দেশজুড়ে খ্যাতি পেয়েছে তোতা মিয়ার ভর্তা

0
উদ্যোক্তা তোতা মিয়া

পরিচ্ছন্ন, নিরিবিলি ও ঘরোয়া পরিবেশে প্রতিদিন রান্না হচ্ছে তোতা মিয়ার ৮০ রকমের ভর্তা এবং ৭০ প্রকার তরকারি। যার স্বাদ নিতে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন অনেকেই। গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার টোক নয়ন বাজার এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা তোতা মিয়া। আট ভাইয়ের মধ্যে মেজো তিনি। এক প্রকার আর্থিক অসঙ্গতির মধ্য দিয়েই বড় হয়েছেন। পড়াশুনা বেশিদূর করা সম্ভব হয়নি৷

২০০১ সালের দিকে পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতার জন্য টোক নয়ন বাজার ক্যান্টিনে খাবার সরবরাহের কাজ শুরু করেন। নিজে মাথায় করে ভাত এবং ১০ রকমের ভর্তাসহ আরো বেশ কিছু খাবার পৌঁছে দিতেন এবং ক্যান্টিনে খেতে আসা সবাই খুব পছন্দ করতে লাগলেন তোতা মিয়ার ভর্তা। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তোতা মিয়ার ভর্তার জনপ্রিয়তা আশে পাশে ছড়িয়ে পড়লো৷

দীর্ঘ আট বছর মাথায় করে ক্যান্টিনে খাবার সরবরাহের কাজ করেছেন। পরিবারের নারী সদস্যদের সহযোগিতায় তিনি এই রান্নার কাজটি পরিচালনা করেন। দীর্ঘ আট বছরে বিভিন্ন বড় বড় গুণীজনদের নজরে পড়েন তোতা মিয়া৷ সবার অনুপ্রেরণায় তোতা মিয়া নিজে একটি হোটেল দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ নিজ বাড়ি কাপাসিয়াতেই একটি হোটেল চালু করলেন এবং কাপাসিয়া থানা থেকে নাম দেয়া হয় হোটেল নিরিবিলি৷ শুধু তাই নয়, প্রশাসনের সহযোগিতায় চাঁদা তুলে হোটেলের জন্য চেয়ার টেবিল কেনার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।

১০ রকমের ভর্তা দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ রকমের ভর্তা পাওয়া যায় তোতা মিয়ার হোটেল নিরিবিলিতে। উল্লেখযোগ্য ভর্তা আইটেমের মধ্যে রয়েছে চাপা শুটকির ভর্তা, লইট্টা শুটকির ভর্তা, ইলিশ মাছ ভর্তা, বেগুন ভর্তা, মিষ্টি কুমড়ার ভর্তা, শিম ভর্তা, কাঠাল বীজ ভর্তা, কালো জিরা ভর্তা, ডাল ভর্তা ইত্যাদি। এছাড়াও প্রতিদিন ১০০ আইটেমের ব্যবস্থা থাকে আর সরকারি ছুটির দিনগুলোতে দেড়শ আইটেমের আয়োজন থাকে। তোতা মিয়ার ভর্তা ছাড়াও হাঁসের মাংস, কবুতরের মাংস, কোয়েলের মাংস, নদীর মাছও খুব জনপ্রিয়। এসবের পাশাপাশি বাহারি রকমের পান এবং বরই-তেতুঁলের মিক্সড আচারও বেশ জনপ্রিয়।

হোটেল নিরিবিলির জনপ্রিয়তা শুধুমাত্র স্থানীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়। ঢাকা, কুমিল্লা, সিলেট, ফেনী, রংপুর, দিনাজপুর, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভর্তার টানে ছুটে আসেন অনেকেই৷ তোতা মিয়ার খাবারের স্বাদ নিয়েছেন মন্ত্রী পর্যায়ের অনেকেই। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী দিপু মণি, শামীম ওসমান, আ.খ.ম মোজাম্মেল হক, এসপি হারুণ এমনকি বর্তমান রাষ্ট্রপতির ছেলেরাও প্রায় আসেন তোতা মিয়ার হোটেল নিরিবিলিতে।

হোটেল নিরিবিলির সমস্ত রান্না তোতা মিয়ার বাসায় হয় এবং পরিবারের প্রায় ১৫ জন সদস্য এই রান্নার কাজে সাহায্য করেন এছাড়াও হোটেলে আরো ১৫ জনের মত কর্মরত আছেন। হোটেল ব্যবসার পাশাপাশি ধর্মীয় কাজেও বেশ সময় দেন তোতা মিয়া। প্রতি মাসে ৩ দিন তিনি তাবলিগে থাকেন। এছাড়াও ৪ বছর হলো তিনি বয়স্কদের জন্য একটি মাদ্রাসা দিয়েছেন। হোটেলের যাবতীয় খরচ রেখে তিনি বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসায় দান সদকা করতে বেশি পছন্দ করেন।

তোতা মিয়ার কাছ থেকে তার অনুভূতি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ, আমার এই হোটেল নিরিবিলির বয়স প্রায় ১২ বৎসর। অনেক খুশি, এতো দূর আসতে পেরে। সবাই আমাদের খাবার খুব পছন্দ করছে, বিশেষ করে ভর্তা আর তেতুঁল-বরইয়ের মিক্সড আচার। আমার ইচ্ছা আমার এই হোটেলকে আরো অনেক বড় করবো।”

সেতু ইসরাত,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here