উদ্যোক্তা-আইরিন পারভীন

একজন সরকারি পুলিশ কর্মকর্তা ইদ্রিস মিয়ার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন আইরিন পারভীন। নয় ভাইবোনের  সাথে সংসারে বেড়ে ওঠেন আইরিন পারভীন। সেই সময় বাবার স্বল্প বেতন আর রেশনের উপর ভরসা করে চলতো সংসার। মা সেলাই এর কাজ জানতেন কিছুটা সংসারের হাল ধরতো।

১৯৮৩ সালে শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন আইরিন পারভীন। কলেজে ভর্তি হয়ে ফরিদ উদ্দিন নামের একজন সাধারন ব্যবসায়ীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, পড়াশোনা থেমে যায় তার। বিয়ের কিছুদিন পরেই শ্বশুর মারা যায়। সংসারের সকল দায়িত্ব এসে পরে তার স্বামীর উপর। ছোট একটি মুদি দোকানের উপর নির্ভর করে ১৪-১৫ জন সদস্যের সংসার চালাতে হিমশিম খান জনাব ফরিদ উদ্দিন।

সংসারের এই অবস্থায় নিজেকে কিছু একটা করতে হবে। ছোটবেলায় মায়ের সেলাইয়ের কাজ দেখে নিজেও কিছু শিখেছিলেন আইরিন পারভীন। ভাবলেন সেলাইয়ের কাজ করে যতটা সম্ভব সংসারে সাহায্য করবেন। কিন্তু পরিবার থেকে আসলো বাঁধা। শ্বশুর বাড়ির লোকজনের কথা, বাড়ির বৌ দর্জির কাজ করতে পারবে না। দিনের পর দিন তিনি তার স্বামীকে বুঝাতে থাকেন, বাসায় অবসরে আমি যদি সেলাইয়ের কাজ করে কিছু উপার্জন করি তা সংসারের কাজে আসবে। স্বামী শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দেন, আগে সংসার পরে সেলাই। স্বামী কিস্তিতে একটি সেলাই মেশিন কিনে দেন আইরিন পারভীনকে। ঘরোয়া ভাবে শুরু করেন সেলাইয়ের কাজ। কাজ শুরুর প্রথম দিকে আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে অর্ডার পেতে শুরু করেন। দিনে দিনে কাজের প্রসার বাড়তে থাকে। অর্ডারের সংখ্যা বাড়তে থাকে। একে একে সংসারে দুই ছেলে জন্মগ্রহণ করে আইরিন পারভীনের। সব কিছু সামলে৬ সেলাইয়ের কাজ চালিয়ে যান আইরিন পারভীন।

দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন আইরিন পারভীন। ১৯৯৮ সালে যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে পোশাক তৈরি প্রকল্পের উপর ২৫,০০০ টাকা ঋণ নেন ব্যবসার পরিধি বাড়তে থাকে। ৩৫ জন নারীকে নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন উদ্যোক্তা। তৈরি করেন পোশাক, নকশী কাঁথা, বেড কাভার ইত্যাদি। পরবর্তীতে আইরিনের কাজে সন্তুষ্ট হয়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে আরও ৫০,০০০ টাকা ঋণ দেয়। ৩৫ জন কর্মী থেকে তার প্রকল্পের কর্মী সংখ্যা বেড়ে হয় ১৬০ জন হয়।

২০০২ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে সফল আত্মকর্মী হিসেবে পুরস্কৃত করেন আইরিন পারভীনকে। কাজের পরিধি বৃদ্ধি পেলে শেরপুরের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, এর পরামর্শে ৩৫ জন নারীকে নিয়ে একটি মহিলা সমিতি গঠন করেন। সমতির সদস্যদের নিয়ে নকশি কাঁথা, ব্লক-বাটিক, শো-পিস, ওয়ালমেট, টেবিল ক্লথ ইত্যাদি তৈরি করে। শেরপুর নিউমার্কেটে একটি শো-রুম দেন। ব্যবসায় বেশ ভালো সাড়া পেলেন উদ্যোক্তা আইরিন পারভীন। পণ্যের ব্যাপক চাহিদা দেখে আরও একটি শো-রুম দেন উদ্যোক্তা। এরপর ব্যবসার লাভের অংশ থেকে শেরপুর নিউমার্কেটে হোটেল সম্রাট নামে একটি খাবার রেস্টুরেন্ট দেন।

যুব উন্নয়ন থেকে ২৫ হাজার এবং পরে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে কাজ শুরু করে বর্তমানে তার সব কিছু মিলিয়ে ব্যবসায়িক ২৫ লাখ মূলধন দাঁড়িয়েছে। নিজের কাজ দিয়ে নিজেকে করেছেন স্বাবলম্বী। সাথে ২০০ জন নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে আত্মনির্ভরশীল করে তুলেছেন সফল নারী উদ্যোক্তা আইরিন পারভীন ।
উদ্যোক্তা ইউবি প্রেসকে জানান, “একদিন অভাবের যাতাকলে নিজেই ছিলাম অভাবী। মায়ের কাছ থেকে শেখা সেলাইয়ের কাজে আজ আমি এতদুর। আমিও আমার মায়ের মত জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করে যেতে চাই। তিনি আরও বলেন, নারীরা একটু সাহসী, একটু সুযোগ পেলে সফল হতে পারে। এই আত্মবিশ্বাস আমি সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই”।

 

 

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here