করোনা পরিস্থিতির কারণে দ্বিতীয় বারের মতো অনলাইনে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ের উপর প্রাধান্য দিচ্ছে সরকার। ৪ জুলাই ওয়েবিনারের মাধ্যমে এবারের ‘ডিজিটাল কোরবানি পশুর হাট’-এর আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলাম, এমপি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন-এর অধীনে এটুআই-একশপ-এর কারিগরি সহযোগিতায় এবারের ডিজিটাল হাট বাস্তবায়ন করছে ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এবং বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশন। আলোচনায় জানান হয়, গতবছর সারাদেশের বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে ২৭ হাজার পশু বিক্রি হয়েছে। এবার ১ লক্ষ পশু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন, তাজুল ইসলাম এমপি, মাননীয় মন্ত্রী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। বিশেষ অতিথি ছিলেন, মোস্তফা জাব্বার, মাননীয় মন্ত্রী, ডাক ও টেলি যোগাযোগ বিভাগ। শম রেজাউল করিম এমপি, মাননীয় মন্ত্রী, মৎস ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়। হাছান মাহমুদ এমপি, মাননীয় মন্ত্রী, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি, মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, আইসিটি বিভাগ। জসিম উদ্দীন, প্রেসিডেন্ট, এফবিসিসিআই। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন, আইসিটি সচিব এনএম জিয়াউল আলম, ডব্লিওটিও সেল-এর মহাপরিচালক হাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর আহমেদ জামাল।
প্রধান অতিথি বলেন, ‘সরকারি সেবাগুলো দিনে দিনে আধুনিক হচ্ছে এবং সেটির সুফল মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে। করোনা মহামারী থেকে সুরক্ষা পেতে মানুষ বড় ধরণের একটা সহযোগ পাবে অনলাইনে পশু ক্রয়ের মাধ্যমে। প্রযুক্তির সুবিধায় সাধারণ মানুষের দৈনিন্দন জীবনকে বদলে দেয়ার মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে’। মন্ত্রী ১ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা দামের একটি গরু ক্রয়ের মাধ্যমে ডিজিটাল হাট-এর শুভ উদ্বোধন ঘোষনা করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জাব্বার বলেন, ‘আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ-এর ডিজিটাল সেবা কোরবানির গরু বিক্রি পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ যে প্রযুক্তিকে গ্রহণ করতে পারে তার একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এই ডিজিটাল গরু হাট’।
মৎস ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী শম রেজাউল করীম বলেন, ‘দেশে ৪১ কোটি গবাদিপশু রয়েছে এবং ১ কোটি ১৯ লক্ষ পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে। বিগত বছরের ন্যায় এবারো দেশের বাইরে থেকে গরু আমদানীর প্রয়োজন নেই। চামড়া সংরক্ষণ ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য বিজ্ঞানসম্মত ও আধুনিক কসাইখানা তৈরীর উদ্যোগ নেবে সরকার’।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন-এর মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এই ডিজিটাল হাট বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে। সঠিক বাস্তবায়ন-এর জন্য আমরা সরকারি এবং বেসরকারি পক্ষসমূহকে যুক্ত করেছি। ডিএনসিসি’র ব্যবস্থাপনায় ১ হাজার গরু স্লটারিং সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে’।
তথ্য মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ই-কমার্স দিন দিন জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। যেহেতু সরকারি বেসরকারি সক্ষমতা ও দক্ষতা একসাথে যুক্ত হয়ে কাজ করছে। সেহেতু এখানে ক্রেতা বিক্রেতার জন্য নিরাপদ পদ্ধতি মনে হচ্ছে। এই সেবার সাথে যতো বেশি মানুষকে যুক্ত করা যাবে ততোই ডিজিটাল বাংলাদেশ এর সুফল মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে’।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, ডিজিটাল সেবার কারণে দেশ বদলে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রতিটি জেলায় কোরবানী পশু বিক্রির প্লাটফর্ম তৈরী হয়েছে। সব প্লাটফর্মকে একই সূত্রে গেঁথে মানুষকে জানিয়ে দিতে হবে। তিনি ডিজিটাল কোরবানি হাটে অভিযোগ আসলে তা দ্রুত সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানান’।
একশপ এর টিম লিডার রেজওয়ানুল হক জামি বলেন, ‘ডিজিটাল হাট-এ স্ক্রো সেবা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখানে সাময়িক এস্ক্রো সেবা বিক্রেতা গ্রহণ করবে কি না এটা তার ইচ্ছের উপর রাখা হয়েছে। ক্রেতারা চাইলে এস্ক্রোযুক্ত পশু ক্রয় করতে পারবে অথবা সরাসরি বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ করে মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন’।
বাংলাদেশ ডেইরী ফার্ম এসোসিয়েশন এর সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, ‘ডিএনসিসি-এর ডিজিটাল হাট ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের স্বার্থ সুরক্ষায় কাজ করবে। ক্রেতাদের সঠিক পশু দেয়া যেমন নিশ্চিত করা হবে তেমনি বিক্রেতার পাওনাও নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি স্লটারিং সেবার মাধ্যমে ঘরে ঘরে মাংস প্রক্রিয়াকরণ করে পাঠানো হবে। বর্তমানে আমাদের ৫০০ স্লটারিং সেবা দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে। চাহিদার উপর ভিত্তি করে আমরা ১ হাজার গরু জবাই করে বাসায় ডেলিভারি দিতে পারবো। আমাদের লক্ষ্যমাত্র ঢাকায় ৫০ হাজার এবং দেশব্যাপী বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে ১ লক্ষ পশু বিক্রি করা’।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন-এর নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ই-ক্যাব-এর প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার। এতে দারাজ, মাস্টারকার্ডসহ অন্যান্য সহযোগী হিসেবে রয়েছে কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
কোরবানি পশু বিক্রির অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘http://www.digitalhaat.net’. এই অনলাইন হাটে আজ থেকে কেনাটাকা করা যাবে। চলবে ঈদের আগেরদিন পর্যন্ত। সংশ্লিষ্ঠ ক্রেতা যে যে এলাকায় ডেলিভারি দিতে পারবেন তার উপর ভিত্তি করে গরু ডেলিভারি সেবার বিস্তৃতি হবে। ১২ জুলাই পর্যন্ত কসাইসেবার বুকিং চালু থাকবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মেট্রোপলিটন এলাকার মধ্যে এ-সেবার পরিসীমা সীমাবদ্ধ থাকবে।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা