গাজীপুরের কালীগঞ্জের চাষিরা কোনো প্রকার বালাইনাশক ছাড়াই বিভিন্ন কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সবজি চাষ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে এখানে চাষ করা কাকরলের বেশ চাহিদা রয়েছে। সেখানকার কাকরল এখন রাজধানীসহ দেশের আশপাশের বাজারগুলোর চাহিদা মিটিয়েও যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ কৃষি অফিস উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বিরতুল ও গাড়ারিয়া গ্রামকে নিরাপদ সবজির গ্রাম ঘোষণা করা হয়েছে। উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বালু নদী তীরবর্তী গ্রাম বিরতুল ও গাড়ারিয়া। ঢাকার লাগোয়া এ উপজেলার গ্রাম দুটির নিরাপদ সবজির চাহিদা দেশজুড়ে। বিশেষ করে এ গ্রামে চাষ করা কাকরল উৎপাদন আশেপাশের গ্রামের চাষিদের অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। কাকরল চাষে গ্রামগুলোর চাষিদের সফলতায় একই ইউনিয়নের বাগদী, পারওয়ান ও পানজোরা গ্রামের চাষিরাও বিষমুক্ত সবজি কাকরল চাষ করছেন।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সেক্স ফেরোমান ফাঁদ, হলুদ স্টিকি ট্র্যাপ, হাত পরাগায়ন, আইপিএ প্রযুক্তি, ব্যাগিং, সুস্থ ও ভালো বীজ, সুষম সার, মালচিং, ভার্মি কম্পোস্ট এবং জৈব বালাইনাশকের মাধ্যমে বিরতুল ও গাড়ারিয়া গ্রামে নিরাপদ সবজি কাকরল চাষ হচ্ছে। দুই গ্রামসহ আশেপাশের গ্রামের চাষ করা বিষমুক্ত সবজি কাকরলের বেশ চাহিদা থাকায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও পাঠানো হচ্ছে।
উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বিরতুল গ্রামের কাকরল চাষি কালিপদ চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমি এ বছর সোয়া বিঘা জমিতে কাকরল চাষ করেছি। ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ২ লাখ টাকার মতো আয় করেছি। স্থানীয় কৃষি অফিসের লোকজন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরামর্শ দেন বলে কাকরল চাষে বেশ উৎসাহ পাচ্ছি।’
একই গ্রামের কাকরল চাষি প্রমেশ চন্দ্র দাস বলেন, ‘কাকরলের চাহিদা থাকায় পাইকাররা বাড়ি থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে বাজারে নিয়ে যাওয়ার ঝামেলা থাকছে না। যাতায়াত খরচও কমে যাচ্ছে। ফলে আমাদের লাভের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে।’
বাগদী, পারওয়ান ও পানজোরা গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, শুধু নিরাপদ সবজির গ্রাম নয়; কালীগঞ্জ পৌরসভাসহ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে অন্তত একটি করে নিরাপদ সবজি বাজার করা জরুরি। তাহলে কৃষকেরা সিন্ডিকেটের বাইরে গিয়ে ন্যায্য মূল্যে সবজি বিক্রি করতে পারবেন।
কালীগঞ্জ উপ-সহকারী (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা বিরতুল ও গাড়ারিয়া গ্রামের কাকরল চাষিদের বিভিন্ন সময় পরামর্শ দিয়ে থাকি। গ্রাম দুটিতে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে বালাইনাশক ছাড়াই কাকরল উৎপাদন করা হচ্ছে। দেশের বাইরের চাহিদার কথা চিন্তা করে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, ‘গ্রীষ্মকালীন সবজি হিসেবে এটি জনপ্রিয়। সাধারণ খরিপ-১ এবং খরিপ-২ মৌসুমে সবজিটি চাষাবাদ করা হয়। কালীগঞ্জ উপজেলার একটি সম্ভাবনাময় ফসল কাকরল। কারণ এটি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। এছাড়া বিরতুল ও গাড়ারিয়া গ্রামকে নিরাপদ সবজির গ্রাম ঘোষণা করা হয়েছে।’
ডেস্ক রিপোর্ট,
উদ্যোক্তা বার্তা