নবম শ্রেণির ছাত্র হয়েও সেজান একজন উদ্যোক্তা

0
উদ্যোক্তা সেজান

ছোটবেলা থেকেই মায়ের সাথে রান্নাঘরে থেকে টুকটাক রান্নাও আয়ত্ত্ব করে নেয় সেজান। বইয়ের একটা অধ্যায় শেষ হলেই উপহার হিসেবে এক কাপ ময়দা দেওয়া হতো তাকে। অল্প অল্প করে জমানো সেই ময়দা দিয়ে টুকটাক এক্সপেরিমেন্ট করতো সাত আট বছরের ছেলেটি। মা-খালাদের দেখতো চুলায় কেক বানাতে, সেখান থেকেই কেকের প্রতি ভালবাসা।

ঢাকার মিরপুরের ছেলে সেজান। বাবা একজন ব্যবসায়ী এবং লেখক, মা আইনজীবী। ধানমন্ডি বয়েজ হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে এখন ঢাকা কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে সে। কেক নিয়ে কাজ করছে সেই ছোটবেলা থেকেই। চতুর্থ শ্রেণিতে থাকতেই সে জীবনের প্রথম কেকটি বানিয়েছিল।

পরিচিতমহলে তার কেক বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। হঠাৎ লকডাউনের মধ্যে দেখলো সবাই অনলাইনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। তখন সেজান সিদ্ধান্ত নিলো, সেও তার কেকের প্রসার এবং প্রচারের জন্য অনলাইনকে বেছে নেবে। সেই থেকে সেজান’স কিচেন নামে একটি অনলাইন প্লাটফর্ম চালু করে সে। তখন সেজান সবে মাত্র দশম শ্রেণিতে উঠেছে। যদি থাকে উদ্যোগ তাহলে বয়স যে কোনো বিষয় না- এমনটাই প্রমাণ করেছে সেজান।

সেজান এখন কাজ করছে কেক এন্ড বেকারি আইটেম নিয়ে। যার মধ্যে রয়েছে জার কেক, ডেকোরেটেড কেক, মেকারুনস, বিভিন্ন ফ্যান্সি ডেজার্ট। খাবার আইটেম হওয়ায় ঢাকার মধ্যেই ডেলিভারি দেওয়া হয় বেশি। শুধু কেক মেকিং নিয়েই সেজান ব্যস্ত থাকে তেমনটা নয়, কেক বেকিং এর ট্রেনিংও দিয়ে থাকে অনলাইনে। এ পর্যন্ত সে ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে কেক বেকিং এর ট্রেনিং দিয়েছে। এছাড়াও সেজানের রয়েছে একটি ইউটিউব চ্যানেল, সেখানে প্রায় ৭০ হাজার সাবস্ক্রাইবার। নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর অনলাইনের প্রতিটি স্তরেই সে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এরইমধ্যে একজন ক্ষুদে উদ্যোক্তা হিসেবে বেশ পরিচিতি পেয়েছে। তার এই উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন তার মা। নানা রকম কটু কথাকে উপেক্ষা করে ছেলেকে প্রতিনিয়ত সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

তবে, সেজান সবসময় তার পড়াশোনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। নবম শ্রেণিতে উদ্যোগ শুরু করলে অনেকেই তার লেখাপড়া নষ্ট হওয়ার ব্যাপারে নানারকম কথা বলতেন। কিন্তু, এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে প্রমাণ করেছে সে ঠিক পথেই আছে। পড়াশোনার চাপ যখন বেড়ে যায়, তখন সে তার কাজ কমিয়ে দেয়। সবকিছুতে ভারসাম্য রক্ষা করে সবসময়। তারপরও মাসে ৪০ থেকে ৫০টা কেক বানাতে হয় তাকে। মাসে প্রায় লাখ টাকার মতো আয় তার, বেশিরভাগই আসে ট্রেনিং থেকে।

সেজান মনে করে, যার যেটাতে আগ্রহ, তাই নিয়ে কাজ শুরু করে দিতে হবে, বসে থাকলে চলবে না। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে সে বলেছে, “আমি আমার বেকিং এর কাজটি আরো বড় পরিসরে নিতে চাই। একটি আউটলেট থাকবে।”

সেজান প্রতিবছর তার জন্মদিনে অসহায় সুবিধাবঞ্চিত বাচ্চাদের সাথে সময় কাটায়। ভবিষ্যতে তাদের জন্য কিছু একটা করতে চায় সে।

যে বয়সে বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা কিংবা খেলাধুলা করে সময় কাটাতে সবাই ব্যস্ত থাকে, ঠিক সেই সময়টায় পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের শখকে কাজে লাগিয়ে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পথে হাঁটছে ক্ষুদে উদ্যোক্তা সেজান।

সেতু ইসরাত,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here