নাতাশা হায়াৎ একজন ডিজাইনার এবং উদ্যোক্তা। ২০০৮ সাল থেকে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নাতাশা নিজের ডিজাইন করা পোশাক তৈরী এবং এক্সিবিশনের মধ্য দিয়ে স্বীয় উদ্যোগ শুরু করেন ।
বাংলাদেশের স্বনামখ্যাত তারকা পরিবারের কনিষ্ঠ এই কন্যা সদস্য “আইরিসেস” তার উদ্যোগ এর নামকরণ করেন ভ্যানগগ এর একটি পেইন্টিং থেকে।
বুঝতে নিশ্চই কষ্ট হচ্ছেনা নামটি কে দিয়েছেন নাতাশা হায়াৎ কে !
জী, ঠিক ধরেছেন বিপাশা হায়াৎ। বাংলাদেশের একজন সুপার সেলিব্রিটি তারকা, অভিনেতা এবং আঁকিয়ে, ভীষণ জনপ্রিয় শিল্পী এবং টিভি জগতের প্রিয়মুখ বিপাশা হায়াৎ এর সকল পোশাক ডিজাইন করেন তার ছোট বোন নাতাশা হায়াৎ- সেই সাথে নাতাশার ডিজাইন করা পোশাকের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা প্রিমিয়াম ক্রেতার কাছে।
আরেকদিকে, অর্থনীতিতে পড়াশোনা সম্পন্ন করে ম্যানেজমেন্ট এবং ব্যবসা প্রশাসনে বেশ কয়েকটি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি সম্পন্ন করা এক চৌকস উদ্যোক্তা, রোখসানা আফতাব লোপা।
লোপা দেশের শীর্ষ স্থানীয় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে কিছুদিন চাকরী করলেও উদ্যোক্তা হবার দৃঢ় প্রত্যয় নেন এবং ছাত্র অবস্থা থেকেই নিজে কিছু করে স্বাবলম্বী হবার ফাইনাল কাউন্ট ডাউন সম্পন্ন করেন নিজ উদ্যোগ-ব্যবসাতে।
২০১৩ সালে দুই উদ্যোক্তা নাতাশা এবং লোপা এই দুজনার দেখা হয় তাদের সন্তানদের স্কুলে। সমমনা দুই নারী উদ্যোক্তা সম্মত হলেন একত্রে নিজেদের উদ্যোগ পরিচালনা করবার।
আইরিসেস মেললো তার নতুন ডানা মাত্র ২২০ স্কয়ার ফিটে গ্রীণ রোডে। মাত্র ১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ। ৫০ টি পোশাক বানিয়ে প্রথম বানিজ্যিক সজ্জায় “আইরিসেস” ডিজাইনারস হাউজ, দুই উদ্যোক্তার স্বপ্নের বাস্তবতা ধরা দেয় উদ্যোক্তা সত্ত্বায়।
মাত্র ৪ বছরে আইরিসেস এর পোশাকের কদর এবং চাহিদা এমন এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায় যেখানে ব্যবসার মূলধন বাড়াতে বাধ্য হন দুই উদ্যোক্তা। পোশাকের অবিরত চাহিদা এবং ব্যবসায়ে সমৃদ্ধি ঘটতে থাকে বাড়তে থাকে “আইরিসেস” এর পোষাক উৎপাদন এবং বিনিয়োগ ।
নাতাশার নজর কাড়া সব ডিজাইন চারিদিকে। বর্ণীল ফ্যাশনেবল আর ট্রেন্ডি পোশাক ডিজাইন করেন নাতাশা। আর সেই ডিজাইন সম্পূর্ন পোশাক হিসেবে উৎপাদন এবং তৈরীর পুরো প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট এবং ব্যবসায় প্রশাসন নিয়ে কাজ করেন লোপা।
ওদিকে ডিজাইন ডিপার্টমেন্ট এর ক্রিয়েটিভ ভুবনের কাজ শেষ করে,সম্পূর্ন বিপরীত সত্ত্বা নিয়ে আইরিসেস এর ব্র্যান্ড এন্ড মার্কেটিং দেখেন বহুজাতিক টেলকোতে বিপণন বিভাগের এক সময়ের চৌকস কর্পোরেট বর্তমানের সফল নারী উদ্যোক্তা নাতাশা হায়াৎ।
হাজার খানেক ডিজাইনে আজ ঋদ্ধ, সমৃদ্ধ দুই সফল নারী উদ্যোক্তার উদ্যোগ আইরিসেস। দেখতে দেখতে ৬ বছরে বনানীর ১২ নম্বর রোডে আইরিসেস স্থান করে নিলো তার দ্বিতীয় শাখা।
