে পরামর্শ দেন, উৎসাহ দেন। আজ আমার প্রতিষ্ঠানে তৈরি পণ্য দেশের নানা প্রান্তে যাচ্ছে এগুলো স্বাচ্ছন্দ্যে আমি করতে পারছি। পরিবার আমাকে ভীষণভাবে সহযোগিতা করছে। প্রতিটি উদ্যোক্তার পরিবারের সাপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি বলেন: ২০২১ এর শেষ দিকে ৩০ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে উদ্যোক্তা জীবনে এসেছিলাম। প্রথম দিকে যে পণ্য গুলো তৈরি করতাম খুব একটা সাড়া পেতাম না। তবে হাল ছাড়িনি। নতুন-নতুন পণ্য তৈরির চেষ্টা করে গেছি। যখন পাখির বাসা তৈরি করলাম আমার উদ্যোগ ঘুরে দাঁড়ালো। প্রতিনিয়ত আমাদের কারখানায় অন্যান্য প্রোডাক্টের সাথে অসংখ্য পাখির বাসা তৈরি হচ্ছে। আর পাখির বাসার বেশিরভাগ পাইকারিতে বিক্রয় হয়। আমার খুব স্বস্তি লাগে এটা ভেবে ‘আমার পণ্য নিয়েও অন্যরা ব্যবসা করছেন, উপার্জন করছেন।’ এছাড়াও এখন অনেক পরিবার আছেন যারা নিজেদের বাসা অফিসে নান্দনিকতা নিয়ে আসতে চান। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব প্রোডাক্ট খুঁজে থাকেন তারাও আমার ক্রেতা।
বাসার নিচতলায় রোজী আহমেদ এর ‘অর্গানিক প্রোডাক্টস’ এর কারখানা। বিভিন্ন সেক্টরে ৩০ জন সহযোদ্ধা কাজ করছেন। তার প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ সহযোদ্ধাই নারী। তারা নিজেদের সংসারের কাজ সামলে কারখানায় এসে কাজ করতে পারেন। যাদের বাচ্চা রয়েছে তারাও যাতে নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারেন সেই ব্যবস্থাও রেখেছেন রোজী আহমেদ। দক্ষিণাঞ্চলে নারকেলের ফলন ভালো হওয়ায় কাঁচামাল সংগ্রহ করতে খুব একটা ঝক্কি পোহাতে হয় না। এছাড়াও তার স্বামী এবং ভাসুর কাঁচামাল সংগ্রহ এবং কুরিয়ারের বিষয়ে তাকে বড় সাপোর্ট দিয়ে থাকেন।
এই উদ্যোক্তার ছেলেবেলা কেটেছে বাগেরহাট জেলার কোনডোলা গ্রামে। বর্তমানে বৈবাহিক সূত্রে বাগেরহাট সদরের বাসাবাটিতে বসবাস করছেন। আগামীতে বেশ কিছু নতুন পণ্য প্রতিষ্ঠানে যুক্ত করে আরও নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চান বাগেরহাটের এই স্বপ্নবাজ উদ্যোক্তা রোজী আহমেদ।
তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা