একজন সংগ্রামী উদ্যোক্তা তসলিমা ফেরদৌস

ইচ্ছের জন্ম, জীবনের তাগিদ কিংবা প্রয়োজন বুঝে উঠবার আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় অষ্টম শ্রেনীতে পড়ুয়া কিশোরী তাসলিমা ফেরদৌসকে। বিয়ের পর তার স্বামী কর্মস্থল রংপুরের কাউনিয়ায় চলে গেলেন, কিশোরী বউয়ের ঠাঁই হলো শাশুড়ির কাছে নিভৃত গ্রামে।

হুট করেই পড়াশোনা ছেড়ে চন্ডীপুর ইউনিয়নের ইলশাবাড়ি গ্রামে অচেনা পরিবেশে এক অন্য জীবনে প্রবেশ। যেখানে ঘরের বউরা সারাদিন ধানের কাজ করে সন্ধ্যে হতেই ঘুমিয়ে পড়ে। তখন সেই গ্রামে সন্ধ্যেবেলায় অযথা বাতি জ্বালিয়ে তেল পোড়ানো নেহাতই অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। এমতাবস্থায় সেই কিশোরীর ভাগ্যবদলের যেনো কোনো সুযোগই আর রইলো না।

প্রতিটি কাজে চাই পূর্ব-র্পরিকল্পনা

শ্বশুরবাড়ির মানুষগুলোকে নিয়ে ভালো আছে মেয়ে, পশ্চাৎপদ সমাজে এই ছিলো মেয়ের পরিবারের সকলের ধারণা। অথচ ভালো নেই মেয়ে, ধানচালের কাজে নেই মন। সে চায় পড়তে, চায় নিজে কিছু একটা করতে।

তিনি খেয়াল করলেন, সেখানে আশপাশের প্রতিবেশীদের ছেলেমেয়েরাও পড়াশুনা করেনা, তাদের বাবা-মায়েদেরও এনিয়ে কোনো তাগিদ নেই। সারাদিন খেলাধুলা আর উদ্দেশ্যহীন হইহুল্লোড়েই কাটে তাদের জীবন।

একদিন সংকোচ ভেঙে প্রতিবেশীদের বলেই ফেললেন, “তোমাদের বাচ্চাগুলো তো শুধু খেলেই বেড়ায় গো! ওদের আমার কাছে পাঠিও, ‘অ আ ক খ’ শেখাবো”।

প্রতিবেশীরাও সাড়া দিলেন, পাঠানো শুরু করলেন বাচ্চাদের। কিন্তু বাচ্চাদের পড়াতে গিয়ে দেখা গেলো তাদের মায়েদেরও অক্ষরজ্ঞান শেখা প্রয়োজন। স্বাক্ষরতার জন্য তাদেরও দরকার শিক্ষার আলো।

পরিকল্পনা মোতাবেক এগিয়ে যেতে সিদ্ধান্তে আসতে হয় সবাই মিলে।

শুরুতে অনেকে হেসেই উড়িয়ে দিলো। নানান কথা বলতে লাগলো। হাসিঠাট্টা উপেক্ষা করে সেই কিশোরী তাদের বললো, “তোমরা কি ছবি দেখে বুঝতে পারো না? কিছু ছবি দেখিয়ে বললো দেখো, এটা বক, এটা টিয়া, এটা ময়না, এটা হরিণ। ধরে নাও তোমাদের নামটাও একটা ছবি, আমি সেই ছবি এঁকে দিলে তোমরাও সেই ছবি আঁকবে”।

অদম্য ইচ্ছে কখনো থেমে থাকেনা। ঠিক যেভাবে নদীর স্রোত বালির বাঁধের বাধা মানেনা। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাতি জ্বালিয়ে মাটির মধ্যে পাটখড়ি দিয়ে এঁকে এঁকে শিক্ষার আলো ছড়ানোর শুরু সেই অজপাড়াগাঁয়ে। পাশাপাশি তাদের স্বাবলম্বী করতে শেখানো শুরু করলেন সেলাইয়ের কাজ।  কিন্তু বিধিবাম! ঘরে রোজ বাতির তেল কিনতেই তেল কেনো ফুরিয়ে যায়? মনে এই প্রশ্ন নিয়ে শ্বাশুড়ি জেনে গেলেন প্রতিদিন সন্ধ্যেবেলায় লুকিয়ে প্রতিবেশীদের স্বাক্ষরতা শেখানোর কথা।

শুরু হলো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। কিশোরীর ঠাঁই হলো হাসপাতালে। নানান ঘটনা প্রবাহের পর আবারো শ্বশুড়বাড়িতে ফিরলেন। ফিরে এসেও পিছুপা হলেন না।

গ্রামে বসানো হলো পঞ্চায়েত। গ্রাম্য সালিশ প্রধান ছিলেন কিশোরীর বিরুদ্ধে, কেবলমাত্র একজন তার পক্ষে ছিলেন যিনি গ্রামের বাইরে থেকে এসেছিলেন সালিশে। তিনিই সাহস দিলেন, অনুপ্রেরণা জোগালেন ইতিবাচকভাবে এগিয়ে যেতে।

এরপর?

চলবে…

সাদিয়া সূচনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here