২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ শুক্রবার “আইরিসেস” বনানীর ১২নম্বর রোডে তার শাখাটি নতুন সজ্জায় বিশ্বমানের ফ্যাশন হাউজে করলো আত্মপ্রকাশ।
২২০ স্কয়ার ফিটে যাত্রা শুরু করে আজ “আইরিসেস” নিজ যোগ্যতায় ঢাকার বনানীর অভিজাত বানিজ্যিক এলাকায় ২০০০ স্কয়ার ফিটে একটি ব্র্যান্ড, ডিজাইনার্স হাউজ, যা দুই উদ্যোক্তা পরিচালনা করছেন।
ভীষন ভালো সেল থাকে ১২ মাসে ১৩ পার্বনের দেশ বাংলাদেশের সকল উৎসবে। চার থেকে পাঁচটি করে একটি পোশাক ডিজাইনের প্রোডাকশন হয়।
আজ কর্মে নারীর অগ্রযাত্রার যুগ। রাজধানী ঢাকায় এবং দেশের অন্যান্য বিভাগে অনেক প্রশাসন, কর্পোরেট, অফিস, আদালত, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুলে কর্মরত আছেন অনেক নারী, অনেক তরুণ। নিজেদের স্মার্ট আউটলুকে, ট্রেন্ডি, মুড, কালার মোড, টোন এবং সিজন ওয়াইজ পোশাকে যারা নিজেদের আবিষ্কার করতে চান প্রতিনিয়ত, তাদেরই প্রথম এবং প্রায়োরিটির পছন্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে আইরিসেস।
কর্মভুবনে নারী এবং শিক্ষাক্ষেত্রে তরুণী যারা চান নিজেদের সম্পূর্ন আলাদা ব্যক্তিত্বে সবাই মূল্যায়ন করবে, তাদেরই বিশাল অংশ আমাদের ক্রেতা, বললেন নাতাশা হায়াৎ।
লোপা জানালেন, আজ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে আইরিসেস এর পোশাক এর কদর বাড়ছে। দেশে চাহিদা কেমন ক্রেতাদের কাছে? জিজ্ঞেস করতে লোপা স্মিত হেসে জানালেন, “চট্টগ্রাম থেকে সকালের ফ্লাইটে এসে বিকেলের ফ্লাইটে আমাদের পোশাক কিনে রওনা হন আমাদের কাস্টমার”।
আইরিসেস এর নতুন এই শোরুমে আছে ডিজাইন জোন লাগোয়া এক কফি লাউঞ্জ। ক্রেতারা প্রিমিয়াম শপিং টাইমে চাইলে একটু কফি খেয়ে জমিয়ে আড্ডা দিয়ে শপিং সেরে ফিরবেন।
সাক্ষাৎকার চলাকালীন নাতাশা হায়াৎ কে দেখা গেল একটু পরপর উঠে যাচ্ছেন, সাজাচ্ছেন বিভিন্ন গহনা জুয়েলারি জোনে গিয়ে। আসলে শিল্পী মনতো, সাজে যেমন, সাজায় তেমন।
ইতিমধ্যে ২০ টির মতো এক্সক্লুসিভ এক্সিবিশন সম্পন্ন করেছে আইরিসেস। দেশের বাইরে লন্ডনে হয়েছে ৩টি এক্সিবিশন।
৫০ জন কর্মীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন দুই উদ্যোক্তা নাতাশা-লোপা, সেই সাথে হাজারের ওপর প্রিমিয়াম কাস্টমার ক্লায়েন্ট আজ আইরিসেস এর লিস্টে।
বনানী ১২ নম্বর রোড ৪৪ নম্বর ভবন ৪ তলায় নতুন আইরিসেস এর শো রুমে পোশাকের মূল্য কি ভীষন চড়া?
এমন প্রশ্নের জবাবে সফল নারী উদ্যোক্তা লোপা ইউবি প্রেস কে বলেন, “আমরা ভীষন প্যাশন নিয়ে, যত্ন দিয়ে ডিজাইন থেকে প্রোডাকশনের প্রতিটি ধাপ পার করি। কিউ সি শেষ করে একটি পোশাক ডিসপ্লেতে সাজাই। আমরা খুব চড়া নই পোশাকের মূল্যে, আবার আমরা ভীষন সহজলভ্যও নই ডিজাইন অনুযায়ী পোশাকের মূল্যে, আমরা একটি প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড। আজ মানুষের ফ্যাশন সচেতনতা বেড়েছে, বেড়েছে ক্রয় ক্ষমতা। যুগের ফ্যাশনেবল ক্রেতাদের ভীষন রুচিশীল, নান্দনিক, বর্নিল পোশাকটি আমরা তৈরি করছি । প্রিমিয়াম চয়েজ, প্রিমিয়াম শপিং, দ্যাটস হোয়াট আইরিসেস ইজ”।
বিপ্লব আহসান