ধানের তুষ থেকে সিলিকা

0

কারখানার এক প্রান্তে ধানের কুড়া জ্বালিয়ে জেনারেটর দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিদ্যুৎ। সেই বিদ্যুৎ দিয়ে চলছে কারখানার পাম্পসহ বিভিন্ন যন্ত্র। আর সংরক্ষণাগারে সংরক্ষণ হচ্ছে জেনারেটরের কালো ধোঁয়া। অন্য প্রান্তে কুড়ার কালো ছাঁই পানির মধ্যে সিদ্ধ করে তার সঙ্গে সংরক্ষিত কালো ধোঁয়া মেশানোসহ নানা প্রক্রিয়ায় তৈরি হচ্ছে সুপার সিলিকা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং গ্রামে সাসটেইনেবল এনার্জি অ্যান্ড এগ্রো রিসোর্স লিমিটেডের কারখানায় এ প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হচ্ছে সিলিকা। ধানের তুষ দিয়ে সিলিকা উৎপাদন দেশে প্রথম। পরিবেশবান্ধব উপায়ে তৈরি সিলিকা বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত হচ্ছে। দেশে কাঁচামাল সহজলভ্য হওয়ায় এ শিল্পের সম্ভাবনা দেখছে কৃষি বিভাগ।

সাসটেইনেবল এনার্জি অ্যান্ড এগ্রো রিসোর্স লিমিটেড ২০১৪ সালে সিলিকা উৎপাদনের প্রকল্প হাতে নেয়। উৎপাদনে আসে এ বছরের মার্চে। ৪০ জন শ্রমিক প্রতিদিন ৫০০ থেকে ১ হাজার কেজি সিলিকা উৎপাদন করছে।

কারখানায় কাজ করা এক শ্রমিক বলেন, ‘কাজ শুরুর আগে আমাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আমরা কাজ করে বেতনও পাচ্ছি, সেই সাথে বাড়ির অন্য কাজে সহযোগিতা করে ভালো চলছি। আগে যখন কাজ শুরু করি তখন সিলিকার বিষয়ে জানতাম না। এখন সিলিকা নিজে তৈরি করছি। আমাদের সিলিকার মান অনেক ভালো।’

সরকারি সহযোগিতা পেলে দেশের চাহিদা পূরণ করে সিলিকা বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব, বলছে প্রতিষ্ঠানটি। এ শিল্পের সম্ভাবনার কথা বলছে কৃষি বিভাগও।

সাসটেইনেবল এনার্জি এন্ড এগ্রো রিসোর্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুর রহমান বাবু বলেন, ‘ধানের কুড়া থেকে বিদ্যুৎ আর কুড়ার ছাই থেকে সিলিকা উৎপাদন করছি। এটি একটি পরিবেশবান্ধব কারখানা। কারণ, জেনারেটরের ধোঁয়া আকাশে ছাড়া হয় না, বরং সেই ধোয়া সিলিকা উৎপাদনে কাজে লাগে। সরকারের সহযোগিতা পেলে উৎপাদন বৃদ্ধি করে বিদেশে সিলিকা রপ্তানি করতে পারব।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ধান প্রধান এলাকা হওয়ায় এখানে তুষের অভাব নেই। আমরা যদি বিভিন্নভাবে এটিকে সহযোগিতা করতে পারি, তাহলে দেশের চাহিদা পূরণ করে সিলিকা বিদেশে রপ্তানি করে যাবে সেই সাথে।’

সাদা সোনা খ্যাত সিলিকা। এটিকে সিলিকন ডাই অক্সাইড বলা হয়ে থাকে। এটি সাবান, সিরামিক, কাগজ, পেপার বোর্ড, পানি পরিশোধনাগার, ভবন নিমার্ণ, গার্মেন্টস, পেট্রোলিয়াম এবং মেটাল তৈরিতে কাচাঁমাল হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশে বাৎসরিক ভাবে সোডিয়াম সিলিকেটের চাহিদা আনুমানিক ২,০০০ মেট্রিক ট্রন পেরিয়েছে। যে হারে শিল্প কলকারখানা বাড়ছে এর চাহিদা আরও বেড়ে যাবে।

দেশে বিপুল পরিমাণে সোডিয়াম সিলিকেট (সিলিকা) তৈরির কাঁচামাল থাকা সত্ত্বেও প্রতি বছর সোডিয়াম সিলিকেট আমদানি করার জন্য অনেক বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। দেশের মাটিতে সিলিকা তৈরির প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে দেশের ৫৫-৬০ ভাগ সোডিয়াম সিলিকেটের চাহিদা পূরণ করা যাবে। এতে দেশের টাকা দেশেই থাকবে।

ডেস্ক রিপোর্ট,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here