জুতা কারখানায় কর্মরত কর্মী

দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের সুষ্ঠু বিকাশ ও উন্নয়নের মাধ্যমে টেকসই শিল্পায়ন, জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে এসডিজি গোল বাস্তবায়নের নিমিত্তে এসএমই ফাউন্ডেশন কাজ করে যাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় ক্লাস্টারভিত্তিক সমন্বিত উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং তৃণমূল পর্যায়ের মাইক্রো,ক্ষুদ্র ও মাঝারি  শিল্পের ১৭৭ টি ক্লাস্টার চিহ্নিত করেছে এবং চিহ্নিত- ক্লাস্টারসমূহে ক্রমান্বয়ে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

জুতার একাংশ তৈরি করছে কর্মীগণ

নব্বইয়ের দশক থেকে পাদুকা তৈরির অঞ্চল হিসেবে খ্যাতি লাভ করে কিশোরগঞ্জের ভৈরব। গ্রাম-শহর মিলে পাদুকা শিল্পকে ঘিরে ভৈরবে গড়ে উঠেছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার ছোট-বড় কারখানা।  এসব কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষের। ৫ হাজারের মত নারী কর্মীও পাদুকা শিল্পের সাথে জড়িত।১৯৮৬ সালে পাদুকা শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ব্যাপক প্রসার ঘটে  এ শিল্পের।

জুতার বিভিন্ন অংশ সেলাই মেশিনে তৈরি হচ্ছে

ভৈরব পাদুকা সমিতির সভাপতি মোঃ আল আমিন মিয়া বলেন,  “খুব অল্প পুঁজি হলেই পাদুকা ব্যবসা শুরু করা যায়। বিদেশী পাদুকা পণ্য দেশীয় পাদুকা বাজারের জন্য হুমকি স্বরূপ। বিদেশ থেকে পাদুকা পণ্য আমদানী নির্ভরতা কমাতে হবে, তাহলে দেশের এই শিল্পের সত্যিকার অর্থে উন্নয়ন ঘটবে। এই শিল্পে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য কর্মীদের আরও নিবিড় ও উন্নত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। ‘কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার’ দরকার যেখানে মেশিন থাকবে সবাই কাজ করবে”।

ভৈরবের পাইকারি বাজার ঘুরে জানা যায়, প্রতিদিন এখান থেকে হাজার হাজার কার্টন পাদুকা গুটিকয়েক উদ্যোক্তা এবং অসংখ্য ট্রেডারদের অর্ডারের ভিত্তিতে রেল, সড়ক ও নৌপথে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দেশের গন্ডি পেরিয়ে ভৈরবের তৈরি পাদুকা সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, দুবাই রপ্তানি হচ্ছে। আপার, কাটিং, পেস্টিং, সোল, ফিটিং, ফিনিশিং, স্ক্রিন প্রিন্ট, কালারসহ ৮ টি ধাপে কারিগরদের সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হয় এক একটি জুতা। এছাড়া মেশিনেও তৈরী হচ্ছে মানসম্মত, টেকসই নতুন নতুন ডিজাইনের পাদুকা। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে ঢাকা থেকে কাঁচামাল আনা হলেও এখন ভৈরবেই পাওয়া যাচ্ছে সবকিছু। এ শিল্পকে ঘিরে রং, সুতা, কেমিক্যালসহ নানা উপকরণের বাজারও সৃষ্টি হয়েছে।

জুতা তৈরির বিভিন্ন পর্যায়ের কাজ করছেন কর্মীগণ

একজন কর্মী দিনে ১২ ঘণ্টা থেকে ১৬ ঘণ্টা পাদুকা তৈরিতে কাজ করেন। লোফার সু তৈরিতে একজন কর্মী দৈনিক মজুরি পান ৪০০ টাকা, আর স্যান্ডেল তৈরি করে পান ২০০ টাকা।

জুতার বাক্স তৈরীতে দেড় হাজার কর্মীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে ভৈরবে। এ শিল্পে প্রতিদিন ১০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। গড়ে ৫-৬ কোটি টাকার হাত বদল হয়।

নীরবে বেড়ে ওঠা এই শিল্প ভৈরবের এবং সারা দেশের জন্য অপার সম্ভাবনার ক্ষেত্র। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশও রপ্তানি করে যেতে পারে ভৈরব পাদুকা ক্লাস্টার শিল্পের পাদুকা পণ্য। বিদেশ থেকে আসা পাদুকার বৃহৎ অর্ডার গ্রহণ করে তৈরি করে দেয়া যাবে টেকসই এবং মানসম্পন্ন পাদুকা। ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে এই শিল্প। ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারী এবং ফ্যাক্টরি মালিকদের অভিযোগ, সম্ভাবনাময় এ শিল্পে নেই কোনো পৃষ্ঠপোষকতা। সরকারি বেসরকারি খাত থেকে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন পদক্ষেপ এবং সার্বিক সহায়তা পেলে এই শিল্পের দ্রুত বিস্তার ঘটবে। ব্যাংক ঋন সহ অন্যান্য জটিলতা দূর করা গেলে পাদুকা শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, যা  একদিন জাতীয় অর্থনীতিতে উল্লেখ করবার মত অবস্থান অর্জন করবে।

 

এম কোরবান আলী , বিশেষ প্রতিনিধি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here