আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জের মোঃ শামসুল আহমেদ। ২০২০ সাল থেকে আম নিয়ে কাজ করছেন। উদ্যোগের প্রথম বছরেই ৫০ থেকে ৬০ মণ আম বিক্রি করেন তিনি। পরের বছর ২০২১ এ তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় সাতশো মণে। এ বছর আমের ফলন কম হওয়ায় গত বছরের তুলনায় কিছু কম বিক্রয় হওয়ার কথা জানিয়েছেন উদ্যোক্তা। উদ্যোগ শুরুর প্রথম মৌসুম থেকে বর্তমান মৌসুমেও ম্যাংগো কিংস-এর ক্রেতা জনপ্রিয় ঢালিউড অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম।
উদ্যোক্তা মোঃ শামসুল আহমেদ রাজশাহী কলেজে পরিসংখ্যান বিভাগে লেখাপড়া করছেন। করোনা মহামারীর শুরু হলে যখন গ্রামে থাকতে শুরু করেন তখন পারিবারিক ব্যবসা বাবার আমের আড়তে সময় দিতেন। আশেপাশের অনেকে তখন বলেন, তোমাদের তো নিজস্ব আমবাগান রয়েছে, আমের আড়ৎও আছে। তোমার নিশ্চয়ই এ বিষয়ে অভিজ্ঞতাও হয়েছে। তাহলে তুমি তো অনলাইনে আম নিয়ে কাজ করতে পারো।
এমন কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে এক বন্ধুর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ধার নিয়ে ২০২০ সালে সামাজিক পাতায় তিনি ম্যাংগো কিংস নামের প্রতিষ্ঠানটি চালু করেন।
গোপাল ভোগ, ল্যাংড়া, ক্ষিরশাপাত, গোবিন্দভোগ, কাটিমন, বারি-চার, হাড়িভাঙা, ফজলি, আম্রপালি, মোহনভোগ, হিমসাগরসহ নানা জাতের আম রয়েছে শামসুল আহমেদের ম্যাংগো কিংসে। রাজশাহী এবং ঢাকার পাশাপাশি চাঁদপুর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চল থেকেও ম্যাংগো কিংসের আমের অর্ডার আসে বলে জানান উদ্যোক্তা।
পড়াশোনা শেষ না করেই উদ্যোক্তা জীবনে এসে পড়েছেন, এতে পরিবার কতটা সাপোর্ট করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যেহেতু আমার পড়াশোনা শেষ হয়নি তাই এ কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকলে পড়াশোনার ক্ষতি হতে পারে চিন্তা করে আমার বোন মাঝে মাঝে একটু রাগ করে আমি ব্যালেন্স করার চেষ্টা করি। এতে করে আমার পড়াশোনা শেষ হলে চাকরি না পেলেও বেকার হয়ে বসে থাকতে হবে না। পড়াশোনা শেষ হতে হতে আমার উদ্যোগ আরো বড় হবে বলে আশা রাখছি। নিশ্চয়ই পড়াশোনা ঠিক রেখেই আমি এ কাজ করবো যাতে পরিবার কষ্ট না পায় এবং আমার উদ্যোগেরও বিস্তৃতি ঘটে।”
বাবা সাইদুর রহমান জেন্টু ১৯৮২ সাল থেকে আমের ব্যবসার সাথে যুক্ত। বর্তমানে তাদের ১০ বিঘা জমিতে ৫টি আমবাগান রয়েছে। পাশাপাশি নিজ এলাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট বাজারের পুরাতন ব্রিজের উত্তর পাশে ভাই-ভাই এন্টারপ্রাইজ নামক একটি আমের আড়ৎ আছে তার। নিজ উদ্যোগের পাশাপাশি বাবার কাজে সহযোগিতা করে থাকেন ছেলে শামসুল আহমেদ।
বর্তমানে শামসুল আহমেদের সাথে দুইজন সহযোদ্ধা কাজ করছেন। তাদের নিজস্ব আম বাগানের পাশাপাশি অর্ডার বেশি থাকলে আত্নীয় স্বজনদের বাগান থেকেও আম সংগ্রহ করে থাকেন এ উদ্যোক্তা। অন্য বাগান হতে আম সংগ্রহ করলে নিজেই সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি মনে করেন, তিনি বাগানে উপস্থিত থাকলে আম পাড়ার সময় তাড়াহুড়ো করে নিচে ফেলে দেওয়া, পঁচা আম ইত্যাদি দেখে শুনে বেছে নিতে পারেন। যার ফলস্বরূপ উদ্যোক্তা ক্রেতার হাতে কোয়ালিটি আম তুলে দিতে পারেন। আমের পাশাপাশি আমস্বত্বও রয়েছে ম্যাংগো কিংসে। ম্যাংগো কিংস-কে বিশ্বদরবারে স্বনামধন্য ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান এই তরুণ।
তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা